ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিসিসি’র ১০০টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর হচ্ছে না, তেল চুরির অভিযোগ

মান্নান মারুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১০
ডিসিসি’র ১০০টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর হচ্ছে না, তেল চুরির অভিযোগ

ঢাকা: ঢাকা সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ও গাড়ি চালকের বিরোধিতা ও আপত্তির কারণে জাপান সরকারের অনুদানে পাওয়া অত্যাধুনিক ১০০টি কন্টেইনার ট্রাক সিএনজিতে রূপান্তরের কাজ থেমে আছে।
 
ডিসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আর্বজনা টানার কাজে প্রায় ৮২ কোটি টাকা মূল্যের এই ১০০টি অত্যাধুনিক কন্টেইনার ট্রাক দিয়েছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

এদের মধ্যে ৪৫টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আটকে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ডিসিসি’র বেশ কিছু কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং গাড়িচালকের চরম আপত্তি ও অসহযোগিতার কারণে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে পারছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিসিসি’র একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ডিজেলচালিত গাড়িতে জ্বালানি তেল চুরির সুযোগ থাকে। সিএনজিতে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা হলে তা সম্ভব হবে না বলেই পরিবহন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে চালকরা এর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। কর্মকর্তারা আরও জানান, রাস্তার ওপর পড়ে থাকা পরিচ্ছনতা বিভাগের খালি কন্টেইনারের নামেও চালকরা নিয়মিত জ্বালানি তেল বরাদ্দ নিচ্ছেন। সম্প্রতি মিরপুর (অঞ্চল-৮) অঞ্চলের অধীনে ৪টি খালি কন্টেইনারের নামে জ্বালানি তেল নেওয়ার ঘটনা কর্তৃপক্ষ জেনে যাওয়ার পর ওই সব কন্টেইনার জব্ধ করা হয়। চালকদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানান ডিসিসি’র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

ডিসিসি’র এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং বেশিরভাগ চালক ডিজেলচালিত গাড়িগুলোর নামে মিথ্যা ভাউচার দিয়ে নানা কৌশলে জ্বালানি তেল চুরি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তেল চুরি চালিয়ে যেতেই নতুন গাড়িগুলোকেও সিএনজিতে রূপান্তরের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি তাদের। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিচ্ছেন তারা।

ডিসিসি’র হিসেব অনুযায়ী ৫৬১টি গাড়ির মধ্যে ৪০৩টি ট্রাক, ৫৭ টি হাইড্রোলিক লোডার, ২৪ টি পিক-আপ, ৩৮টি জিপ, ১২ টি মাইক্রো বাস, ২ টি স্টাফবাস, ৪ টি পানি বহনকারী গাড়ি, ৫ টি অ্যাম্বুলেন্স, ২১৭ টি মোটর সাইকেল ও ১ টি ট্রাকলট রয়েছে। এর মধ্যে সিএনজিতে রূপান্তর  করা হয়েছে  জিপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিক-আপ ও পানির গাড়িসহ ৬২ টি গাড়ি। ওই চক্রের বিরোধিতার কারণেই ডিসিসি’র বাকি গাড়িগুলোকে আর সিএনজিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, জ্বালানি তেল চুরি ঠেকাতে ডিসিসি’র পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য জাপান থেকে আনা ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৪৫টিকে চুক্তি অনুযায়ী সিএনজিতে রুপান্তরিত করতেই হবে। কিন্তু গাড়ির চালকরা তাতে বাধ সাধছে। জ্বালানি তেল চুরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এই চক্রটি কৌশলে চালকদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিসিসি’র পরিবহন চালক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। তারা সিএনজিতে রূপান্তরের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরতে মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে ইউনিয়ন সভাপতি আক্তার দেওয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের যুক্ত স্বাক্ষরে এক আবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের দেওয়া গাড়িগুলোকে সিএনজিতে রূপান্তর করলে অনেক ক্ষতি হবে। তাদের মতে সিএনজিতে রূপান্তর করলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হবে আর  লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে অনেক বেশি ।

আবেদনে তাদের তুলে ধরা যুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে: সিএনজিচালিত গাড়ির আয়ু শতকরা ২০ ভাগ কমে যায় এবং সিএনজি ইঞ্জিন মেরামতের ব্যয় শতকরা ২৫ ভাগ বেশি। সঠিকভাবে ইঞ্জিন মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে অল্প সময়েই ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। গাড়ির ইঞ্জিন ওভারহিটেড হয়ে যায়। গাড়ি ঠান্ডা হয়ে স্বাভাবিক তাপ মাত্রায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। সিএনজি গ্যাস ফিলিংয়েও সময় লাগে বেশি।

শিগগিরই গ্যাসের দাম বর্তমান দামের চেয়ে ৪ গুণ বেড়ে প্রতি ইউনিটের (ঘনফুট) দাম ৬৭ টাকায় দাঁড়াবে যা প্রতি লিটার ডিজেলের চেয়ে ২২ টাকা বেশি হবে বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন এই সিবিএ নেতারা।
 
পরিবহন বিভাগের মহা ব্যবস্থাপক ইমদাদুল দস্তগীরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডিসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপটেন বিপন কুমার সাহা বলেন, জাইকার সঙ্গে চুক্তিতে ডিজিলচালিত গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করার শর্তের উল্লেখ আছে। এখন ওই চুক্তি লংঘন করলে জাপান সরকার মানবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। চাপের মুখে এ নিয়ে জাইকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিসিসি’র কর্মকর্তারা দেন দরবার করতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকৌশলী তারেক বিন ইফসুফ বলেন, জাপান সরকারের অনুদানে ৮২ কোটি টাকায় ১০০টি গাড়ি ডিসিসিকে দেয়া হয়েছে। আড়াই বছর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে গাড়িগুলো সিএনজি করার শর্ত রয়েছে। এখন ৪৫টি ডিজেল চালিত গাড়িকে সিএনজি করার প্রক্রিয়া নিয়েই আপত্তি আসছে।

তিনিও ডিজেলচালিত এই গাড়িগুলোকে সিএনজিতে রূপান্তর না করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তার মতে আড়াই বছর আগে গ্যাস সংকটের বিষয়টি তাদের সামনে ছিল না। এখন গ্যাস সংকটের বিষয়টি নিয়ে তাদেরকে ভাবতে হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, এনিয়ে জাইকার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে, বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আরো কথা বলতে হবে। কারণ জাপান বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে অনুদান এবং বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কোনোভাবেই নষ্ট করা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১০২১ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১০


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।