ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

নবীগঞ্জের ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী প্রতিবেদন পেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৮
নবীগঞ্জের ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী প্রতিবেদন পেশ আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া, মো. জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মো. জামাল উদ্দিন ও শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গজানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া (৬৬)-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

রোববার (১৩ মে) বিচারপতি চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশন। প্রতিবেদনটি আমলে নেওয়া হবে কি-না সে বিষয়ে শুনানির জন্য ৪ জুন দিন ঠিক করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।

এর আগে গত ৮ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার‌্যালয়ে ওই তিন জনের বিষয়ে এক  সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গোলাপ ছাড়া এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন মো. জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মো. জামাল উদ্দিন (৬৫) ও শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ (৭০)। তিন আসামিদের মধ্যে গোলাপ মিয়াকে গত বছরের ১২ এপ্রিল এবং ২৩ নভেম্বর বিএনপি সমর্থক জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামায়াত সমর্থক গিয়াস উদ্দিন লন্ডনে পলাতক।

তদন্ত সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির‌্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনকে হত্যা, ৬ নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নির‌্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

পাঁচটি অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলার মোট সাক্ষী ২৩ জন।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে,  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর‌্যন্ত আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো, জামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০/২৫ জন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জ থানার মামদপুর হিন্দু পাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিন বাবু রায়কে হত্যা করে। এদিন আসামিরা গৌরী রাণীসহ মোট ১০ জনকে আটক ও অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির‌্যাতন করে। এদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী চার জনকে হত্যা করে। এ অভিযানে দুই নারী পাকিস্তানি আর্মিরা ধর্ষণ করে। রাজাকাররা লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ভোর ৫টায় আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের কান্দিরগাও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দরছ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তারা দরছ মিয়ার বসতঘর পুড়িয়ে দেয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে হিন্দু পাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিরাই নমশুদ্রসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিন জনকে অপহরণ করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির‌্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে আসামি শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ অন্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের বনগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে জহুর উদ্দিন, জনূ উল্লাহ ও দেওয়ান মামুন চৌধুরীকে অপহরণ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির‌্যাতন করে। পরে অর্থের বিনিময়ে জহুর উদ্দিন ও দেওয়ান মামুন চৌধুরী মুক্তি পেলেও জনূ উল্লাহকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযানের সময় জহুর উদ্দিনের মা ও এক বোন পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের লোগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ধর্ষণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৮
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।