ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

ঈদে পাখির উৎসব, চায়ের সবুজ আর পর্যটনে আমন্ত্রণ

ফেরদৌস আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১১
ঈদে পাখির উৎসব, চায়ের সবুজ আর পর্যটনে আমন্ত্রণ

শুরুতেই ঈদে আমন্ত্রণ; পাহাড়, টিলা, নদী, হাওর-বাওর আর বিলের ঝিলে পাখি বাড়িতে। জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী পাড়া, চা কণ্যার ভাস্কর্য, মাধবপুর ও ক্যামেলিয়া লেক, হাকালুকি হাওর ও বাইক্কা বিলে।

আরো আমন্ত্রণ হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র:) মাজার, রাজা চন্দ্র নারায়ন স্মৃতি বিজড়িত ও চা এর সবুজ গালিচায়, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে এবং আগরের সুগন্ধীতে পর্যটন নগরীতে।

মৌলভীবাজার জেলা। মনু, ধলাই, ফানাই, বরাক, কন্টিনালা নদীর তীরে চিমচাম অট্টালিকার শহর। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এ জেলার বিভিন্ন হাওরে যেমন অতিথি পাখির আগমন ঘটে, তেমনি দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও ভিড় জমায়। অতিথি পাখির কলকাকলিতে পাখির মেলা বসে।

বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, সুজানগরে আগর বাগান, বরহুম মিয়ার পাখিবাড়ি, রাজনগরের কমলা রাণীর দিঘি, পাঁচগাঁওয়ের লাল দূর্গা, আরক আলীর পাখিবাড়ি, কমলগঞ্জের মাধবপুর ও ক্যামেলিয়া লেক, মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র, মাগুরছড়া পুঞ্জি, কুলাউড়ার মুরইছড়া ইকোপার্ক, পৃথ্বিমপাশা নবাববাড়ি, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই), নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, ঠাকুর মিয়ার পাখিবাড়ি, গ্যাস ট্রান্সমিশন প্ল্যান্ট, মণিপুরী পল্লী, খাসিয়াপল্ল¬ী, পানপুঞ্জি, সদরের ঐতিহাসিক খোজার মসজিদ, দিল্লীর পীর সাহেবের বাড়ি, বর্ষিজুরা ইকোপার্ক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, মনু ব্যারেজ, কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ এবং সবক’টি উপজেলা মিলে ৯৮টি চা বাগান।

ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে তালিকাভুক্ত লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট বন ও বণ্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। এটি সংরক্ষিত এলাকা। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের উভয় উপজেলা সদরের মধ্যে বিদ্যমান চিরসবুজ বনের উদ্ভিদ, গুল্ম ও জীববৈচিত্র্য প্রকৃতিপ্রেমিক, পর্যটক, গবেষক, পাখি পর্যবেক্ষক ও পরিবেশবিদদের অন্যতম আকর্ষণ। এই বনে ঘুরতে গেলে নানা প্রজাতির গাছপালার সঙ্গে দেখা মিলবে। দেখা পাওয়া যাবে উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, লেজখাটো বানর, লাল বানর, হনুমান, কাঠবিড়ালী, নানা প্রজাতির সাপ ও প্রায় ২শ’ প্রজাতির পাখির। বছর দুয়েক ধরে এ বনে নি:সর্গ সহায়তা প্রকল্পের অধীনে নানা প্রজাতির পশুপাখি অবমুক্ত করা হয়েছে।

রয়েছে পাকড়া ধনেশ, ভীমরাজ, বন মোরগ-মুরগী, শ্যামা, হরিয়াল, টিয়া, মায়া হরিণ, সজারু, অজগর, আলতাপরি, সবুজ ঘুঘু, কালা মাথুরা, দুর্লভ প্রজাতির রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। নি:সর্গ সহায়তা প্রকল্পের দক্ষ গাইড ঘুরে দেখাবে লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরের মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, পানের জুম। পুঞ্জিগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পুঞ্জির বাসিন্দাদের স্বতন্ত্র জীবনধারা, পুঞ্জির আনারস, লেবু ও পান চাষের ধরন এগুলো ভিন্ন স্বাদ এনে দেবে ভ্রমণে।

শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে দেখতে পাবেন নানা জাতের পাখি। আরো আছে পাহাড়ি ঝরনা। এই অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মধ্যেই দেখতে পাবেন আনারস ও লেবু বাগান। জারা লেবু, কাগজি লেবু, শরবতি লেবু, মিষ্টি লেবুসহ নানা জাতের লেবুর সঙ্গে পরিচয় ঘটবে আপনার।

মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের পশ্চিমাঞ্চলের হাইল হাওরে, বিলের জলে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। নৌকায় বেড়ানোর সময় যদি সূর্যাস্তের সময় হয় তবে ভ্রমণে আলাদা মাত্রা যোগ হবে। হাইল হাওরে এখন অতিথি পাখির রীতিমতো মেলা বসে।

দেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্রটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চা বাগানঘেরা। এখানে গেলে দেখা যাবেন নতুন প্রজাতির হাইব্রিড চা ও কফি নিয়ে গবেষণা বাগান। বাংলাদেশ টি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই)’র রেস্ট হাউসে রাত যাপনের আয়োজনও করে নিতে পারেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে।

কাছেই কালিঘাট রোডে ও মণিপুরীপাড়ায় রামনগর গ্রামে নীলকণ্ঠের চা স্টলে গেলে পাবেন এক কাপে পাঁচ রঙের বা সাত রঙের চা পানের সুযোগ। দাম একটু বেশি হলেও স্বাদে অতুলনীয় এই চা আপনার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে স্মৃতি হয়েই থাকবে।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মাঝামাঝি স্থানে মাধবপুর চা বাগানে মাধবপুর লেক ও শমসেরনগরের ক্যামেলিয়া লেক,  ডান দিকে জঙ্গল, বাঁয়ে চা বাগান আর মাঝে দু’টি টিলার মাঝখানে নীল শাপলা ফোটা স্বচ্ছ জলের প্রাকৃতিক সমাহার।

অতিথি পাখি আর হিজল করচের বন, নয়নাভিরাম জলাশয়, দিগন্তছোঁয়া বিশাল হাকালুকি হাওর আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা এলাকার প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর আয়তনের এ হাওরে রয়েছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের সমাহার। এখানে শীতে অতিথি পাখির মেলা ও নানা প্রজাতির দেশি মাছের দেখা মিলবে অনায়াসে।

মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী পাথারিয়া পাহাড়ের বুক চিঁরে নেমে আসা প্রাকৃতিক ঝরনাধারা মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। পাহাড়ি টিলা বেয়ে আসা ঝরনাধারা প্রায় ২শ’ ফুট উঁচু থেকে নিচে আঁছড়ে পড়ছে। টিলাঘেরা এ মাধবকুন্ডে একটি মোটেল রয়েছে যা আপনাকে আতিথেয়তায় ভরে দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।

এর পাশেই রয়েছে পাথারিয়া পাহাড় এবং মুরইছড়া ইকোপার্ক, খাসিয়াপুঞ্জি, পানপুঞ্জি ও কমলার বাগান। তবে কমলার বাগান সবচেয়ে বেশি জুরি উপজেলার শুকনাছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল এলাকায়। এ এলাকায়ই রয়েছে মুরইছড়া ইকোপার্ক।  

কমলগঞ্জের ইতিহাস খ্যাত ধলই সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত লইয়ারকুল গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মৃত ঠাকুর মিয়ার বাড়িটি প্রায় সারা বছরই থাকে পাখিতে ভরপুর। বালিজুড়ী, কাঁনিবক, সাদাবক, লালবক এবং পানকৌড়ি অবস্থানে বাড়িটি ‘পাখিবাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এছাড়াও রয়েছে বড়লেখার বরহুম মিয়ার পাখিবাড়ি এবং রাজনগরের আরক আলীর পাখিবাড়ি।

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা বা সেবাশ্রম। এখানে গেলে সাদা বাঘ, বিরল প্রজাতির অজগর সাপ, মায়া হরিণ, ভল্লুক, কালেম পাখি, সাদা বানর, চশমাপরা হনুমানসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

মৌলভীবাজার জেলার প্রবেশ মুখে সাতগাঁও চা বাগানের আলিয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির সড়কের পাশে সাতগাঁও চা বাগান কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেছেন চা কন্যার ভাষ্কর্যটি। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল প্রবেশ পথে মৌলভীবাজার জেলার সীমানায় আপনাকে স্বাগত জানাবে এই চা কন্যা। সাতগাঁও চা বাগানের সৌজন্যে শিল্পী সঞ্জীত রায় তৈরী নির্মাণ করেছেন এই ভাষ্কর্যটি।

এতো কথা জানার পর মৌলিভীবাজার ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাটাতো পুরন করতেই হয়। আর দেরি কেন? আসছে ঈদের ছুটিটাই কাজে লাগান।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।