ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

অসুস্থ শিক্ষকের সঙ্গী হয়ে ছাত্রের হজের নিয়ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
অসুস্থ শিক্ষকের সঙ্গী হয়ে ছাত্রের হজের নিয়ত অসুস্থ শিক্ষকের সঙ্গী হয়ে ছাত্রের হজের নিয়ত। ছবি: সুমন শেখ- বাংলানিউজ

ঢাকা: হজযাত্রীদের পদচারণায় গত ২৪ জুলাই থেকে মুখরিত ঢাকার আশকোনার হজক্যাম্প। তাদের বিদায় দিতে স্বজনরাও ভিড় করছেন হজক্যাম্পে। প্রস্তুতির ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক হজক্যাম্পে নিয়োজিত প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। ব্যাপক আন্তরিকতার সাথেই তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন পুণ্যার্থী এই মানুষগুলোকে।

ডলার কিংবা রিয়াল ভাঙানো থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন করানো, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এমনকি হজক্যাম্পের ক্যান্টিনগুলোর কর্মীদের আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। হজযাত্রীরা তাতে সন্তুষ্ট বলেই জানালেন বাংলানিউজকে।

রবিবার(৩০ জুলাই) আশকোনায় অবস্থিত হজক্যাম্প ঘুরে এমন অভিজ্ঞতাই হলো।

তবে হজযাত্রীদের অনেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল। বয়সের কারণে হজে যাওয়ার সময় অবস্থাপন্ন কেউ কেউ সঙ্গে আরেকজনকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে যান। সাধারণত এই সং্গী লোকটি তাদের পরিবারেরই সদস্য হয়ে থাকেন। তবে এবার অসুস্থ শিক্ষকের সঙ্গী হয়ে হজে যাচ্ছেন তারই অনুগত ছাত্র। এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়। এবার এরকম হজজুটির দেখা মিলেছে হজক্যাম্পে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার মাসকা মাদ্রাসার শিক্ষক মো. এস আসাদুজ্জামান। তার সঙ্গে হজে যাচ্ছেন তার ছাত্র মো. আরমান খান। কিছুদিন আগে স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইজড হয়ে আক্রান্ত শিক্ষককে সর্বদা ব্যবহার করতে হয় হুইল চেয়ার। আর্থিক ক্ষমতা থাকলেও একা একা হজ পালনের মতো শারীরিক সক্ষমতা তার নেই। অসুস্থ শিক্ষকের সঙ্গী হয়ে ছাত্রের হজের নিয়ত।  ছবি: সুমন শেখ- বাংলানিউজতার সন্তানরা সুস্থ্ সবল হওয়া সত্বেও কেন তারা গেলেন না সে বিষয়ে কিছু বলতেও রাজি না এই মানুষ গড়ার কারিগর।

শিক্ষক-ছাত্র উভয়ই যাচ্ছেন যার যার নিজ খরচে। শুধু হজের প্রতি আগ্রহ আর গুরুভক্তির কারণেই এমন জুটিবাঁধা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

মো. আরমান খান বাংলানিউজকে বললেন, হুজুর হজে যাবেন জানতে পারলাম। আর আমার নিজেরও হজে যাওয়ার খুব আগ্রহ ছিল। সব মিলেই আমাদের এই যৌথ যাত্রা। যদিও স্যারের পরিবারে তার সন্তানরা আছেন। তারা যথেষ্ট শক্ত সমর্থ। ইনশাল্লাহ আল্লাহ আমাদের হজ কবুল করবেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি আমার ছাত্রকে দিয়েই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষকের প্রয়োজন আছে। আর গুরুভক্তি তার একটি অপরিহার্য উপাদান। আমি বিশেষ করে দেশের সকল শিক্ষক ও ছাত্রের জন্য দোয়া করি। সর্বোপরি পুরো দেশের মঙ্গল কামনা করি। আর সবার কাছে দোয়া চাই। যাতে সহিসালামতে ফিরে আসতে পারি।

নওগাঁর মান্দা এলাকার বাসিন্দা মো. জহুর আলী। স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। প্রায় আশির কোঠায় পৌঁছে যাওয়া এ বৃদ্ধ কৃষিকাজ করেই ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। এখন তার জীবনের শেষ আশাটিও পূরণ করে দিচ্ছেন তার ছেলেমেয়েরা। চলতে ফিরতে পারলেও কথা বলেতে পারেন না ঠিকমত। তাই তার স্ত্রী গাইড হিসেবে যাচ্ছেন তার সাথে।

ছেলেমেয়ের খরচে সস্ত্রীক হজে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা জহুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, এইডা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ। আমার পোলাপানরা আমাক হজে পাঠাচ্ছে তাদের মাকেও আমার সাথ করে। আমি আপনাগোর সবার কাছ দোয়া চাই। আমিও সবার লাই দোয়া করবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
এমএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।