ঢাকা: সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন আবাসিক এলাকাগুলোতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন পোশাক ও সোয়েটার কারখানা। অন্যান্য কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এ ধরনের কারখানা স্থাপনে তা লাগে না।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া আবাসিক এলাকায় এ ধরনের শিল্প স্থাপনের সুযোগ থাকায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ নাগরিক সুবিধার ঘাটতি ছাড়াও দেখা দিচ্ছে বাযূ পানি ও শব্দদূষণসহ নানা দুর্ভোগ ওবিপত্তি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালার সংশোধনী এনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় একটি এসআরও (এসআরও নং-২৩৭-আইন/২০০৭) জারি করে। এতে বলা হয়, পোশাক ও সোয়েটার শিল্প পরিবেশ ছাড়পত্রের বাইরে থাকবে।
সেই থেকে পোশাক (কাটিং ও সুয়িং) এবং সোয়েটার শিল্প পরিচালনা ও স্থাপন করতে ছাড়পত্র নিতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির সভাপতি রিজওয়ানা হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নেওয়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল । এসব প্রতিষ্ঠান তরল বর্জ্য তৈরি করে না স্রেফ এই যুক্তিতে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠান নানাভাবেই নগরজীবনের জন্য হুমকি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার দিকটি মেনে চলছে কিনা তা-ও আর দেখার সুযোগ নেই। ’
দপ্তর ও বিজিএমইএ সূত্র জানায়, এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীর মিরপুর, রোকেয়া সরণি, মহাখালি, তেজগাঁও , উত্তরা, সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠছে। এর বাইরে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় একই ধরনের শিল্প কারখানা রয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে ও ছাড়পত্র ছাড়া আবাসিক এলাকায় পোশাক ও সোয়েটার শিল্প কারখানা করার ফলে এগুলো স্থানীয় মানুষের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিসহ।
মিরপুর পল্লবী আবাসিক এলাকার গৃহিনী সানিয়া সিরাজ বাংলানিউজকে জানান, তাদের বাসার পাশেই পাঁচতলা ভবনে একটি তৈরি পোশাক কারখানা। এর সঙ্গে লাগোয়া আরো তিনটি। সবগুলোতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার কর্মী কাজ করে। আর এগুলোতে বিদ্যুৎ চলে গেলেই চালানো হয় জেনারেটর।
‘জেনারেটরের বিকট শব্দ শুনতে শুনতে কানে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকট’, বলেন তিনি।
গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকটের সঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানার সম্পর্ক কোথায় জানতে চাওয়া হলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটি এলাকায় যখন ধারণ ক্ষমতার চেয়ে মানুষ বেড়ে যাবে তখন তাদের চাহিদাও বাড়বে। তবে প্রতিটি সংস্থা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। ফলে চাপ পড়া স্বাভাবিক। ’
পরিবেশের সুরক্ষায় যেখানে কৃত্রিম ফুল তৈরির কারখানাকে এবং স্বর্ণের দোকান স্থাপন করতে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয় সেখানে পোশাক ও সোয়েটার শিল্প কিভাবে পরিবেশগত ছাড়পত্রের বাইরে থাকে তা আসলে বোধগম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (কারিগরি) মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিধি মোতাবেক আমরা এসব শিল্পকে নানা দিক বিবেচনা করে ছাড়পত্র দিতাম। আবাসিক এলাকায় অনুমতি দিতাম না। কারণ আবাসিক এলাকায় এগুলো নাগরিক সুযোগ সুবিধার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে।
জানা গেছে, তত্ত্বধায়ক সরকারের সময় পরিবেশ অধিদপ্তর ও তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেয়। একটি নিদির্ষ্ট সময় সীমার মধ্যে পোশাক ও সুয়েটার শিল্প কে নগরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দু’পক্ষ আলোচনা করে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। খসড়া দেখে বিজিএমইএ চুক্তি করতে অনাগ্রহ দেখায়। পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাকে বুঝিয়ে পোশাক ও সোয়েটার শিল্পকে পরিবেশগত ছাড়পত্রের বাইরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার পরিবেশের ব্যাপারে অনেক সচেতন। এরই মধ্যে পরিবেশ আইন-২০১০ (সংশোধন) সংসদে পাস হয়েছে। আমরা বিধিমালা পর্যালোচনা করে দেখছি। বিধিতে যেসব অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যাবে সেগুলো সংশোধন করা হবে। পোশাক ও সোয়েটার শিল্পকে পরিবেশ ছাড়পত্রের বাইরে রাখার বিষয়টিও আবার বিবেচনা করে দেখা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২, নভেম্বর ০২, ২০১০