ঢাকা: আসন্ন শুস্ক মৌসুমে ওয়াসায় কোনো সুখবর নেই ঢাকাবাসীর জন্য। তাই এবারও পানির অভাবে অবর্ণর্নীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে তাদের।
ঢাকা ওয়াসার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলি ড. তাকসিম এ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুস্ক মৌসুম সামনে রেখে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সমস্যা সমাধান করা হবে। ’
২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুন মাসের মধ্যেই চারটি গ্যাস জেনারেটর কেনার কথা ছিল ওয়াসার। নির্ধারিত সময়ের ১১ মাস পরও ওয়াটার পাম্পগুলোতে জেনারেটর লাগেনি। ওয়াসা কর্তৃপ জানিয়েছে, জেনারেটরগুলো কেনা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই সেগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তিতাস সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন কোনো সংযোগ না দেওয়ায় জেনারেটরগুলো চালু করা যাচ্ছে না।
২০০৮ সালে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খিলতে পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় একটি শোধনাগার ও একটি ইনটেক নির্মাণ এবং ৭০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করার কথা এ প্রকল্পে। এতে ব্যবহার হবে মেঘনা নদীর পানি। এটা বাস্তবায়িত হলে নগরবাসীকে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। গত আড়াই বছরেও এ প্রকল্পের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাগলা-কেরানীগঞ্জ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় মাওয়া থেকে পদ্মা পানি এনে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন মতাসম্পন্ন শোধনাগার, ইনটেক, ৯০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন ও ৬৮ কিলোমিটার পানির লাইন নির্মাণ করার কথা। ২০০৯ সালের জুন মাসে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ওয়াসা জানিয়েছে, এ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার।
৩৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাকুর্তা-তেতুলঝরা এলাকায় ওয়েলফিল্ড নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিরপুর এলাকায় দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে বলে ওয়াসা আশা করে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে নেওয়া এই উদ্যোগের কার্যত এখনো কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। ওয়াসা সূত্র জানায়, প্রকল্পের জন্য কোরিয়ার কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে এই প্রকল্পে পানি আনার কথা রয়েছে। এ প্রকল্প থেকে দৈনিক ২৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার কথা।
২০০৭ সালে ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দৈনিক ৫ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি পাওয়া যাবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় আশা করা হয়। এ পর্যন্ত এর অগ্রগতি বলতে প্রকল্পটি কেবল একনেকে অনুমোদন পেয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াসার দাবি, ২০১১ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
ডেনমার্ক সরকারের সহায়তায় ৮৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সায়দাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করে ঢাকা ওয়াসা। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। গত তিন বছরে চুক্তি স্বার ছাড়া তেমন কোনো কোনো অগ্রগতি না হলেও প্রধানমন্ত্রী কয়েক মাস আগে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর বাস্তবায়ন হলে ২২ কোটি ৫০ লাখ লিটার পানি পাওয়া যাবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে।
ইমার্জেন্সি রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন অব ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম প্রজেক্টের আওতায় ১৫০টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, ১৩০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করার কথা। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দৈনিক ৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হওয়ার কথা। গত সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের মাত্র অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ওয়াসা সূত্র জানায়।
বাকি ছয় মাসে প্রকল্পের কাজ কীভাবে শেষ হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।
ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রকল্প ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৪৮১ কিলোমিটার পুরনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন ও ১৪টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ করার কথা। এর বাস্তবায়ন হলে পাইপলাইনের লিকেজ বন্ধ ও পানির অপচয় কমবে বলে ওয়াসা জানায়। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ওয়াসা সূত্র জানায় প্রকল্পের প্রাথমিক পরীামূলক কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
এসব প্রকল্প সময় মতো বাস্তবায়ন হবে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসিম এ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা একটা কঠিন প্রশ্ন। তবে আমরা আশা করছি প্রকল্পগুলো সময়মতোই বাস্তবায়ন হবে। ’
বাঙলাদেশ সময় : ১৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১১