ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিডিআর বিদ্রোহ: ‘এক ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রের কোত খালি হয়ে যায়’

স্টাফ করেসপন্ডন্টে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০
বিডিআর বিদ্রোহ: ‘এক ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রের কোত খালি হয়ে যায়’

ঢাকা: ‘ঘটনার দিন আমি কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ড (অস্ত্রাগার)-এর নিরাপত্তা ডিউটিতে অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ সময় হঠাৎ ১৫ থেকে ২০ জন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য কোয়ার্টার গার্ড আক্রমণ করে।

তারা অস্ত্রাগারে রক্ষিত অ্যামুনিশন বক্স ভেঙে গুলি লুট করে নিয়ে যায়। আমাকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে জেসিও’র বিশ্রামাগারে আটকে রাখে। এক ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রের সমস্ত কোত (যেখানে অস্ত্র থাকে) খালি হয়ে যায়। ’

আদালতে দাঁড়িয়ে এভাবেই ২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের বিবরণ দেন মেজর মো: রিয়াজুল করিম।  

রোববার সকালে সাড়ে ১০টায় দরবার হলে এ বিদ্রোহের বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ আদালত-৭-এর আওতায় ২৪ ব্যাটালিয়নের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে দু’জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য ও আসামিদের জেরা করার সুযোগ দেওয়া হয়। দু’জন সাক্ষী মোট ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।

রোববার আদালতে ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অভিযুক্ত ৬৬৭ জন আসামিকে পুলিশ প্রহরায় হাজির করা হয়।

অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ১৫৮ জন হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় সিআইডির অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

রিয়াজুল করিম এ ঘটনার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তারা তা অস্বীকার করেন।

আসামি সিপাহী মো: হাফিজুর রহমান, মো: রায়হান চৌধুরী, মো: শফিকুল ইসলাম, নায়েক ইকরামুল হকসহ অনেকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে আদালতকে জানান।

অপর সাক্ষী সিপাহী রিপন কুমার বিশ্বাস ঘটনার দিন সেক্টর ম্যাগাজিনের (গোলাবারুদাগার) নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে আদালতকে জানান।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দিন (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় কিছু বিদ্রোহী সৈনিক সেনা কর্মকর্তা পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করে রাখে। এ সময় তারা এক অফিসার পতœীকে চড় মারে। চড়ের আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ’

বিদ্রোহী সৈনিকরা সেক্টর ম্যাগাজিন (গোলাবারুদাগার) ও গার্ডরুমে আক্রমণ করে গার্ড সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে যায় বলে আদালতকে জানান তিনি।

এসব ঘটনায় হাবিলদার মো. শাহাজাহান মাতব্বর, নায়েক কামরুজ্জামান, সিপাহী আল আমিন, আহসান হাবীব, মো. শরীফ হোসেন, মো: আব্দুল মন্নাফ মিয়াসহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন সাক্ষী সিপাহী রিপন কুমার বিশ্বাস।

অভিযুক্ত আসামিরা আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তর্কে জড়িয়ে পড়লে আদালত তাদের পরে যুক্তি প্রমাণের সুযোগ রয়েছে বলে জানান। এ কথায় তারা শান্ত হন।
 
অফিসার পতœীকে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত সিপাহী শামীম আল মামুন জুয়েল এ সময় নিজেকে নির্দেষ দাবি করে বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা। সাক্ষী নিজে বাঁচার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, মাননীয় আদালত। ’

রিপন কুমার বিশ্বাসের এ বক্তব্যের পর ২৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার দিন ধার্য করে বেলা ১টায় আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

রোববার অনুষ্ঠিত বিশেষ আদালতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম।   তার সহযোগী ছিলেন লে. কর্নেল মো. গোলাম রব্বানী, মেজর সাঈদ হাসান তাপস ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন ২৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শামছুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।