ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অন্যায় একটি, কিন্তু গোনাহ দশগুণ বেশি!

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
অন্যায় একটি, কিন্তু গোনাহ দশগুণ বেশি! প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ ও তাকে কষ্ট না দেওয়াকে ঈমানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ইসলামে

প্রতিবেশী মানবসমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ কারণে ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু হাল সময়ে এ বিষয়ে সমাজের মানুষের মাঝে চরম অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রতিবেশীর বিষয়ে বেশি উদাসীনতা দেখা যায় শহরের মানুষের মাছে। বছরের পর বছর পার হয় পাশের বাড়ির কারও সঙ্গে কোনো কথা হয় না, খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না।

বরং বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হয়। অথচ প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ ও তাকে কষ্ট না দেওয়াকে ঈমানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহর ইবাদত ও তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করার বিধানে সঙ্গে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের হক। তন্মধ্যে রয়েছে মাতা-পিতার হক, আত্মীয়-স্বজনের হক ও এতিমের হক ইত্যাদি। এসব গুরুত্বপূর্ণ হকের সঙ্গেই আল্লাহতায়ালা প্রতিবেশীর হককে উল্লেখ করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রতিবেশীর হককে আল্লাহতায়ালা কত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা রক্ষা করা আমাদের জন্য কত জরুরি।  

প্রতিবেশীর বিষয়ে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে। ’ -সহিহ মুসলিম: ১৮৫

অন্য হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। ’ -সহিহ মুসলিম: ১৮৩

উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিবেশীর হক আদায় করা যেমন জরুরি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া বা তার হক নষ্ট করা তেমনি অনেক বড় গোনাহের কাজ। একই অন্যায় প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে করলে অন্যের তুলনায় দশ গুণ বেশি বা বড় বলে গণ্য হয়।  

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদেরকে ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললো, তাতো হারাম। আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো ব্যক্তি দশজন নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করলে যে গোনাহ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা তার চেয়েও বেশি ও মারাত্মক গোনাহ। তারপর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললো, তাতো হারাম। আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দশ বাড়িতে চুরি করা যত বড় অন্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরি করা এর চেয়েও বড় অন্যায়। -মুসনাদে আহমাদ: ২৩৮৫৪

রাসূলের জামানার এক মন্দ প্রতিবেশীর ঘটনা
প্রতিবেশীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সামান্য সময়ের নয়; বরং সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন, মাস ও বছরের বা সারা জীবনের। এ প্রতিবেশী যদি মন্দ হয় তাহলে ভোগান্তির আর শেষ থাকে না। তেমনি এক মন্দ প্রতিবেশীর ঘটনা হাদিস বর্ণিত হয়েছে।  

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার প্রতিবেশীর ব্যাপারে অভিযোগ করলো। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ধৈর্যধারণ করো। এভাবে সে তিনবার আসার পর তৃতীয় বা চতুর্থ বারে নবী করিম (সা.) তাকে বললেন, তোমার বাড়ির আসবাবপত্র রাস্তায় নিয়ে রাখ। সাহাবি তাই করলেন। মানুষ সেখান দিয়ে যচ্ছিল এবং ওই প্রতিবেশীকে অভিশাপ দিচ্ছিলো। তখন ওই প্রতিবেশী নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বলল, আল্লাহর রাসূল! মানুষ আমাকে যা তা বলছে। নবী করিম (সা.) বললেন, মানুষ তোমাকে কী বলছে? সে বলল, মানুষ আমাকে অভিশাপ করছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার আগেই আল্লাহ তোমাকে অভিশাপ করেছেন। সে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমি আর এমনটি করব না (প্রতিবেশীকে কষ্ট দিব না)। তারপর অভিযোগকারী নবীর (সা.) দরবারে এলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি (প্রতিবেশীর অনিষ্ট থেকে) নিরাপদ। - আল মুসতাদরাক, হাকেম: ৭৩০৩

দুই নারীর দৃষ্টান্ত, এখানেও রয়েছে শিক্ষা
প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণ মানুষের সব আমল বরবাদ করে দেয়। তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, এক নারীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ; সে বেশি বেশি (নফল) নামায পড়ে, রোজা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু জবান দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় (তার অবস্থা কী হবে?)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। আরেক নারী বেশি (নফল) নামাজও পড়ে না, খুব বেশি রোজাও রাখে না আবার তেমন দান-সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবান দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কী বলেন?)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জান্নাতী। -মুসনাদে আহমাদ: ৯৬৭৫

ইসলামের বিধানমতে প্রতিবেশীর যত হক বলা হয়েছে সেগুলো প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম- সবার জন্য প্রযোজ্য। আর প্রতিবেশী যদি মুসলিম হয় বা মুসলিম ও আত্মীয় উভয়ই হয় তাহলে এসব হকের সঙ্গে মুসলিম ও আত্মীয় হিসেবে যত হক আছে সবই তাদের প্রাপ্য।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।