ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

৫০০ বছর পুরনো মসজিদটি হারিয়ে যাবে?

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
৫০০ বছর পুরনো মসজিদটি হারিয়ে যাবে? মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ

দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে আরো প্রচুর মুসলিম স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি। বাংলাদেশে সাড়ে তেরশ’ বছর আগের মসজিদও পাওয়া গেছে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাটে। মসজিদটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ৬৯ হিজরিতে। 

পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদটিও তেমন প্রাচীন একটি মুসলিম স্থাপত্য-শিল্প। শাহী মসজিদটি ৫৫৩ বছর আগে সুলতানি শাসনকালে স্থাপন করা হয়।

মসজিদের নামানুসারে এলাকার নাম ছিল মসজিদবাড়িয়া। জানা যায়, পরবর্তীতে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়াকে মজিদবাড়িয়ায় পরিবর্তন করেন।

কালের পরিক্রমায় মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। শিল্প ও স্থাপত্যের নিদর্শনগুলো যত্নের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবুও ঐতিহাসিক মসজিদটি দেখতে ভিড় জমান শত শত দর্শনার্থী। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বরগুনা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে মসজিদটির অবস্থান।

ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াছ শাহী বংশের স্বাধীন সুলতান রুকনুদ্দিন শাহ্ তৎকালীন বাকলা দখল করে ১৪৬৫ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। চন্দ্রদ্বীপে (বর্তমান বরিশাল বিভাগের) এ মসজিদই ইটের নির্মিত সর্বপ্রথম স্থাপত্যকীর্তি।

মসজিদটিতে একটি বারান্দা আছে। রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত তিনটি দৃষ্টিনন্দন মেহরাব। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে তিনটি খিলান পথ ও আট কোণার মিনারের মতো ছয়টি থাম রয়েছে। পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা আছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে দরজা-জানালার কপাট ও চৌকাঠগুলো ভেঙে পড়ার পথে।
বিশাল এক গম্বুজ মসজিদটিকে অনিন্দ্য সৌন্দর্য দিয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ ইঞ্চি পুরু। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজকৃত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীন কিছু নিদর্শন। কিন্তু অযত্নে দেয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপে ঘূর্ণিঝড় হলে বর্তমান পটুয়াখালী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কিছুদিন পর এলাকায় মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ শুরু হয়। ফলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। জনপদগুলোও ক্রমান্বয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘদিন জনবসতি না থাকায় মসজিদটি অব্যবহৃত থাকে। ফলে সেখানে বন-জঙ্গল হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বন-জঙ্গল ঘিরে তৈরি হয় ভীতিজাগানিয়া এলাকা।

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জমিদারের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে বনাঞ্চল পরিষ্কার করা হয়। তখন পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাছে মসজিদটির সন্ধান মেলে। এলাকার মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় হাজারো কৌতূহল ও বিস্ময়।

মসজিদটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে ইয়াকিন শাহ ও কালা শাহ নামে দুটি কবর। সামনে রয়েছে বিশাল এক দীঘি। এ দীঘিটি মসজিদ নির্মাণের সময় খনন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মসজিদের অনেক রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে অবশিষ্ট সৌন্দর্যও হারিয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, দ্রুত সংস্কার করলে মসজিদটি আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইসলামি স্থাপত্যশিল্প হিসেবে টিকে থাকবে বহুদিন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮ 
এমএমইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।