ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

যশোর রোডের গাছ কাটায় ৬ মাসের স্থিতাবস্থা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
যশোর রোডের গাছ কাটায় ৬ মাসের স্থিতাবস্থা যশোর রোডের শতবর্ষী গাছের সারি/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: যশোর রোডের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী গাছ কাটায় ছয় মাসের স্থিতাবস্থার (গাছ যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে) আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, এ আদেশের ফলে এখন আর গাছ কাটা ‍যাবে না।

মনজিল মোরসেদ আরও জানান, রুলে যশোর রোডের গাছ রক্ষার পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং গাছ রক্ষা করে চার লেন সড়কের জন্য সংশোধিত পরিকল্পনা করার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

দুই সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, যশোরের জেলা প্রশাসক, বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী মো. সরওয়ার আহাদ চৌধুরী।

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যশোর শহর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কিমি। এই রাস্তার দু’পাশে সড়ক ও জনপথের হিসাব অনুযায়ী গাছ রয়েছে ২৩শ’ ১২টি। এরমধ্যে দুইশোর বেশি গাছ রয়েছে যেগুলোর বয়স ১৭০ বছরের বেশি। গাছগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগঘন স্মৃতি। তাই গাছগুলো একেবারে কেটে নিশ্চিহ্ন করে রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। ’

‘এই রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পটি পাস হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলছিলেন যেভাবে প্রকল্পটি পাস হয়েছে ঠিক সেভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে গাছ কাটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলছিলেন রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য টেন্ডার অনুমোদনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। গত ৬ জানুয়ারি শনিবার যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয় এ গাছ কাটার বিষয়ে। ’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মহাসড়কটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশ শাসন আমলে যশোর শহরে একটি বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে সে সময় এই বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য যশোর রোড আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়। সে সময় অনেক গাছ লাগানো হয় রাস্তার দু’পাশে। বর্তমানে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁর পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই যশোর রোড দিয়েই লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামে একটি কবিতাও লেখেন। পরবর্তীতে গায়ক বব ডিলান এবং অন্যদের সহায়তায় সেই কবিতাকে তিনি গানেও রূপ দিয়েছিলেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮/আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা
ইএস/এএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।