ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

হুসাইন-মোসলেমের যুদ্ধাপরাধের রায় বুধবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
হুসাইন-মোসলেমের যুদ্ধাপরাধের রায় বুধবার

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক কিশোরগঞ্জের নিকলির রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দেওয়া হবে বুধবার (১৯ এপ্রিল)।

একই মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১১ জনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন এবং দুইশ’ ৫০টি বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রায়ের এ দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় দেবেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।

মোসলেম প্রধান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও প্রধান আসামি হুসাইন পলাতক।

২০১৫ সালের ০৭ জুলাই  বিরুদ্ধে রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হুসাইন (৬৪) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের (৬৬) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর নিকলি উপজেলার কামারহাটি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মোসলেমকে গ্রেফতার করা হয়।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হরি দেবনাথ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ০৭ অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ মাস ২৫ দিনে তদন্ত শেষ করে ওইদিন তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে দু’জনের বিরুদ্ধে মূল একশ’ ৬১ পৃষ্ঠার সঙ্গে সর্বমোট চারশ’ ৩৯ পৃষ্ঠার নথিপত্র রয়েছে।

পরদিন ০৮ অক্টোবর এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হলে এর ভিত্তিতে ০৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) তৈরি করে দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালে।

গত বছরের ০৭ জানুয়ারি এ অভিযোগ আমলে নেন আদালত।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি (চার্জ হেয়ারিং) করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

গত বছরের ০৯ মে হুসাইন-মোসলেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ০৫ জুন রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন শেষে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

দুই আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন ২০ জন সাক্ষী।

গত ০৭ মার্চ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মাধ্যমে  এ মামলায় বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে রায় যেকোনো দিন দেওয়া হবে জানিয়ে অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

এ মামলার প্রধান আসামি পলাতক সৈয়দ মো. হুসাইন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছোট ভাই। হাসান আলীকে ২০১৫ সালের ০৯ জুন ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি মানবতাবিরোধী অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

হুসাইন-মোসলেমের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ
হুসাইনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কিশোরগঞ্জে ছিলেন। মোসলেম কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে নিকলিতে।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, নিকলির দামপাড়া গ্রাম ও নিকলি থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মণসহ চারজনকে নির্যাতন করেন হুসাইনের নেতৃত্বে রাজাকাররা।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নিকলি বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলাকায় হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নিকলির গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং ২৫০টি বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন আসামিরা।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, নিকলির নানশ্রী গ্রামে ১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে  অপহরণসহ নির্যাতন চালানো হয় হুসাইনের নেতৃত্বে।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর নিকলি সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ কিশোরগঞ্জ পৌর সদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরিয়েছিলেন হুসাইন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বীভৎসতা প্রর্দশন করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।