ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

লালমনিরহাট-১: তিন দলেই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
লালমনিরহাট-১: তিন দলেই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী  নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার। ছবি: বাংলানিউজ

হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) থেকে:  লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি ও বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।

জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙে আওয়ামী লীগের পর পর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন৷ এমপি হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি৷  

আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চান বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরও রয়েছেন পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেন।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন চান ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান, সাবেক এমপি জয়নুল আবেদীন সরকার, তার ছেলে সাইদুজ্জামান কোয়েল, আইনজীবী সাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারি উজ্জ্বল, হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আকন্দ।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগ করছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য হাতীবান্ধা উপজেলা সভাপতি এমজি মোস্তফা।

দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরও শোনা যাচ্ছে এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা ও  এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মেজর (অব.) খালিদ আখতারের নাম। তবে বছর দুয়েক আগে দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২০০১ সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা বর্তমান এমপি মোতাহার হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলীয় হুইপ। বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি।

এক এগারো পরবর্তী ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর দল তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল। ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন মোতাহার হোসেন৷

এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে বেশ জনপ্রিয় ও সাংগঠনিকভাবে সফল তিনি। আগামী নির্বাচনেও মোতাহার হোসেনকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে চান সাধারণ মানুষ ও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

হাতীবান্ধায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার।  ছবি: বাংলানিউজহাতীবান্ধা বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলম বলেন, হাতীবান্ধা-পাটগ্রামে মোতাহার হোসেনের অবদান গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছেন। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ।

মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা রুহুল আমিন বাবুলই এখন তার প্রধান নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে বাবুলের বিরুদ্ধে রয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিন্ডিকেট করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ এবং জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ। গত সরকারের আমলে বিশৃঙ্খলা-তাণ্ডব সৃষ্টিকারী জামায়াতের নেতাকর্মীরা এখন বাবুলের শেল্টার পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে রাজনীতি করলেও কখনোই দলের কোনো উল্লেখযোগ্য পদ-পদবি পাননি আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী মকবুল হোসেন।

অন্যদিকে হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপি অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত হলেও পার্শ্ববর্তী পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ।

দ্বিধাবিভক্ত হাতীবান্ধা বিএনপির একটি অংশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন ও অন্য অংশ সদস্য সচিব আফজাল হোসেনের নিয়ন্ত্রণে৷ আফজাল মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব হাসান প্রধানের অনুসারী৷ পাটগ্রাম বিএনপির নিয়ন্ত্রণ অবশ্য রাজীব প্রধানের একার হাতেই।

আসনটিতে বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত থাকলেও জেলা পর্যায়ে সবাই জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর অনুসারী।

বড়খাতা বাজারের ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকে এখানে বিএনপির এমপি নির্বাচিত হতে দেখিনি। জাতীয় পাটির দুর্গ ভেঙে দেড় যুগ ধরে এমপি  হচ্ছেন মোতাহার হোসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে মানুষ ভোট দিয়ে এমপি বানাতেন না’।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী এমজি মোস্তফা সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। এলাকায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টির নিজস্ব কিছু ভোট ব্যাংক রয়েছে, যা এরশাদ কেন্দ্রিক। জাতীয় পার্টি কোন জোটে যাবে, সেটিও আগামী নির্বাচনের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পার্টি যে জোটে যাবে, সে জোটের জয় অনেকটা সহজতর হবে বলেই মনে করেন স্থানীয়রা।

এ আসনে আগে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে জামায়াতের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দলটির কিছু ভোট থাকলেও যোগ্য প্রার্থীর সংকট রয়েছে। ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় জামায়াতের তাণ্ডবে পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা এলাকায় মাসব্যাপী জ্বালাও-পোড়াওয়ে ছয়জন নিহত হন। ওই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে জামায়াত সর্ম্পকে ব্যাপক নেতিবাচক ধারণার জন্ম নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ভোটের-কথা এর সর্বশেষ