ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করি : রেজওয়ানা খান

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২০
প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করি : রেজওয়ানা খান রেজওয়ানা খান

রেজওয়ানা খান। ধ্যান-জ্ঞান, পেশা বা ব্যবসা সবই আইটি সেক্টর ঘিরে। পড়াশোনাও করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে। আইসিটি সেক্টরে পরিচিত হয়ে উঠেছেন টেক আইকন লেডি হিসেবে। পরিশ্রমী, মেধাবী ছুটে চলা রেজওয়ানা খান শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, তিনি উদ্যোক্তা, পরামর্শক এবং বিনিয়োগকারী। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলানিউজের পাঠকদের একজন নারী হিসেবে এগিয়ে চলার গল্প জানালেন স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানা খান। 

ব্যবসায়ী হওয়ার চিন্তা যেভাবে এলো
রেজওয়ানা খান :
বাবাকে দেখেই ব্যবসায়ী হওয়ার চিন্তা আসে মাথায়। বাবার পথেই হাঁটবো এমন পরিকল্পনা ছিল সব সময়।

সত্যিই, আমি বাবার দেখানো পথেই হাঁটছি। প্রতিটি মেয়ের কাছে বাবা সুপার হিরো। আমিও এর ব্যতিক্রম নই, আমার বাবা আইসিটি সেক্টরের অনেক প্রবীণ এবং স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। আলী আকবর খান এক নামেই সবাই চিনতো। স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যার হাতেই প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের যে কয়েকজন পথিকৃৎ আইটি ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। বাবাকে দেখেই শেখা বলতে পারেন। কিন্তু আমি পরিশ্রম করেছি। এই সেক্টরে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। একদিনে হয়নি, সময় লেগেছে। পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠান হলেও ২০০২ সালে খণ্ডকালীন কাজ শুরু করি এরপর ২০০৪ সাল থেকে পুরো দমে কাজ শুরু, দুই বছর ১ মাস প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল, ১ বছর ৪ মাস তিনি প্রতিষ্ঠানের বিজনেস অ্যান্ড সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করি। এরপরই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও পদে যুক্ত হই। স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের সঙ্গে আমি এভাবেই জড়িয়ে যাই। সময়ে প্রয়োজনে আমাকে ব্যবসার হাল ধরতে হয়েছে। তাই বলতে পারেন বাবার প্রতিষ্ঠান থেকেই ব্যবসাতে হাতেখড়ি।

কাজ করতে গিয়ে কি ধরনের বাধা ছিল?
রেজওয়ানা খান:
কাজ করতে গেলে বাধা তো আসবেই। বাধা পেয়েছি, তা অতিক্রমও করেছি। অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বাবা-মা। পরবর্তীতে স্বামী-সন্তান। তবে এরপরেও যদি বলি তাহলে, নিজের ধ্যান-জ্ঞান। আমি এটাই বলতে চাই আমি সব সময় কাজকে প্রফেশনালি নিয়েছি। নিজের যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ক্যারিয়ার জীবনের শুরু থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা নিয়েই ছিল আমার পৃথিবী। সফটওয়্যার টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষা নিয়েছি, এ সেক্টরে ভালো ভালো বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি, নিজের প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছি দক্ষ কর্মী বাহিনী। স্বপ্ন দেখি দেশের সুপার টেকনোলজি নিয়ে। স্মার্ট টেকনোলজি নিয়ে, ভবিষ্যতের ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে।  


নারী হিসেবে চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল কি?
রেজওয়ানা খান :
প্রতিমূহুর্তে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করি। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ ছিল। পুরুষরা যে আইডিয়া পায়, যে ধরনের সুবিধা পায় নারীরা তার থেকে কম পায়। কারণ নারীদের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা থাকে। প্রথমদিকে বেশ চ্যালেঞ্জ ছিল আমার প্রতিটি কাজে। এখনও আছে তবে তুলনামূলক কম।  


পুরুষরা নারীদের বস হিসেবে শুরুতে কিভাবে নিয়েছে বা অন্য নারীরাও?
রেজওয়ানা খান :
আসলে বিষয়টা একটু অন্যরকম। আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে আমি কম বয়সে বস হয়েছি। হ্যাঁ, মেনে নেয়া একটু ঝামেলা কিন্তু নিজের যোগ্যতা থাকতে হবে। আমি সম্ভবত আমার জায়গা থেকে পেরেছি তা অর্জন করতে। তার কারণেই একটি সুন্দর টিম তৈরি হয়েছে আমার প্রতিষ্ঠানে।   

রেজওয়ানা খাননতুনরা কাজ করতে চাইলে কীভাবে শুরু করবে?
রেজওয়ানা খান :
দরকার দক্ষ কর্মী বাহিনী। আমাদের আইসিটি সেক্টরে তার অনেক অভাব। নতুনরা কাজ শুরু করলে তাদের দরকার মনোযোগ দিয়ে কাজ শেখা। তবে আইসিটি সেক্টরে অনেকেই খুব ভালো করছে। নতুন স্টার্টাপ, নতুন কর্মী, নতুন প্রজন্ম আইডিয়া কিংবা অন্য বিষয়গুলোতে অনেক এগিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, তাদের হাতেই তৈরি হবে নতুন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সময় পরিবর্তন হচ্ছে, প্রযুক্তিও পরিবর্তন হয়েছে। সময়টা চতুর্থ শিল্প বিল্পবের। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না ফোরর্থ আইআরের যুগে নতুনরা কত এগিয়ে।  

আপনার কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে?
রেজওয়ানা খান :
আইটি ব্যবসায়ী হলেও নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা এবং আগ্রহ আমার সব সময়। এখনও রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজের ওপর বেশি সময় দিচ্ছি। এছাড়াও ই-গর্ভমেন্স, এইচআর রির্সোস এবং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেনট প্রজেক্ট নিয়েও কাজ করি আমি। সরকারি বেশ কিছু প্রজেক্ট, মন্ত্রণালয়, বহুজাতিক কোম্পানি, দাতাসংস্থা, বৈদেশিক কোম্পানির সঙ্গেও কথা বলা হয়। পাশাপাশি আইসিটি সেক্টরে পরামর্শক হিসেবেও আমি পরিচিত। আসলে কাজের পরিধি অনেকে বেড়েছে। নিজের অফিসের কাজ ছাড়াও অনেকে কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি আমি। বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। বেসিস, ই-ক্যাবের সদস্য হিসেবে সেই সংগঠনগুলোকেও সময় দেওয়া হয়।  

আইটি সেক্টরে নারী এবং আপনার কাজ?
রেজওয়ানা খান : আইটি সেক্টরে নারীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু আইসিটি সেক্টর নয় সব সেক্টরেই একই অবস্থা। আর কাজের কথা বললে বলবো, আইসিটি ডিভিশনকে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এবং সরকারকে সার্পোট দিচ্ছি দিনের পর দিন। টেকনোলজি কীভাবে উন্নত করা যায়, কৌশলগত পরিকল্পনার পরামর্শ এবং বৃদ্ধি, ব্যবসার দলগঠন, ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ সংক্রান্ত কাজ করছি। পরামর্শ দেই কর্পোরেট বিজনেস পর্যালোচনা বিষয়ক, ব্যবসার প্ল্যান সংক্রান্ত সার্পোট দেবার চেষ্টা করি।  

আমার ইচ্ছা ছিল আর্কেটেকচারে পড়ার কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। পড়াশোনাও আইসিটি সেক্টরকে কেন্দ্র করে। আর পড়ার সময়ই চিন্তা করি প্রযুক্তিখাত নিয়ে কাজ করব। সেভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছি প্রতিনিয়ত। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স (সিএসই) ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেই ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে সফটওয়্যার সিস্টেম ডিগ্রি নিয়েছি। সেখানকার দ্য ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে উচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর ইউনিভার্সিটি অব সাউর্দান কুইন্সল্যান্ড থেকে ইমপাওয়ার উইম্যান থ্রট ইন্টারপ্রেনিয়ারশিপ অ্যান্ড বিজনেসে ফেলোশিপ অর্জন করেছি।

আপনার প্রতিষ্ঠানের কথা
রেজওয়ানা খান : ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৮ সালে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস। ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে আইসিটি সেক্টরে কাজ করছে আমাদের কোম্পানি। আর আমাদের কোম্পানির মূল কাজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন ইমপ্লিমেন্টটেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনসালটিং। আমরা যে সব লেভেলের কোম্পানির কনসালটিং করি এসব প্রজেক্টের সাইজ এবং মূল্যমান কয়েক মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির কনসালটিং কাজ করি। পাশাপাশি একটা এইচআর রিসোর্চ ডেভেলপমেন্ট সেক্টর আছে। বাংলাদেশে এটা ট্রেনিং সেক্টর হিসেবে পরিচিত। এ সেক্টর থেকে ইতোমধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি ছেলে-মেয়ে আইটির বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আমরা সাধারণত আমেরিকার বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাজগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেই। কনসালটিংয়ের জন্য একটা বড় টিম রয়েছে।  

যেমন স্বপ্ন দেখেন
রেজওয়ানা খান : আমি স্বপ্ন দেখি দেশে সুপার টেকনোলজি নিয়ে। সেখানে দেশ এগিয়ে যাবে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের ছেলেমেয়েদের উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। যাতে তারা দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলে কাজ করতে পারে এবং সঠিক মূল্যায়ন পায়। আমি বরাবরই এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করি। দেশের ছেলেমেয়েদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার জন্য আহ্বান করি সব সময়। কারণ আমি আইসিটি সেক্টরকে অসম্ভব ভালোবাসি বলেই এই সেক্টরে কাজ করি। আমি মনে কি এই সেক্টর আমার পরিবার। বাবার ব্যবসা যখন শুরু করি তখনো আমাকে অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আমাদের ব্যবসার অনেক পরিবর্তন এনেছি দিনের পর দিন।  

পেশা এবং সংসার জীবন?
রেজওয়ানা খান :
স্বামী আর এক মেয়ে নিয়ে ছোট্ট একটি সংসার আমার। পাশাপাশি অনেক সময় নিয়ে অফিস করা। তারপরও আমি মা, আমি স্ত্রী।  সারাদিনের ব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে যে সময় পাই সেটিই আমার অন্য ধরনের পাওয়া।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০
এসআইএস 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।