পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু
( ১) কসম যুগের, (২) নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; (৩) কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাগিদ করে সত্যের এবং তাগিদ করে ধৈর্যের।
ফযিলত
হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে হিসন (র.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিদের মধ্যে দু’ব্যক্তি ছিলেন, তারা পরস্পর মিলে একজন অন্যজনকে সুরা আছর পাঠ করে না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না (তিবরানী)।
সুরা আছর কোরআন পাকের একটি সংক্ষিপ্ত সুরা, কিন্তু এমন অর্থপূর্ণ সুরা যে, ইমাম শাফেয়ী (র) এর ভাষায় মানুষ এ সুরাটিকেই চিন্তা-ভাবনা সহকারে পাঠ করলে তাদের ইহকাল ও পরকাল সংশোধনের জন্যে যথেষ্ট হয়ে যায়। এ সুরায় আল্লাহ তায়ালা যুগের কসম করে বলেছেন যে, মানবজাতি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই ক্ষতির কবল থেকে কেবল তারাই মুক্ত, যারা চারটি বিষয় নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে। সে চার কর্ম হলো- ঈমান, সৎকর্ম, অপরকে সত্যের উপদেশ এবং ধৈর্যের উপদেশ দেওয়া।
দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং মহা-উপকার লাভ করার চার বিষয় সম্বলিত এ ব্যবস্থাপত্রের প্রথম দু'টি বিষয় আত্মসংশোধন সম্পর্কিত এবং দ্বিতীয় দু’টি বিষয় মুসলমানদের হেদায়েত ও সংশোধন সম্পর্কিত।
প্রথম প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, বিষয়বস্তুর সঙ্গে যুগের কী সম্পর্ক, যার কসম করা হয়েছে? কসম ও কসমের জওয়াবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। অধিকাংশ তফসিরবিদ বলেন, মানুষের সব কর্ম, গতিবিধি, ওঠা-বসা ইত্যাদি সব যুগের মধ্যেই সংঘটিত হয়। সুরায় যেসব কর্মের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও এই যুগ-কালেরই দিবা-রাত্রিতে সংঘটিত হবে। এরই প্রেক্ষিতে যুগের শপথ করা হয়েছে।
মানবজাতির ক্ষতিগ্রস্ততায় যুগ ও কালের প্রভাব কী? চিন্তা করলে দেখা যায়, আয়ুষ্কালের সাল, মাস, সপ্তাহ দিবারাত্র, বরং ঘণ্টা ও মিনিটই মানুষের একমাত্র পুঁজি, যার সাহায্যে সে ইহকাল ও পরকালের বিরাট এবং বিস্ময়কর মুনাফা অর্জন করতে পারে এবং ভ্রান্তপথে চললে এটাই তার জন্যে বিপজ্জনকও হয়ে যেতে পারে।
এই চারটি বিষয়ের ব্যাখ্যা
ঈমান ও সৎকর্ম এবং আত্ম-সংশোধন সম্পর্কিত বিষয়ের ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তবে সত্যের উপদেশ ও সবরের উপদেশ এ দু'টি বিষয়ের উদ্দেশ্য কী, তা অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। কাউকে বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে উপদেশ দেওয়া ও সৎকাজের জোর তাগিদ করার নাম ওসিয়ত। এ কারণেই মরণোন্মুখ ব্যক্তি পরবর্তীকালের জন্যে যেসব নির্দেশ দেয়, তাকেও ওসিয়ত বলা হয়।
উপরোক্ত দু’রকম উপদেশ প্রকৃতপক্ষে এই ওসিয়তেরই দু'টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় সত্যের উপদেশ এবং দ্বিতীয় অধ্যায় সবরের উপদেশ। এখন এ দু’টি শব্দের কয়েক রকম অর্থ হতে পারে-(এক) সত্যের অর্থ বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও সৎকর্মের সমষ্টি। আর সবরের অর্থ যাবতীয় গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা। অতএব প্রথম শব্দের সারমর্ম হল ‘আমর বিন মারূফ তথা সৎকাজের আদেশ করা এবং দ্বিতীয় শব্দের সারমর্ম হল ‘নাহি আনিল মুনকার’ তথা মন্দ কাজে নিষেধ করা। এখন সমষ্টির সারমর্ম এই দাঁড়ালো যে, নিজে ঈমান ও সৎকর্ম করা এবং অপরকেও তেমন কাজের উপদেশ দেওয়া।
{{তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন
হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী’ (রহ.)}}
সম্পাদনায়
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এইচএ/