ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাচ্ছি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
‘বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাচ্ছি’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: ‘বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাচ্ছি’ বলে মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘সংবিধানের  সংশোধনীর মধ্য দিয়ে মূল সংবিধানের  ৯৬ অনুচ্ছেদ ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল’।

নিজ কার্যালয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বিষয়ে ব্রিফিংকালে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘সংসদ আইন প্রণয়ন করবে।

এবং সংবিধান হলো সবার ওপরে। যে কথাটি আমি বারে বারে বলেছি- সংবিধানের আদি কোনো অনুচ্ছেদ ভালো কিংবা মন্দ- সে সম্পর্কে বলতে পারবেন না বিচার বিভাগ। সেখানে হাতও দিতে পারবেন না। আদালত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন তখনই, যখন সংবিধান সংশোধন করা হয়’।

‘এবং আমি এ কথাও বারে বারে বলেছি, যে আইন হবে, সে আইনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যতো রকম কিছু সেফগার্ড থাকা দরকার, সেগুলো থাকবে। এবং সে আইনটিকে অসাংবিধানিক, ভালো, মন্দ- সব বিচার করার ক্ষমতা আদালতের থাকবে’।

‘কিন্তু মূল সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদকে কোনো আদালত বিচার করার ক্ষমতা রাখেন না’ বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিভিউ রায়ে ছিল- মার্শাল ল’তে জারি করা সমস্ত ফরমান আইনগুলো অবৈধ। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৈধতা দেওয়া হলো। তারপর আর না’।

গত ০১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ০৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে মূল রায়টি দিয়েছিলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সর্বোচ্চ রায়ের ফলে প্রথম দফার মহাজোট সরকারের আমলে আনা সংশোধনীটি বাতিল হয়ে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চলে এসেছে।

রায়ের পরে গত ০৬ আগস্ট প্রথম সভাও করেছেন পুনর্বহাল হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। আইন করা হবে কি-না- এটি সংসদের বিষয় আর বিচারপতিরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বৈঠকে বসেছেন- সেটি তাদের ব্যাপার’।

এ অবস্থায় জুডিশিয়াল কাউন্সিল যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, সেটি যুক্তিযুক্ত কি-না?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়েও আমি কোনো মন্তব্য করবো না। দেখি কি হয়’।

বুধবার (০৯ আগস্ট) ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সংসদকে অপরিপক্ক বলে সমালোচনা করা হয়েছে। এটি তো ঠিক নয়, উচিৎ নয়’ বলে মন্তব্য করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইন কমিশনের ওই বক্তব্যকে ‘আদালত অবমাননাকর’ উল্লেখ করে আদালত অবমাননার রুল জারির কথা বলেন বিএনপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবীরা।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত আজ সকাল নয়টায় যখন বসেছিলেন, তখন বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকও ছিলেন, তারা কতোগুলো সংবাদপত্র নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিষয়ে যেসব মন্তব্য দিয়েছেন, সেগুলোর বিষয়ে তারা বলতে চেয়েছেন- এতে আদালত অবমাননা হয়েছে’।

‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কেউ যেন কোনো রাজনীতি না করেন। কেউ যেন এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করেন। সবাইকে তিনি বলেছেন, রায় দিয়েছেন- এটি আদালতের বিষয়। যারা রাজনীতি করবেন- এটি তাদের বিষয় হতে পারে না’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।