ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সোশ্যাল মিডিয়া গোলটেবিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১০
সোশ্যাল মিডিয়া গোলটেবিল

সোশ্যাল মিডিয়ার ইতি-নেতি নিয়ে সম্প্রতি গোলটেবিল আলোচনায় বসেছিলেন চার মিডিয়া সেলিব্রেটি--- লরেন জারাজনিক, নেইট সিলভার, ক্যাটেরিনা  ফেইক, ও ড্যান ফ্লেচার। ওরা পরস্পরের ফেসবুক-বন্ধু।

নিজ নিজ ক্ষেত্রে এরা একেকজন দিকপাল। কথা বলেছেন টাইম এডিটর রিক স্টেনজেল-এর সঙ্গে।  

ভাষ্য ও ভাষান্তর : জুয়েল মাজহার


[সবার আঙুলের ডগায় এখন ক্ষমতা ---অপরিসীম ক্ষমতা! নিজের মনের কথাটি ন্যানো সেকেণ্ডে  বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার আরো কতো কী!  প্রিন্ট আর টিভি মিডিয়াকে ছাপিয়ে জন্ম নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া নামের এক মিডিয়া। এখানে সবাই রাজা। আর এটা সরকার, প্রচলিত মিডিয়া, প্রতিষ্ঠান বা এস্টাবলিশমেন্টের সামনে ছুড়ে দিচ্ছে নিত্য-নতুন চ্যালেঞ্জ।   কোটি মানুষের মতপ্রকাশের বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্ম এই সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিস্পর্ধী এক মিডিয়া---হয়ে উঠেছে ক্ষমতার বিকল্প ভরকেন্দ্র।

একই সঙ্গে তা সাংবাদিকতার চেনা জমিনের সীমানাকে প্রসারিত করেছে অনেক দূর ; আর সেইসঙ্গে করেছে অনেক বেশি ইন্টার-অ্যাকটিভ। এর  সুবাদে বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে নতুন এক সক্রিয়তা, বিশ্ব-পারিবারিক বন্ধন আর মিত্রতা। ]

লরেন জালাজনিক
প্রেসিডেন্ট
এনবিসি ইউনিভার্সাল উইমেন অ্যান্ড লাইফস্টাইল এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্ক

সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ

ছাপানো সংবাদপত্রের দিন-শেষ, দিন-শেষ বলে আমরা যে কপাল চাপড়াচ্ছি, ব্যাপারটা আসলে কি?
এক সময় বলা হতো ,’’ দ্যাখো হে, খেলার পাতা পড়বার জন্য আমি তো আর আমার কম্পিউটারখানা বগলদাবা করে বাথরুমে নিয়ে যেতে পারবো না’’। তা হলে ভেবে দেখা যাক করণীয় কী । তোমার আইপ্যাডটা (ipad) নাও আর ঢুকে পড়ো গিয়ে বাথরুমে। বুড়োরা তবুও বলবে,’’আঙুলের ডগায় নিউজপ্রিন্টের সেই স্পর্শটুকু তো আর পাচ্ছি না ভায়া...। ’’  আসলেই কী তা-ই?  আমার কিন্তু মোটেই তা মনে হয় না।
 
দ্য ফোর্থ এস্টেট

প্রশ্ন (সিটিজেন জার্নালিজমের প্রসঙ্গটাই যখন আসছে) হচ্ছে, কোথায় উডওয়ার্ড আর কোথায় বার্নস্টাইন? টানা দেড়টা বছর খেটেখুটে তুমি একটা প্রতিবেদন লিখলে, তোমাকে বেতন হিসেবে দেওয়া হলো কাড়ি কাড়ি টাকা, তারপরও স্টোরিটা ছাপা হতে পারে আবার না-ও পারে। সাংবাদিকতায় সব সময় চোখ-কান খোলা রাখতে আর অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হয়। সে গুরুদায়িত্বটা মূলত: সম্পাদকের আর প্রকাশকের। এটা অপরিহার্য।

 ভোক্তাদের জয়জয়কার

 যারা তোমার ভোক্তা তাদের দলে ভেড়ানোর পেছনে খরচের ঝক্কিও অনেক। অর্থনৈতিক মন্দার ব্যাপারটা খবর হয়ে ওঠার অনেক আগেভাগেই আমরা এর কথা ভেবেছিলাম। কারণ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম আমাদের আই ভিলেজ (iVillage) কম্যুনিটির মহিলারা ’’আমার স্বামীর চাকুরিটা গেছে’’ জাতীয় কথাবার্তা পরস্পরের সঙ্গে বলাবলি করছে।   মানুষ এখন কথা বলার অধিকার পেয়ে গেছে, এখন আর তাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

নেইট সিলভার
ফাউন্ডার
ফাইভথার্টিএইট.কম

অ্যাকইটভিজম অনলাইন

২০০৮সালে ওবামার নির্বাচনী প্রচারাভিযান থেকে শুরু করে টি-পার্টি মুভমেন্ট ---যেদিকেই তাকাও ধেখতে পাবে এসবের পেছনে আছে সোশ্যাল মিডিয়ার অবদান। তবে লোকে যদি ’’আমি যদি এর-ওর টুইটার ফিড (Twitter feed) অনুসরণ করে চলি তাহলেই সেটা অ্যাক্টিভিজম হয়ে যাবে’’ বলে ভেবে বসে থাকে, তাহলেই বিপদ। না, এটা হলো সেদিকেটায় প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। দিনে দিনে আমাদের সক্রিয়তা বাড়ছে, বিশেষত রাজনৈতিক সক্রিয়তা। আর আমি মনে করি, এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার বিরাট ভূমিকা আছে।

ভালোর বাড়বাড়ন্ত

আসলে কতোটা গণতন্ত্র আমাদের দরকার? আমরা মনে করছি, আমাদের আরো বেশি বেশি গণতন্ত্র চাই। তবে কিনা মানুষ কখনো কখনো অতিমাত্রায় অস্থির হয়ে ওঠে, যখন তারা জোট বাঁধে, যুথবদ্ধ হয়। এমনও হতে পারে, মানুষ  মূলত সেইসব মানুষের কথা শুনতেই বেশি ব্যাকুল, যারা তাদের নিজেদের মতো। আর যারা তাদের মতো নয়, যাদের মতের সঙ্গে নিজেদের মতের মিল খুঁজে পায় না, তাদের কথা মানুষ শুনতেও চায় না। আর এসব ব্যাপারটা কিন্তু বেশ বিপজ্জনক বটে।

ফাইভথার্টিএইট-এর পেছনের রহস্য

আমি নিজে একজন স্বতন্ত্রপন্থি (ইনডেপেনডেন্ট), কিন্তু সচরাচর ভোটটা আমি দিয়ে থাকি ডেমোক্রেটদের বাক্সে।   আমাদের শ্রোতা-দর্শকদের মধ্যে উল্লেখ করার মতো একটা অংশ রক্ষণশীল ভাবধারার মানুষ। আমি মনে করি, অংশত এটা সম্ভব হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য করে আমরা যে খোলামেলা ঘোষণাটা দিই, সেটার কারণে। আমরা তাদের বলি:’’আমরা সংখ্যা ধরে এগোচ্ছি। খোলামেলা আর পক্ষপাতহীন কথা বলাই আমাদের পছন্দ। আমার মনে হয়, দ’ুধরণের মত ও পথকে সঙ্গী করে এগোতে পারি আমরা। ’’   

ক্যাটেরিনা ফেইক
কো-ফাউন্ডার
ফিকার.কম এবং হাঞ্চ.কম

স্রেফ নিজের মতো হও

আমি মনে করি বেনামা অনলাইন খুবই বিপজ্জনক আর উস্কানিমূলক। বেনামা অনলাইনের আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকে খামখেয়ালিপনা, দু:খবোধের প্যানপ্যানানি আর ঘৃণা-বিরক্তি। সাধারণত দেখা যায়, মানুষকে যখন তার কথা ও কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয়, তখন সে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সভ্য ও দায়িত্বশীল আচরণ করে।

সিটিজেন জার্নালিজম

২০০৪ সালে জাকার্তায় অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে বোমা হামলা চালানো হয়।   কিন্তু বার্তাসংস্থা  সিএনএন সে খবর পাবার আগেভাগেই সেই হামলার ছবি চলে আসে ফিকারে। এটা এক স্মরণীয় ঘটনা। মানেটা দাঁড়াচ্ছে এই--অকুস্থলে আলোকচিত্র সাংবাদিক না পাঠিয়েই, যে কেউ ক্যামেরা-ফোনের মাধ্যমে ঘটনার ছবিটা নিমেষে আপলোড করতে পারে। দিনে দিনে এধারাটা ক্রমশ বেগবান  হয়েছে।

সবার আগে চাই পেশাদারিত্ব

নিউইয়র্ক টাইমস (New york Times)-এর প্রতিবেদনের ওপর আস্থা রাখা যায়, এটা সবার জানা। সবাই জানে যে, ওরা সব সময় তথ্য বা খবরের সত্যতা যাচাই করে তবেই তা ছাপে।   ওরা গল্প-গুজব ছাপায় না, কারণ ওরা অন্য যে কারোর তুলনায় সাংবাদিকতার উচ্চতর মানদণ্ড মেনে চলে। ট্রাডিশনাল সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা কখনোই ফুরাবে না।


ড্যান ফ্লেচার
রিপোর্টার
 টাইম

দ্রুত ও চটজলদি সাড়া

মানুষ কি পড়তে চায়, তারা আমাদের কাছ থেকে কি কি পেতে চায় সেটা আমরা এখন যতোটা ভালোভাবে জানি, মিডিয়ার ইতিহাসে আর কখনোই এতোটা জানা সম্ভব ছিল না। চাইলে কখন কারা আমাদের পাঠক, তার পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইলটাও আমরা তৈরি করে নিতে পারি। সংবাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই জোরালো একটা বিষয়।

সোশ্যাল-মিডিয়া টুল-কিট

আমাদের সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ব্যাপার হচ্ছে, হট্টগোলের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংকেতটাকে খুঁজে বের করা। যাবতীয় তথ্য, প্রতি মুহূর্তের আনকোরা যতো রিয়েল-টাইম ইনফরমেশন---এসবকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়ার মতো মোক্ষম উপায় বের করার দায়িত্ব এখন আমাদের সামনে। এসব তথ্য-উপাত্ত যদি গতানুগতিক সূত্র থেকে না-ও আসে , তবু সে নিউজটার কভারেজ আমাদের দিতেই হবে। আদৌ যদি তাতে মূল্যবান বা সারবান কিছু থাকে, তাহলে সেটা সেই নিউজ আইটেমকে দেয় বাড়তি গতি ও তাৎপর্য।  

ভেজ বনাম জাংকফুড

সংবাদে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে ’’ইট ইউর ভেজিটেবলস’’ জাতীয় ব্যাপার নেই বলে কেউ নিশ্চয় খামোকা তর্ক  জুড়ে দেবে না। নিছক ঠাট্টা বা হাল্কা-অগভীর বিষয় নিয়েও অনেক কিছু করার আছে। থাকা চাই ক্ষুরধার সম্পাদকীয় বিবেচনা। সেটা থাকলেই কেবল কোনো বিশেষ একটা দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়বার ঝুঁকিটা আর থাকে না। সংবাদের হাল্কা দিকটাকে একদম ছেঁটে ফেলে দেওয়াটা  কি বাস্তবসম্মত হবে ?  আমি অবশ্য তা মনে করি না।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।