ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

দিনাজপুর বিএনপিতে অপবাদ ঘোচানোর লড়াই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
দিনাজপুর বিএনপিতে অপবাদ ঘোচানোর লড়াই দিনাজপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়। ছবি: হুসাইন আজাদ

দিনাজপুর থেকে: নৌকার ঘাঁটি তছনছ করে ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসন পকেটে পুরেছিলো বিএনপি। ২০০১ এর অষ্টম সংসদেও এ আসন ধানের শীষেরই ছিলো। কিন্তু ১৯৯৬ সালে হারানো আসন ২০০৮ সালে ফিরে যায় আওয়ামী লীগেরই ঘরে।

অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিমের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে খালেদার জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহান হক (চকলেট আপা)  এর ছিনিয়ে নেওয়া আসনে ফের নৌকার নিশান ওড়ান আব্দুর রহিমেরই পুত্র ইকবালুর রহিম। আর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেও  এল-১০ (লুটেরা-১০) নামে চিহ্নিত চক্রের কর্মকাণ্ডে ব্যাকফুটে চলে যায় বিএনপি।

আর এখন তো ঘর ঠিক রাখাই দায় হয়ে উঠেছে তাদের।  

২০০৬ সালে খুরশীদ জাহান প্রয়াত হওয়ার পর এখানে ২০০৮ এর নির্বাচনে লড়েন বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী শফিউল আলম প্রধান।

আসন হারানোর পাশাপাশি বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে দুর্বল করে দেয় ‘এল-১০’ চক্র। প্রয়াত খুরশীদ জাহানের অনুগত বলে পরিচিত আশরাফুল আলম, মোকলেছুর রহমান রওশন, আবু তাহের আবু, খালেকুজ্জামান বাবু, এ কে এম আজাদসহ ১০ জন ওই চক্রে চিহ্নিত ছিলেন। নিয়োগ বাণিজ্যসহ সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিএনপির একটি পক্ষই ওই চক্রের বিরুদ্ধে কথা বলতো।

সেই চক্রকে পাশ কাটিয়ে বিএনপিকে পুনর্গঠিত করতে গত বছর জেলা শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক করা হয় এ জেড এম রেজওয়ানুল হককে, আর যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয় সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু, আখতারুজ্জামান মিয়া, রেজিনা ইসলাম, বখতিয়ার আহম্মেদ কচি, মোকারম হোসেনসহ বেশ ক’জনকে। এই কমিটি গঠনের পর বিক্ষোভ হয়। তাতে দু’একজন ‘জনবিচ্ছিন্ন ও অরাজনৈতিক’ নেতার পদ বাতিল এবং এল-১০ চক্রের কাউকে কাউকে অন্তর্ভুক্তির দাবি তোলা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম।  ছবি: হুসাইন আজাদ

বিএনপির বর্তমান জেলা ও সদর আসনের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দেয়ার দাবি আদায়ে মনোযোগ দিলেও দলের একটি পক্ষ খুরশীদ জাহানের ছেলে শাহরিয়ার আখতার জাহান ডনকে সামনে আনতে চায়, নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যবহারের জন্য। দলে এই বিভেদ রাজনৈতিক বিরোধীদের সুবিধা দেবে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতে এই বিভেদের অবসান ঘটানোর তাগিদ অনুভব করলেও দায়িত্বশীল নেতারা সরাসরি কিছু বলছেন না।   তারা কেবল বলছেন, দলকে ‘সুসংগঠিত’ করার কাজে মনোযোগী বিএনপি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সদর আসনসহ দিনাজপুরের আসনগুলো ধানের শীষকে উপহার দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

দিনাজপুর শহরের স্টেশন রোডে দলের জেলা শাখার কার্যালয়ের ছাদে দাঁড়িয়ে আলাপ হচ্ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তার কথা, বিএনপি দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদারে দল সুসংগঠিত করার কাজেই ব্যস্ত এখন। হাইকমান্ড এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে বড় দল হিসেবে বিএনপি সবসময় নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। ’

সদর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী এ রাজনীতিক মনে করেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রার্থী না থাকায় আসন খোয়ালেও গত দুই দফার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর বিপুল ভোটে জয় ধানের শীষের মাঠে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বখতিয়ার আহমেদ কচিরও বক্তব্যেও একই সুর। তিনি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে মাঠে নামতে বেশি সময় লাগবে না।

দিনাজপুর-৩ আসনে ধানের শীষকে জেতাতে খালেদা জিয়াকেই প্রার্থী হিসেবে পছন্দের কথা জানান কচি।

বিএনপিকে সবচেয়ে বড় সতর্কতা দেন সদরের শেখপুরা ইউনিয়নের মাধবপুরের আব্দুল আলী ও ভাটিনার আখতার ফারুক। তারা পরামর্শ দেন, প্রার্থিতার ব্যাপারে যা-ই চিন্তা করুক, বিএনপি যেন নির্বাচন বর্জনের মতো ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়, অন্তত জনগণের কাছে ফেরার স্বার্থে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ভোটের-কথা এর সর্বশেষ