ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একটি বাঁধ ও পাঁচ উপজেলার পানিবন্দি মানুষের কান্না

সোহেল রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১০
একটি বাঁধ ও পাঁচ উপজেলার পানিবন্দি মানুষের কান্না

সিলেট: বাড়িটি যেন ছোট্ট একটি দ্বীপ। চারপাশে অথৈ পানি।

ডিঙিতে চড়ে কাজ ও খাবারের সন্ধানে  ছুটছেন পরিবারের কর্তা বৃদ্ধ আসগর আলী। কিন্তু কোথাও কোনো কাজ নেই। নেই খাবার। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ক্ষুধা সইতে না পেরে কাঁদছে পাঁচ বছরের শিশু তানজু।

ফেঞ্চুগঞ্জের জুড়ী নদীর শাখা মোহনায় বুড়িকোয়ারি বিলের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের কারণেই সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলায় এ দৃশ্যটি এখন পরিচিত।

বাঁধের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নদীতে ইট ভাটার বর্জ্য ফেলায় গত এপ্রিল মাস থেকেই এ বিশাল অঞ্চলজুড়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে দু’ জেলার পাঁচ উপজেলার অধিবাসী।

কুলাউড়ার ভুখশীমইল গ্রামের আসগর আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাঁধের কারণে সব ডুবে গেছে। নিঃস্ব হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কাজ কাম নাই। খাবার পাই না। ক্ষেত খামার সব পানির নিচে। আমাদের দিকে কে তাকাইব?’
 
হাকালুকি হাওর পারের এ গ্রামের পুরোটাই ডুবে যাওয়ার অপেক্ষায়। এরই মধ্যে পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। চারপাশে হাহাকার। অনাহারে অর্ধাহারে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছে গ্রামবাসীরা।
 
গ্রামের কালাম, বক্কর ও হারুন বাংলানিউজকে জানান, হাজার-হাজার হেক্টর ক্ষেতের বোরো ফসল ঘরে তোলার আগেই পানির ঢলে ভেসে গেছে। আমনের ক্ষেত করা যায়নি। গো-খাদ্যের অভাবে কৃষকরা হালের বলদ বিক্রি করে দিচ্ছেন। সামনে আরেকটা বোরো মৌসুম। অথচ পাঁচ মাস ধরে বাড়ি-ঘরে পানি। জমিতেও পানি।

তাদের আর্তি, আমরা এখন খাব কী? কীভাবে বাঁচব?’

২০০৪ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় জুড়ী নদীর শাখার মোহনায় বুড়িকোয়ারি বিলের কাছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ এমনিতেই রুদ্ধ হয়ে যায়।

এর পাশাপাশি মূল নদীর মোহনার পাশে থাকা দু’টি ইটভাটা থেকে নদীতে নিয়মিত খোয়াসহ অন্য বর্জ্য ফেলায় পানি নিষ্কাশনের চ্যানেল আরও রুদ্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এর আগে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও হাওরে জমা হওয়া পানি জুড়ী নদীর মূল এবং শাখা নদী দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু পলি পড়ে কুশিয়ারা, জুড়ী, ফানাই ও সোনাই নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে চারদিক থেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর পাউবোর মহাপরিচালক মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়ায় জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে আসলে পানিবন্দি শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মহাপরিচালক বলেন, শিগগিরই জুড়ী নদীর মোহনায় খনন করে পানি নিষ্কাশন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে খননযন্ত্র পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। । আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জুড়ী নদীর মোহনায় কিছুটা জায়গা খনন করে পানি নিষ্কাশনের প্রাথমিক ব্যবস্থা করা হবে। ’
 
তবে মহাপরিচালকের আশ্বাস মতো খনন কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেন পানিবন্দি মানুষরা।

জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে বিয়ানীবাজার উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার, গোলাপগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর, বড়লেখায় ১০ হাজার হেক্টর, জুড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর এবং কুলাউড়ায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে।  

বন্যায় এসব উপজেলায় চলতি বছরে বোরো ও আউশ মৌসুমে ধানের ফলন হয়নি। ফলে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক পরিবার দুঃসহ দিন পার করছেন।   আগামী বছর বীজ সঙ্কটেরও আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।