ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আপিল করবেন সাত খুনের দণ্ডিত আসামিরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
আপিল করবেন সাত খুনের দণ্ডিত আসামিরা আপিল করবেন প্রধান আসামি নূর হোসেনও (ফাইল ফটো)

ঢাকা: বিচারিক আদালতের পর উচ্চ আদালতেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ কয়েকজন আসামির আইনজীবী।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদে প্রশ্নের জবাবে আপিল করার কথা জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
 
নূর হোসেনের আইনজীবীদের একজন এস এম আর এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়েছি।

। নূর হোসেন ন্যায়বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবো’।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি তারেক সাঈদ মোহাম্মদের একজন আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট নই আমরা। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো’।

এদিকে রায় শুনতে হাইকোর্টে আসা নূর হোসেনের ভাই নূরউদ্দিনও রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি তার ভাইয়ের এ পরিণতির জন্য মিডিয়াকে দায়ী করেছেন।

নূরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিডিয়ার চাপে এ মামলার বিচার তাড়াতাড়ি এগিয়েছে। দ্রুত কার্যক্রম চলার কারণে আমাদের আইনজীবীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি’।

বিকেলে দেওয়া সাত খুনের দুই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে প্রধান ৪ আসামিসহ ১৫ জনের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে অন্য ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ মামলার মোট ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডও বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।  

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা  প্রধান ৪ আসামি হচ্ছেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।

অন্য যে ১১ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রয়েছে, তারা হলেন- ৠাবের চাকরিচ্যুত সাবেক হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী,  কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরীফ ও তাজুল ইসলাম পলাতক।

অন্যদিকে সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি হচ্ছেন- ৠাবের চাকরিচ্যুত সাবেক সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর ও সার্জেন্ট এনামুল কবির এবং নূর হোসেনের ৯ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী, জামাল উদ্দিন সরদার, ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান। তাদের মধ্যে সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান পলাতক।

বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানের ১০ বছর করে এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিন ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে উচ্চ আদালতে। তাদের মধ্যে মোখলেসুর রহমান ও কামাল হোসেন পলাতক।

সব মিলিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ২৭ জন আর পলাতক ৮ জন।

২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেন। পলাতক অন্য ৬ আসামি আপিল করেননি। আপিলগুলোর আংশিক মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।

সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করে গত ১৬ জানুয়ারি নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। ৩৫ জন আসামির বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।