ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘জুডিশিয়ারি শতগুণ বেটার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
‘জুডিশিয়ারি শতগুণ বেটার’

ঢাকা: ‘দেশের যেকোনো ইনস্টিটিউশনের চেয়ে জুডিশিয়ারি শতগুণ বেটার’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (২৪ মে) সকাল ০৯টা ০৮ মিনিট থেকে বেলা সোয়া এগারটা পর্যন্ত আপিল শুনানির ষষ্ঠ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এরপর থেকে রিট আবেদনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন মনজিল মোরসেদ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানি চলছে।

আপিল শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনার কোর্ট সম্পর্কে একটা গণশুনানি নেন, বিচারপ্রার্থী জনগণের, কোর্টে যা হচ্ছে তা নিয়ে’।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে জুডিশিয়ারির প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ পার্সেন্ট প্লাস। চৌকি আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। আমি বাঁশখালীর চৌকি আদালতে গিয়েছি। ওখানে যতোজন বিচারপ্রার্থী আসেন, ডিসি অফিসেও এতো আসে না। বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে জুডিশিয়ারি ১০০ গুণ বেটার। আপনারাতো প্রধান বিচারপতিকে পঙ্গু করে রাখার......’।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আই এম নট টোটাল হ্যাপি’।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি চেয়েছেন, যাদের লেখাপড়া আছে, যোগ্যতা আছে, তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে। কিন্তু দেড় বছরেও নিয়োগ হয়নি। আপনারা যেটা চাচ্ছেন, আপনিও জানেন, সবাই জানেন’।

রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মার্শাল ল’ তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। এটি সংবিধানের বড় লজ্জা। সেখানে রিলিজিয়াস (রাষ্ট্রধর্ম) বিষয়টিও আছে’।

তখন আদালত বলেন, ‘ওখানে (রিলিজিয়াস) কম্প্রোমাইজ করলে এখানে নয় কেন?’।
আপিল শুনানির প্রথম দু’দিনে গত ০৮ ও ০৯ মে প্রথম দু’দিনে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান এবং ২১ ও ২২ মে পরের দু’দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। মঙ্গলবার (২৩ মে) থেকে দু’দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু বা আইনি সহায়তাকারী)  হিসেবে লিখিত মতামত জমা দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির অন্য ৮ জন হলেন- এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০১৫ সালের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করেন শীর্ষ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।

গত বছরের ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ ‍সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। ০৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ বলে দেওয়া রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি  মো. আশরাফুল কামালের রায় প্রকাশিত হয়।

গত ০৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ০৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ অ্যামিকাস কিউরিদের নিয়োগ দিয়ে ০৭ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন সময়ের আবেদন জানিয়ে আরও দু’মাস বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।

মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর

** ‘সংবিধানের এ টু জেড ব্যাখ্যা করতে পারি’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।