ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে হাঙ্গর শিকারের মহোৎসব

গোফরান পলাশ, কলাপাড়া প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১১
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে হাঙ্গর শিকারের মহোৎসব

কলাপাড়া (পটুয়াখালী): কুয়াকাটা সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে চলছে হাঙ্গর শিকারের মহোৎসব।

হাঙ্গরের শুটকি লাভজনক হওয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী হাঙ্গর শিকারে জেলেদের আগ্রহী করে তুলতে অর্থ বিনিয়োগ করছে।

কুয়াকাটার শুটকি পল্লীতে অন্যান্য মাছের পরিবর্তে বর্তমানে হাঙ্গরের শুটকি তৈরির জন্য অতিরিক্ত মাচা করা হয়েছে।

হাঙ্গর শিকারের এ ভয়াবহতা দেখে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকরা আঁতকে উঠলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন হাঙ্গর শিকার বন্ধে কোনো পদপে নেয়নি।

কুয়াকাটা শুটকি পল্লীর শুটকির মাচায় ৮/৯ ইঞ্চি সাইজের হাজার হাজার হাঙ্গরের বাচ্চা কেটে রোদে শুকানো হচ্ছে।

সাগর বে প্রচুর হাঙ্গর ধরা পড়ায় জেলেরা অন্য মাছ শিকারের পরিবর্তে শুধু হাঙ্গর শিকারে করছে।

প্রতিটি মাছ ধরা ট্রলার প্রতিদিন ৭শ’ থেকে এক হাজার পর্যন্ত হাঙ্গর হাঙ্গর শিকার করছে। ট্রলার ভরে হাঙ্গরের বাচ্চা শিকার করে শুটকি পল্লীতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন জেলেরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১/১২টা পর্যন্ত চলছে শুটকি পল্লীতে হাঙ্গর বিক্রি। অত:পর রাতভর চলছে হাঙ্গর কেটে শুটকি তৈরির প্রক্রিয়া।

গভীর সমুদ্র থেকে হাঙ্গর শিকার করে ফেরা জেলে মো. সোলায়মান মিয়া (৪২) বাংলানিউজকে বলেন, ‘অহন সাগরে হাঙ্গরের বাচ্চা ছাড়া তেমন কোনো মাছ পাওয়া যায় না। সাগরে যাইয়া আড়াই হাজার পোনা হাঙ্গর পাইছি। অন্য মাছ কিছু পাইলেও হেইয়া শুটকির জন্য বেচমু না। ’

গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি হাঙ্গর ধরা পড়ছে বলেও জানান তিনি।

জেলে আব্বাস মিয়া (৩৮) বাংলানিউজকে জানান, হাঙ্গর শিকারের জন্য তারা বিভিন্ন প্রকারের জাল ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণত শীতকালেই বেশি হাঙ্গর ধরা পড়ে। প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় সমুদ্রের তলদেশে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্যের সন্ধানে ঝাঁক বেঁধে পানির উপরিভাগে চলে আসে হাঙ্গর। তখন বিশেষ এক ধরনের জাল দিয়ে হাঙ্গর ধরা হয়।

তিনি আরো জানান, হাঙ্গর সাগর থেকে উত্তোলনের পর প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা জীবিত থাকে। তবে ছোট হাঙ্গর জালে ধরা পড়ার পর ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যেই  মারা যায়। এছাড়া হাঙ্গর সংরক্ষণের জন্য অন্য মাছের মত অতিরিক্ত বরফেরও দরকার হয় না।

শুটকি ব্যবসায়ী নুরুল হক (৫২) বাংলানিউজকে জানান, ছোট একশটি হাঙ্গর ১২শ থেকে ১৫শ’ টাকায় ক্রয় করছেন তারা। আর বড় হাঙ্গর কিনছেন মণ হিসেবে। প্রতি মণ বড় হাঙ্গর ৬/৭ হাজার টাকায় ক্রয় করছেন। এ হাঙ্গর শুটকি করে প্রতি মণ ৮/১০ হাজার টাকা দরে তারা বিক্রি করছেন চট্রগ্রাম ও ঢাকার শুটকি ব্যবসায়ীদের কাছে।

এছাড়া হাঙ্গরের শরীরের বিভিন্ন অংশও বিক্রি করা হয়। হাঙ্গরের কান, দাঁত, পাখনা ও তেল আলাদা বিক্রি করা হয়। হাঙ্গরের কান প্রতি মণ ২২/২৪ হাজার টাকা, তেল প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা ও দাঁত প্রতি মণ ৭/৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাঙ্গর শিকার বন্ধে এখনও কোনো আইন না থাকায় তারা হাঙ্গর শিকার রোধে কোনো পদপে নিতে পারছেন না। তবে হাঙ্গর শিকার রোধে শিগগিরই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে বলে জানায় ওই সূত্রটি।

কলাপাড়া কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হাঙ্গর শিকার বন্ধে তাদের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এ ব্যাপারে তারা কোনো পদপে নিতে পারছেন না।

যদি উপর থেকে কোনো নির্দেশ আসে তাহলে তাৎণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।