ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘বিচারক অপসারণে সিদ্ধান্ত জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
‘বিচারক অপসারণে সিদ্ধান্ত জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ ব্যারিস্টার এম আমীর–উল ইসলাম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাহলে জুডিশিয়ারির তদন্ত হবে এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে মতামত দিয়েছেন ব্যারিস্টার এম আমীর–উল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৭ম দিনের মতো এ আপিল শুনানি চলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে।

আগামী রোববার (২৮ মে) বেলা সাড়ে এগারটা পর্যন্ত আপিল শুনানি মুলতবি করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

ব্যারিস্টার এম আমীর–উল ইসলাম বুধবার (২৪ মে) থেকে মতামত দিচ্ছেন। তার বক্তব্য অসমাপ্ত রয়েছে। বৃহস্পতিবার অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত উপস্থাপন শেষ করেছেন টিএইচ খান ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ।

ব্যারিস্টার এম আমীর–উল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাহলে জুডিশিয়ারির তদন্ত হবে এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখানে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব সমস্ত আইন-কানুন রয়েছে, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপ বা কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোতে যে সমস্ত রুলস্‌ দেখা যাচ্ছে, সব জায়গায় এখন জুডিশিয়ারি যে কম্পিটেন্স এবং তাদের যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং তাদের যদি কোনো ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের প্রয়োজন হয়, ওইটাও তারা নিজেরাই করবেন’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানেও সে রকম একটা পদ্ধতি চালু আছে, যা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সুতরাং, তারাই এটি বিবেচনা করবেন। পার্লামেন্টারি রিমুভাল কোনো দেশেই কার্যকর হতে পারছে না, ভারত, শ্রীলংকা, মালোয়েশিয়াতেও। সেখানে আরও বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয় এ নিয়ে’।  

সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘সারা দুনিয়া জুড়ে আমরা যে অবস্থা দেখছি, তাতে বিচারকদের অসদাচারণের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটি জুডিশিয়ারি ঠিক করবেন। সেটিই হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের যে সমস্ত অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলো আমি তুলে ধরেছি। এখন এটির বিবেচনার বিষয় আদালতের’।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। এখন মতামত দেবেন আদালত। বেশিরভাগ দেশই সংসদ থেকে ফিরে এসেছে। তারা জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছে। যদি কোনো জাজ ভুল করেন, তার বিচার জুডিশিয়ারিই করবেন’।

‘বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়নের সময় আপনারা এটি সংসদের হাতে কেন দিয়েছিলেন’- এমন প্রশ্নের জবাবে এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, তখনতো আমরা জুডিশিয়ারি গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের প্রধান বিচারপতি কে হবেন সেটাও বঙ্গবন্ধু ফেরার পর ১০ জানুয়ারি, ১১ জানুয়ারি আমরা প্রধান বিচারপতি খুঁজছি। কাউকে তো শপথ নিতে হবে’।

‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে সায়েমকে নিয়ে এলাম। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি তো সামরিক শাসকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন। সময়ের কারণে সে সময়ে আমরা জুডিশিয়ারি গড়তে পারিনি। তখন আপাতত সংসদের হাতে দিয়েছি। কেননা, তখন সংসদ ছাড়া আর কিছু গড়ে ওঠেনি’।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির অন্য ৯ জন হলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম আই ফারুকী, এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ। তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী আগেও লিখিত মতামত জমা দিয়েছেন।

গত ০৮ মে থেকে বুধবার পর্যন্ত আপিল শুনানির ৬ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন আপিল আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে মনজিল মোরসেদ। শুরুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান মুরাদ রেজা।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

গত ০৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।

মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭,
ইএস/এএসআর

**
‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়াই শ্রেয়’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।