ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

পবিত্র হজযাত্রা নির্বিঘ্নকরণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
পবিত্র হজযাত্রা নির্বিঘ্নকরণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি পবিত্র হজযাত্রা নির্বিঘ্নকরণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

শারীরিক এবং আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানের জন্য হজ পালন করা ফরজ। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব গমন করেন। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশি হজযাত্রীরা চতুর্থ স্থানে।

বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনের সুযোগ রয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনেচ্ছুদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।

বাংলাদেশ থেকে হজপালনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে হজযাত্রীদের বেশ আগে থেকেই নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জমা দিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করে রাখতে হয়। পরে সেখান থেকে বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক আরও খরচের অর্থ জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হয়। এই নিবন্ধন অনুযায়ী ওই হজযাত্রীর মক্কা-মদিনায় বাড়ি, মিনার তাঁবু ও মোয়াল্লেম ঠিক করা হয়। এসব কিছু করা হজযাত্রীর নিরাপদ হজযাত্রার নিমিত্তে।  

এর পরও প্রতিবছরই দেখা যায় নানা জটিলতায় অনেকেই হজে যেতে পারেন না। এমনকি এ ক্ষেত্রে জমাকৃত অর্থও তারা ফেরত পান না। এবারও একই শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারকার হজযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে না।  

কারণ এবার হজপালনে যেতে আগ্রহীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের তারিখ জানানো হলেও কোটা পূরণ হয়নি। ইতোমধ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।  

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধিত হজগমনেচ্ছু যাত্রীদের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া নিবন্ধন কার্যক্রমের সময়সীমা আগামী ১ এপ্রিল শেষ হবে। প্রাক-নিবন্ধিত হজগমনেচ্ছুদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ১ মার্চ।

প্রথম দফায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ২২ মার্চ ও সর্বশেষ ১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বেধে দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ এপ্রিলের পর হজ ও ওমরাহ নীতির ৩.১.৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরবর্তী ক্রমিক থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। সে ক্ষেত্রে পূর্বঘোষিত ক্রমিকের প্রাক-নিবন্ধিত আর কেউ চূড়ান্ত নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন না।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ মার্চ থেকে রোববার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৮৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮০ হাজার ৪০৬ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। মোট ৫৪৭টি এজেন্সির মাধ্যমে এ সব হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

সৌদি সরকারের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের করা হজ চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রীর হজপালনের অনুমতি রয়েছে।  

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এখনও প্রাক-নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ৪১ হাজার জনের নিবন্ধন বাকি রয়েছে।  

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা প্রথমে ২৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এখন যে প্যাকেজের অধীনে হজে যাবেন, সেই প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হচ্ছে।  

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করা হলে নির্দিষ্ট সিরিয়াল না পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী সিরিয়ালে সুযোগ পেলেও নানা সমস্যা সৃষ্টির শঙ্কা থেকেই যায়। তবে বারবার সময় বাড়িয়েও কেন হজ যাত্রায় অনেকের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না তা একটি প্রশ্ন বটে! সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ভুয়া হজযাত্রীদের আইডি ব্যবহার করে প্রাক-নিবন্ধন করার কারণে নিবন্ধনে ধীরগতি চলছে। প্রকৃত ঘটনা যা-ই হোক, আমরা এর প্রতিকার চাই।  

প্রতিবছর হজের সময় সরকারি-বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে যারা হজপালনের জন্য সৌদি আরব যান, তাদের সার্বিক দেখভাল করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। এই হজযাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া করা, সৌদিতে বাসা ঠিক করা, তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা, হজ পালনের প্রতিটি ধাপ যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেন সে জন্য অভিজ্ঞ মোয়াল্লেম ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ এক একটি অধ্যায়। এ সব কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব হয় সে জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করাটা জরুরি। কারণ এর ওপরই বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করার দায় নির্ভর করে।  

কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অনেকেই নিবন্ধন করেন না। ফলে কতিপয় হজ এজেন্সি ভুয়া নিবন্ধন করে রাখে। পরবর্তীতে ওই নামের পরিবর্তে যে বা যারা হজে যেতে চান তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় রিপ্লেসমেন্ট কোটায়। এতে নানাবিধ জটিলতা বাড়ে।  

কারণ একবার নিবন্ধনের পর তা সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়ে যায় এবং স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তা পরিবর্তন করা সহজসাধ্য নয়। যে কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। অনেকেই হজে যেতেও পারেন না। আবার সৌদিতে যাওয়ার পরও বাড়ি, খাবার ইত্যাদি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হন।  

আমরা মনে করি, বাড়িয়ে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলার শঙ্কা অমূলক নয়। তবে কেন নিবন্ধনে এত ধীরগতি, কেন এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হলো- সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি।  

প্রতিবছর হজমৌসুমে অব্যবস্থাপনার যে অনাকাঙ্খিত চিত্র দেখতে হয় তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হজে যাওয়ার আগ্রহ বিনষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সরকারিভাবে সুযোগ না পেলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থা বিনষ্টের যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে তা থেকে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাটাও জরুরি।  

আমরা চাই, যে কোনো মূল্যে হজে গমনকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা হোক। যে এজেন্সিগুলো এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।