ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আরও

রমজানে ইতেকাফ করলে দুই হজের সওয়াব মেলে 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
রমজানে ইতেকাফ করলে দুই হজের সওয়াব মেলে  ইমাম মাওলানা আব্দুস সালাম গোলাপ-ছবি-অনিক খান

শোলাকিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে ফিরে: বছর ঘুরে আবারও মুসলিম উম্মাহের দুয়ারে হাজির হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসেই বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ, মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হওয়ায় বছরের সব থেকে সেরা এটি। 

বরকত আর পুণ্য লাভের এ মাসকে কাজে লাগাতে চান প্রতিটি মুসলমান। রমজানে কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ আমল করা সুন্নত।

নেক আলম অর্জনের মহিমাময় এ মাসে অধিক সওয়াব লাভের অফুরান সুযোগ থাকে।  

এসব সুন্নত নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুস সালাম গোলাপ।  

বলা হয়ে থাকে, শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহৎ ঈদের জামাত এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ঠিক পশ্চিম পাশে প্রায় তিন দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয় এ মসজিদ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ মসজিদে ইমামতি করে আসছেন মাওলানা আব্দুস সালাম গোলাপ।  

তিনি বলেন, রমজানে অন্যান্য আমলের মতো ইতেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফে বসলে দুই হজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। ’ 

তারাবির নামাজ বিষয়ে মাওলানা আব্দুস সালাম গোলাপ বলেন, তারাবি শব্দের অর্থ রাহাতুন বা বিশ্রাম। আমাদের নবী করিম (সা.) দিনের বেলা রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় তারাবির নামাজ পড়তেন। কিয়ামে রমজান বা তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা।  

‘আমাদের প্রিয় নবী নিজে তারাবির নামাজ পড়েছেন ও সাহেবায়ে কিরামদের পড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের প্রত্যাশায় ঈমানের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির আগের সব গুণাহ মাফ করে দেবেন। ’ 

সেহেরি বিষয়ে তিনি বলেন, রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রাখার জন্য সেহেরি খাওয়া সুন্নত। মূলত এ নিয়তেই প্রত্যেক মুসলমানকে সেহেরি খেতে হবে। সারা দিনের ক্ষুধার কষ্ট থেকে বাঁচতে রাতের বেলায় সেহেরি খেতে হয়।  

হাদিসে বর্ণিত আছে, সেহেরি খেলে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। ফেরেশতারাও সেহেরি খাওয়া ব্যক্তির জন্য দোয়া করেন। সেহেরি খাওয়ার পর পরই রোজার নিয়ত করতে হবে।  

এদিকে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুন্নতের একটি হচ্ছে ইফতার।  এ বিষয়ে মাওলানা আব্দুস সালাম বলেন, রোজাদার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করেন। রাসূল (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। এটিও সুন্নত। খেজুর না পেলে আমাদের প্রিয় নবী পানি দিয়ে ইফতার করতেন।  

ইফতারের সময় ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ এ দোয়া পড়তে হবে।  

আর ইফতার সামনে রেখে ‘ইয়া ওয়াসিয়াল ফাজলি ইগ ফিরলি’ এ দোয়া পড়লে আল্লাহ তার বান্দার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এ দোয়ার অর্থ: ‘হে বিপুল অনুগ্রহের অধিকারী, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। ’ যতক্ষণ পর্যন্ত কানে আযানের শব্দ না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এ দোয়া পড়তে থাকি। ’

কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে তিনি বলেন, মাহে রমজানে অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে যে ইবাদতটির নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তা হলো কোরআন তেলাওয়াত করা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। সিয়াম সাধনার এ মাসেই মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়।  

‘প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ মাসে অন্তত একবার কোরআন খতম করা। যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না তাদের শিখতে হবে। যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন তাদেরকে শুদ্ধ করে পড়তে হবে। ’

রমজানে কোরআন তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে ৭০০ নেকি পাওয়া যায়। রাসূলে পাক (সা.) রমজানে ফরজ এবং ওয়াজিব আদায়ের পাশাপাশি কোরআনে কারিম অন্য সময়ের চেয়ে বেশি তেলাওয়াত করতেন।  


রমজানের শেষ ১০ দিন নাজাত, এ সময় ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায় কিফায়া। ইতেকাফ শব্দের অর্থ দাঁড়ায়- কোনো স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা। রাসূলে পাক (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করতেন।  

ইতেকাফের সময় যাবতীয় সব ধরনের কাজ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রেখে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিবিষ্ট রাখতে হয়।  

রাসূল (সা.) বলেছেন, ইতেকাফের সময় কয়েকটি কাজ করা যাবে না। এর মধ্যে স্ত্রীকে স্পর্শ না করা, কোনো রোগীকে দেখতে না যাওয়া এবং জানাজায় উপস্থিত না হওয়া উল্লেখযোগ্য।  

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে। ’ 

রমজানে বেশি বেশি জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিল করা সুন্নত। এছাড়া এ মাসে দান-খয়রাত করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলে পাক (সা.) রমজানে মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করে করতেন।  

দান-খয়রাত করলে এ মাসে আল্লাহ ৭০ গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেন। এ মাসে কালেমা তাইয়্যেবা, ওস্তাগফিরুল্লা, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের দোয়া ও বেহেশত লাভের দোয়া বেশি বেশি করে পড়তে হবে।  

রোজাদার মিসওয়াক করলে সুন্নতের সওয়াব পান। রাসূলে পাক (সা.) নিজেও মেসওয়াক করতেন। রোজায় মেসওয়াক করে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০২১৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ 
...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।