ঢাকা : যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপ (বিআরটিএ) এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যৌথ সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে পুরনো ও অবৈধ গাড়ি উচ্ছেদ ও আটক অভিযান শুরু হচ্ছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্তু এ অভিযান চলবে।
ঢাকা মহানগরীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং তীব্র যানজট নিরসনে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ অভিযান শুরু হচ্ছে। এতে ২০ বছরের অধিক পুরনো বাস/মিনিবাস ও ২৫ বছরের অধিক পুরনো ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান উচ্ছেদ করা হবে এবং অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
ট্রাফিক পূর্ব, ট্রাফিক দণি, ট্রাফিক পশ্চিম এবং ট্রাফিক উত্তর এই চারটি বিভাগে ভাগ হয়ে মোবাইল কোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় অভিযান চালাবে। ট্রাফিক পূর্ব, ট্রাফিক দণি এবং ট্রাফিক উত্তর-এই তিনটি বিভাগে চারটি করে মোবাইল কোর্ট, আর ট্রাফিক পশ্চিম-এ তিনটি মোবাইল কোর্ট থাকবে। প্রতিটি কোর্টে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট, একজন সার্জেন্ট, পাঁচজন করে কনস্টেবল (এসএএফ) থাকবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক সূত্রাপুর জোন) মীর জিয়াউল হক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারগণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।
এবারের উচ্ছেদ অভিযানে গাড়িচালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগের প্রতি নির্দেশ রয়েছে বলে ট্রাফিকের যুগ্ম কমিশনার সফিকুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান।
তিনি জানান, এ অভিযান পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসকের অধীনে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপরে (বিআরটিএ) অধীনেও দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাবেন। সব অভিযানেই পুলিশ সহায়তা দেবে।
সফিকুর রহমান বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটগণ শহরের যে স্থানে প্রয়োজন মনে করবেন সেখানেই ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করবেন। এছাড়াও মহানগরের প্রতিটি প্রবেশমুখ ও বহির্গমন পথে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে পুরোনো যানবাহন আটক করা হবে।
এ দিকে বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, আটক যানবাহন রাখার জন্য কাঁচপুর সেতুর পূর্ব পাড়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গায় ‘ডাম্পিং স্টেশন’ তৈরি করা হয়েছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজধানীতে পুরনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ করার আগেও মন্ত্রণালয় এগুলো আটক করতে গত বছরের আগস্টে বিশেষ অভিযান চালায়। ওই সময়ে মাত্র সাত হাজার যানবাহন আটক করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় বুয়েটের ছাত্র খন্দকার খানজাহান সম্রাটসহ বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেেিত ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক-ভ্যানসহ ফিটনেসবিহীন যানবাহন উচ্ছেদে করণীয় নির্ধারণে গত ২৪ জুন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এক আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকে ১৫ জুলাই উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়।
বৈঠকে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন মাঝের এ সময়টুকু গাড়িচালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য রাখা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে গাড়িমালিকেরা তাদের পুরোনো যানবাহন তুলে নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ২০ বছর ও তার চেয়েও পুরনো বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে ১৩ হাজার ৭৭৮টি। ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাকই রয়েছে আট হাজার ১২৫টি। পিকআপ ভ্যান রয়েছে এক হাজার ৮৪২টি। ২০ বছর ও তার চেয়েও বেশি পুরনো বাস রয়েছে এক হাজার ৪৪৬টি ও মিনিবাস রয়েছে দুই হাজার ৩৬৫টি।
বিআরটিএ সম্প্রতি পুরনো বাস-ট্রাক ও ভ্যানসহ নগরীতে চলাচলকারী ৮০ হাজার ৬১৫টি ফিটনেসবিহীন পুরোনো যানবাহনের তালিকা করেছে। ওই তালিকা পুলিশের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলোও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের তালিকায় রয়েছে।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের পাশাপাশি যেসব যানের বয়সসীমা আছে কিন্তু ফিটনেস নেই, সেগুলোও অভিযানে ধরা হবে। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী সংস্থার ঢাকা উত্তর (মিরপুর) ও দণি (কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া) কার্যালয় থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ২৮৫।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৭৫০ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১০।