ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

বিল্টু (পর্ব-২) | গৌতম দাশ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৭
বিল্টু (পর্ব-২) | গৌতম দাশ   বিল্টু

[পূর্বপ্রকাশের পর]
খাজা বলল, বিল্টু যদি হাতে চোট না পেত তবে আমরাই জিততাম। মকু বলল, তোর জন্যই তো। তুই কয়বার ধরা খেয়েছিস বলতো। কতটা পয়েন্ট দিয়ে এসেছিস তুই। রহিম বলল, ওই দেখ, মেয়েটা আজও আমাদের দেখছে।

সবাই রাস্তার পাশে উঁচু বাড়িটার দোতলার জানালায় তাকালো। জানালায় তাদের বয়সী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ওকে দেখলে মনে হয় যেন কোন এক বন্দিনী মুক্তির আশায় প্রহর গুণছে। প্রতিদিনই ওরা মেয়েটাকে দেখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে। বিল্টু বলল, কি রে। ওকে জিজ্ঞেস করব নাকি সে জানালায় দাঁড়িয়ে থাকে কেন? রহিম বলল, না না।

বড়লোকের মেয়ে। পরে যদি তার বাবার কাছে নালিশ করে। খাজা বলল, ঠিক বলেছিস। আমরা আমাদের কাজে যাই চল। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে পেটে ভাত জুটবে না। বিল্টু বলল, আরে না। মেয়েটা মোটেই ওরকম না। আমি জিজ্ঞেস করছি। বিল্টু একটু জোরে জিজ্ঞেস করল, এই মেয়ে। তোমার কি হয়েছে?
খাজা বলল, এই, চল পালাই।
কিন্তু ওদের অবাক করে দিয়ে মেয়েটি নরম গলায় পাল্টা জিজ্ঞেস করল, তোমরা ওদিকে প্রতিদিন কোথায় যাও? একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল মকুরা। বিল্টু বলল, কাগজ কুড়োতে।
 -তোমরা অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াও তাই না?
 -হ্যাঁ, কেন?
-জানো, আমারও খুব ইচ্ছে করে তোমাদের মতো ঘুরে বেড়াতে। একা একা আমার একটুও ভালো লাগে না।
-আমরা তো শুধু ঘুরে বেড়াই না, আমরা কাগজ কুড়াই। তারপর কাগজ বিক্রি করে খাবার কিনে খাই।
-ও, তোমাদের বাড়িতে খাবার নেই?
-না। কাগজ বিক্রি করে আনতে হয়।
-তাই বুঝি। সেটা তো ভারি মজা। বেচা-কেনা আমার খুব ভালো লাগে।
-কি বল। আমরা ভাবি তুমি বড়লোকের মেয়ে। তুমি কত সুখী! যদি তোমার বাবার মতো বড়লোক আমার বাবা হতো! আর তুমি বল কিনা....
-হ্যাঁ, দুধ খেতে আমার একটুও ভালো লাগে না। তবুও আম্মু প্রতিদিন জোর করে দুধ খাইয়ে দেয়। কম্পিউটার আমার একদম ভালো লাগে না।

আমার ভালো লাগে তোমাদের মতো চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে। কিন্তু আম্মু বাইরে যেতে দেয় না। বলে কম্পিউটারে গেম খেলতে। ভাত খেতেও ভালো লাগে না। তবু আম্মু মাছ, মাংস কতকিছু রেঁধে টেবিল ভরিয়ে দেয়। আমি কিন্তু কিছুই খাই না। কিচ্ছু ভালো লাগে না। শুধু তোমাদের মতো ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। বিল্টু বলল, তোমার মা দুধ খেতে দেয়, কম্পিউটার দেয়, মাছ-মাংস কতকিছু রেঁধে দেয় আর তোমার ভালো লাগে না। আমরা দুধ, কম্পিউটার, মাছ-মাংস এগুলো চোখেও দেখিনি।
খাজা বিল্টুকে কানে কানে বলল, বলনা রে ওগুলো আমাদের দিয়ে দিতে। আমরা তো পাই না।
-আরে ধুর! ওর আম্মু বকবে না?
বিল্টু মেয়েটিকে বলল, তুমি কোনোদিন না খেয়ে থেকেছো? কোনো এক রাত?
-না তো। কেন?
-আমাদের তো প্রায়ই রাতে না খেয়ে কাটাতে হয়।
-কেন? আম্মু খেতে দেয় না?
-ঘরে চাল থাকলে তো খেতে দেবে। যেদিন মা কাজ পায় না সেদিন উপোস থাকতে হয়।
-তাই বুঝি?
-তুমি একদিন উপোস থেকে দেখ আমরা কেমন সুখে আছি।
-আচ্ছা।
এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে আওয়াজ এল।
-স্নিগ্ধা, এই স্নিগ্ধা কোথায় মা-মনি?
-আসছি আম্মু। আচ্ছা আমি যাই পরে দেখা হবে। বলে স্নিগ্ধা ভেতরে চলে গেল।
খাজা বলল, কিরে দোস্ত। এটা আবার কিসের নাম! সিধা না কি যেন বলল। আমাদের বস্তির মেয়েদের নাম হয় জরিনা, মালতি, বিনতি....

চলবে...
****
বিল্টু (পর্ব-১) | গৌতম দাশ

ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।