গাজীপুর : গাজীপুরে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম অপারেশন বিভাগের (উত্তর) সিটি গেইট স্টেশন (সিজিএস) জয়দেবপুর থেকে চুরি করে পাচারের সময় তেলসহ একটি লরি ও ১৩টি প্লাস্টিকের কন্টেইনার আটক করেছে নিরাপত্তা কর্মীরা।
মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
তিতাসের সিস্টেম অপারেশন ডিপার্টমেন্ট গাজীপুরের ম্যানেজার প্রকৌশলী রতন চন্দ্র দে নিরাপত্তা কর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের সময় পদ্মা তেল কোম্পনির একটি লরি কনডেনসেট (গ্যাস-ঘনীভূত) তেল নিতে জয়দেবপুরের সিটি গেইট স্টেশনে ঢোকে। পরে চুক্তিমত ৯ হাজার লিটার তেল নেওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত তেল ভরে পাচারের চেষ্টা করছিল চালক ও সহযোগিরা। টের পেয়ে পার্শ্ববর্তী তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল জালিল তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে লরির চালক ও তার সহযোগীদের সঙ্গে জলিলের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। তার চিৎকারে সহকর্মীরা এগিয়ে আসলে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়।
নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল জলিল জানান, তিনি সকাল ৬টায় নিরাপত্তার দায়িত্বে এসে ভেতরে ওই তেলবাহি লরি দেখতে পান। লরির চালকের সিটের পাশে এবং লরির ওপরে প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ১৩টি তেলভর্তি কনটেইনার দেখে তার সন্দেহ হয়। সকাল ৭টার দিকে লরিটি চলে যাওয়ার সময় তিনি আনসাদের তা আটকাতে বলেন। কিন্তু চালক হারুন মিয়া ও তার সহযোগীরা কর্তব্যরত আনসারদের গেইট খুলে দিতে বলে। জলিল তাতে বাধ সাধলে তাদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। খবর পেয়ে ওই সিটি গেইটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোক্তার আহম্মদ ঘটনাস্থলে গিয়ে লরিটি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু জলিল তা না মানলে তাকে টেনে মোক্তার আহাম্মদ তার চেম্বারে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলার জন্য জলিলকে নিষেধ করেন। জলিল তা না শুনে লরি থেকে তেলভর্তি প্লাস্টিকের কনটেইনারগুলো আটক করে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদকে অবগত করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই কর্মকর্তা মোক্তার আহাম্মদ লরির চালক ও তার সহযোগিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
সিজিএস’র কর্তব্যরত লাইন পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, ৯ হাজার লিটার তেলভর্তি লরিটি বহির্গমনের জন্য গেইটপাশ ইস্যু করা হলেও বেশি তেল নেওয়ার অভিযোগে গেইটে বাধা দেওয়া হয়। পরে মোক্তার হোসেন পাশটি ভুল হয়েছে বলে তা নিরাপত্তাকর্মী রেজাউল করিমের হাত থেকে নিয়ে আর ফেরৎ দেননি।
খবর পেয়ে র্যাব, পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোক্তার আহম্মদ অতিরিক্ত তেল চুরি ও পাচারের বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্যাস লাইনের জমাকৃত রিজার্ভ ট্যাঙ্কি থেকে ঘনীভূত তেল সরবরাহের পর পাইপ লাইনের মুখে মোক্তার আহম্মদের স্বারিত সিলগালা থাকলেও তিনি তেল সরবরাহ ও পাশ ইস্যুর কথা অস্বীকার করেন। তেল চুরির ঘটনাটি কর্তৃপরে নির্দেশে সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মুহাম্মদ আমীর উদ্দিন তদন্তে যান।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) তদন্ত চলছিল।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে ঘটনাটির তদন্তে তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কোম্পানি লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) গাউসুর রহমান মোস্তফা ঘটনাস্থলে যান।
উল্লেখ্য, তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন থেকে কনডেনসেড (গ্যাস সঞ্চালনের সময় নির্গত ঘনীভূত) তেল সিজিএসের সংরতি এলাকায় নির্দিষ্ট ট্যাঙ্কিতে সংগ্রহ করা হয়। এই তেল ক্রয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে পদ্মা তেল কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হয়। আর ওই তেল পরিবহনের ঠিকাদারি পায় মেসার্স সবুজ ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই স্টেশন থেকে সপ্তাহে দুইবার তেল নিয়ে যায়। রিজার্ভ ট্যাঙ্কি থেকে তেল সরবারাহের পরে ট্যাঙ্কির পাইপ লাইনের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তদের উপস্থিতিতে সিল গালা করে দেওয়া হয়।
বাংলঅদেশ সময় : ১৭৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১০