ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশ্ব বসতি দিবস: অব্যবস্থাপনায় গতি হারাচ্ছে ঢাকা

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১০
বিশ্ব বসতি দিবস: অব্যবস্থাপনায় গতি হারাচ্ছে ঢাকা

ঢাকা: অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও যানজটের চাপে রাজধানী ঢাকা প্রতিদিনই তার স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। এছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনায় ঢাকা পরিণত হচ্ছে এক অকার্যকর নগরীতে।

নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা মহানগরী অভিমুখী চলমান জনস্রোত অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালে পরিবহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়বে।

বিশ্ব বসতি দিবসকে সামনে রেখে এ আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মহানগরীর অব্যস্থাপনা বিষয়ে তারা জানাচ্ছেন, ৩শ ৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঢাকা শহর সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ বসবাসের উপযোগী হলেও সেখানে বাস করছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না বাসযোগ্য জমি। অথচ রাজধানীর যত্রতত্র গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত উপায়ে বহুতল ভবন।

এ বিষয়ে রাজউকের ভাষ্য, ‘ঢাকা মহানগরীতে গড়ে ওঠা শতকরা ৯০ ভাগ ভবনই রাজউকের নকশা বহির্ভূত। ফলে মহানগরীতে ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে আবাসন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও যানজটসহ বহুবিধ নাগরিক সমস্যায় নাকাল নগরবাসী। ’

বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘রাজধানীতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য দৈনিক ২শ ২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও নগরবাসী পান ১শ ৯০ কোটি লিটার। বিদ্যুতের চাহিদা ১ হাজার ৫শ মেগাওয়াট। অথচ সরবরাহ করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮শ মেগাওয়াট। দৈনিক সারাদেশে ২শ ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন থাকলেও সরবরাহ করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১শ ৯৫ মিলিয়ন ঘটফুট।

রাজউক, বুয়েট ও জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর নগর গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ নগরীর জন্য শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ রাস্তা থাকলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৬ থেকে ৮ শতাংশ রাস্তা। ঢাকা মহানগরীতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোকের বসবাস করার কথা থাকলেও সেখানে বাস করছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। ’

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসেব অনুযায়ী, ‘২০০৮ সালে রাজধানীতে নিবন্ধনকৃত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৫৮ হাজার। তবে, বেসরকারি সূত্রমতে এ সংখ্যা আরো বেশি। ’

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন দেড়শ থেকে ১শ ৮০টি নতুন গাড়ি রাজধানীর রাজপথে নামছে। ’

রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন, ‘ঢাকায় যেভাবে সমন্বয়হীনতার সাথে বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠাসহ হু হু করে জনবল বাড়ছে, তাতে করে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ঢাকা পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ১শ ৪৪টি শহরের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বাসযোগ্যতার বিবেচনায় সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। দূষণের কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ঢাকা। যানজট নগরবাসীর জীবন থেকে প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে মূল্যবান সময়। ’

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রুখসানা হাফিজ জানান, ‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়োনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা, স্যুয়ারেজ, ড্রেনেজ সঙ্কট ও মশাসহ বিভিন্ন গভীর সঙ্কটে নিপতিত নগরবাসী। ’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা চললে, আগামী ২০ বছর পর ঢাকায় মানুষ আর বসবাস করতে পারবে না। ’

ঢাকায় রাস্তার স্বল্পতা বিষয়ে বলতে গিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা শহর উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং পূর্ব পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার ব্যাপ্ত। ঢাকায় মোট সড়ক হচ্ছে ২ হাজার ২শ  কিলোমিটার। এর মধ্যে মোড় আছে ১শ ৭১টি। ’

তিনি বলেন, ‘শহরে প্রতিদিন ১ লাখ ৬০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। দৈনিক ৭৫ বার রেলগেট ওঠানামার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার ওপর রয়েছে ৫ লাখ অবৈধ রিকশা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিদিন শতাধিক নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে রাস্তায় নামছে। ’

এছাড়া পরিকল্পিত বাসস্ট্যান্ড ও নির্ধারিত কোনো পার্কিং ব্যবস্থাও নেই ঢাকা শহরে। ভিআইপিদের চলাচলের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালগুলোও সঠিকভাবে নির্মিত হয়নি বলে জানান তিনি।

আইন ভঙ্গের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহিদুল হক বলেন, ‘আইন অমান্য করা যে দেশের সংস্কৃতি, সে দেশে যানজট নিরসন করা কঠিন ব্যাপার। প্রতিবছর ২০ কোটি টাকার ওপর জরিমানা আদায় করা হয়। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে জোর করে আইন মানাতে হয় না। ’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ৬০টি স্থানে ৩ হাজার ট্রাফিক রাতদিন কাজ করে। লাখ লাখ গাড়ি আইন ভঙ্গ করছে। আইন ভাঙার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ড দরকার। অপরদিকে, ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়িচালকরাই। ঢাকায় গাড়ির বৈধ লাইসেন্স আছে ৮০ হাজার, অবৈধ আছে ৫ লাখ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫, অক্টোবর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।