ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ ‘লং’ জার্নি বাই ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এ ‘লং’ জার্নি বাই ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ দ্রুতযান এক্সপ্রেস

দ্রুতযান এক্সপ্রেস থেকে: জার্নিটা শুরু মূলত বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে। ঢাকা টু দিনাজপুরগামী ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়েছে রাত ৮টায়। বিমানবন্দর স্টেশনের অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জন্য সাড়ে ৮টায় মাইকে ঘোষণা এলো, কিছুক্ষণের মধ্যে দ্রুতযান এক্সপ্রেস এক নম্বর প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াবে। 

ঘোষণা মাত্রই যাত্রীদের মধ্যে যেনো যুদ্ধের প্রস্তুতি। যুদ্ধ এজন্য, পরিবার-পরিজন নিয়ে এতো স্বল্প সময়ে ট্রেনে ওঠা আর ছোট-খাট যুদ্ধ করা একই।

এমনটাই বলছিলেন সান্তাহারগামী যুবক রাসেল। আর এর মধ্যেতো মোবাইল ছিনতাইকারীর ভয় থাকেই! ট্রেনে ওঠার সময় পেছন থেকে কেউ একজনের এমন সতর্কবাণী জোরে জোরে বলতেও শোনা গেল।

ধাক্কা-ধাক্কি শেষে নির্দিষ্ট বগিতে উঠে দেখি নিজেদের দু’টো আসন অন্যের দখলে। এ সিট আমাদের দাবি করায় অনেকটা বিরক্ত টাঙ্গাইলগামী ২ যুবক। অনিচ্ছাসত্বেও সিট ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। তবে দাঁড়িয়ে রইলেন আমাদের সিটের গা ঘেঁষে। কৌতুহলী মন জানতে চাইলো তারা টিকিট কেটেছেন কি-না। ভাঙারি ব্যবসায়ী সফিকুলের জবাব- কেটেছি, তবে সিট ছাড়া! বুঝলাম স্ট্যান্ডিং টিকিট। ব্যবসার উদ্দেশে তারা দু’একমাস পরপরই ঢাকায় আসেন, আবার এভাবেই ফেরেন। জনপ্রতি টিকিট ১১৫ টাকা। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এরইমধ্যে ট্রেন জয়দেবপুর স্টেশনের কাছাকাছি।

এ স্টেশনে নামার তোড়জোড় শুরু হলো অনেকের। এর মধ্যে ট্রেনের একজনের মন্তব্য- ‘বিনা ভাড়ার যাত্রী কমতাছে’। জানালেন, এরা প্রতিদিনই এভাবে আসা-যাওয়া করেন। অনেকেই টিকিট কাটেন না। বিশেষ করে টঙ্গী ও জয়দেবপুর পর্যন্ত যাতায়াতকারী যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার।  

এবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন এ ট্রেনের বগিগুলো ঘুরে দেখার পালা। কিন্তু সে আশা খুব বেশি পূর্ণ হলো না। সিট না পাওয়া যাত্রীরা স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে ট্রেনের খালি জায়গায় সুবিধামতো ঘুরেই ইন্তেজাম করে ফেলেছে। বিশেষ করে নারী-শিশুরা ট্রেনের মেঝেতে পেপার বিছিয়ে শুয়ে পড়েছে। সেজন্য এর ফাঁক গলিয়ে এ বগি থেকে ওবগিতে পার হওয়া দুরূহ।

স্ট্যান্ডিং টিকিট হাতে নিয়ে যাত্রীততক্ষণে দ্রুতযান এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু সেতু স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এতো দ্রুত টাঙ্গাইল পার হয়ে যমুনা সেতু! তবে কি দ্রুতযান এক্সপ্রেস দ্রুতই চলছে। ভাবতে ভাবতেই বঙ্গবন্ধু স্টেশনে খানিক বিরতি শেষে যমুনা সেতুর দিকে এগুতে লাগলো ট্রেন। যমুনা নদী দেখামাত্র আনমনে গেয়ে উঠলো মন- ‘যমুনার জল দেখতে কালো স্নান করিতে লাগে ভালো... জলে’। কিন্তু গানের সঙ্গে তো যমুনার জলের কোনো মিল নেই। সেতুর উপর থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে কতটা ঘোলা এ জল! 

নাম দ্রুতযান হলেও বঙ্গবন্ধু সেতুতে এসে কচ্ছপ গতিতে চলতে লাগলো। ৪.৮ কিলোমিটার সেতু পার হতেই ক্লান্ত হয়ে গেল ট্রেন। আবারও খানিকক্ষণের বিরতি সেতুর এপারের স্টেশনে।

এরইমধ্যে ট্রেনের ঐতিহাসিক সেই কাটলেট-পাউরুটি বেশ কয়েকবার আওয়াজ দিয়ে গেলেন ওয়ার্ড বয়রা। সেহেরির মেন্যু জানতে ক্যান্টিনে গিয়ে দায়িত্বরত শহিদুল নামে একজন জানালেন- ১৫০ টাকায় রাতের সেটমেন্যুতে রয়েছে ভাত-মুরগি-সবজি আর ডাল। সেহেরিতে খাওয়ার জন্য অর্ডার দেওয়া হলো।  

রাত তখন দেড়টা, ট্রেন এসে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো আত্রাই স্টেশনে। প্রায় আধা ঘণ্টা! এর মধ্যে গরমে হাঁসফাঁস যাত্রীদের অনেকেই নেমে বাইরের হালকা বাতাসে গা জুড়িয়ে নিচ্ছেন। অ্যাটেন্ডেন্টের কাছে জানতে চাইলাম, এতো লেট করছে কেন। কড়া জবাব দিয়ে বললেন, কোথায় এতো লেট- অন্য ট্রেনকে কি যাওয়ার সুযোগও দিবে না!

জয়পুরহাট স্টেশনে এসে যখন ট্রেন থামে ঠিক তখই আযানের ধ্বনি শোনা গেল। বাইরে মাথা বের করে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি আধমুখে চেয়ে আছে চাঁদ। কিছুক্ষণ তার রূপ উপভোগের চেষ্টা করলাম। মনে পড়ে গেল- বাপ্পা মজুমদারের ‘রাতের ট্রেন’ অ্যালবামের টাইটেল সং- চারিদিকে শুধু নেমেছে আধার, অপলকহীন দৃষ্টি আমার, চলেছে রাতের ট্রেন, নীরবতা ভেঙে দিয়ে।  

রাতের নীরবতা ভেঙে ট্রেন ছুটছে দিনাজপুরের পথে। যদিও আমাদের গন্তব্য কুড়িগ্রাম। তাই পার্বতীপুর স্টেশনে নামলেই সুবিধা হবে। ভোর পৌনে ৫টায় পার্বতীপুর স্টেশনে নামলাম। এখানে পরবর্তী ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা। আরো ঘণ্টাখানেক পরে ছাড়বে ট্রেন। কাউন্টারে তখনো লোকজন আসেনি। তাই টিকিটও নিতে দেরি।  

কিছুক্ষণ পরে অবশ্য মাঝবয়সী এক লোক এসে ৩০ টাকা করে দু’টো অ্যানালগ (মোটা কাগজে সিল মারা) টিকিট দিলেন। সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে করে কাউনিয়া অথবা তিস্তা স্টেশন পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর বাসে চেপে ঐহিত্যবাহী শহর কুড়িগ্রাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এসএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ