ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

বদলি হজের বিধি-বিধান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
বদলি হজের বিধি-বিধান বদলি হজের বিধি-বিধান

আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মের বিধিবিধানগুলো পালনের জন্য অনেক বিকল্প রাস্তা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দেখিয়ে গেছেন।

যেমন কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তির হজ করার মতো অবস্থা হয়েছে, হজ তার ওপর ফরজ। এ অবস্থায় হজ না করেই মারা গেলেন বা শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন, তার জন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে হজ করিয়ে নেওয়া যাবে।

একে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ‘বদলি হজ’ বলা হয়।

একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে একজন নারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমার আম্মা মারা গেছেন। আমি তার পক্ষ থেকে একটি দাসী আজাদ করে দিয়েছি। উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এর উত্তম প্রতিদান তিনি অবশ্যই পাবেন। অতঃপর ওই নারী আবার রাসূলকে (সা.) বললেন, তিনি হজ করেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, করতে পারবে। -মুসলিম শরিফ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, হজের বদলের বিনিময়ে তিন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে- ১. যার পক্ষ থেকে হজে বদল করা হয় তিনি; ২. যিনি হজে বদল করেন তিনি এবং ৩. যিনি হজে বদল করান তিনি।  

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে আমাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, ইসলামি শরিয়তে বদলি হজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে এবং এর বিধানও রয়েছে। তাই সৌভাগ্যবান কোনো সন্তান যদি তার মাতা-পিতার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে হজে বদল করায় অথবা সে নিজেই তাদের পক্ষ থেকে হজে বদল বা বদলি হজ করে, তাহলে সে সন্তান অনেক সওয়াবের অধিকারী হবেন।  

পিতা-মাতা কোনো একজনের ওপর হজ ফরজ ছিল; কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি হজ করে যেতে পারেননি বা কাউকে দিয়ে হজ করানোর অসিয়তও করেননি। এ অবস্থায় তার সন্তানের ওপর তার পক্ষ থেকে বদলি হজের ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব।

যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে এবং তিনি হজ করার মতো সময়ও পেয়েছেন, এ সত্ত্বেও কোনো কারণে হজ করতে পারেননি। অতঃপর তিনি হজ করার মতো শক্তি-সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন; যেমন- বৃদ্ধ হওয়ার কারণে শারীরিক দুর্বলতা, কোনো মারাত্মক অসুস্থতা, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, অন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এ অবস্থায় তার শারীরিক সক্ষমতা যদি ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো তার জিম্মায় ফরজ। সেটা তিনি নিজেও করতে পারবেন বা তার ওয়ারিশদের অসিয়ত করে যেতে পারবেন যে, আমার মৃত্যুর পর আমার পক্ষে আমার সম্পদ থেকে কাউকে দিয়ে যেন বদলি হজ করানো হয়।  

কিন্তু যদি কেউ উল্লিখিত ওজরগুলোর কারণে নিজে জীবিত থাকা অবস্থায় নিজের ফরজ হজ অন্যের মাধ্যমে বদলি হজ হিসেবে করিয়ে ফেলেন, এরপর যদি তিনি আবার শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পান, তাহলে তার পূর্ববর্তী কৃত বদলি হজ বাতিল হয়ে তা নফল হজ হিসেবে গণ্য হবে। উপরন্তু তাকে নিজের ফরজ হজ নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে।

বদলি হজের সফর নিজ দেশ থেকেই করতে হবে। সৌদি আরবে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে অবস্থানকারী কারও পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করতে পারবে না।  

তবে কেউ যদি তার নিকটাত্মীয় কারও পক্ষ থেকে নিজে উদ্যোগী হয়ে হজ পালন করেন, তাহলে তা নফল হজ হিসেবে গণ্য হবে- যা ইসালে সওয়াব হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের স্বউদ্যোগী হজ যে কোনো স্থান থেকে করা যেতে পারে; কিন্তু নির্দেশিত হয়ে ফরজ হজের বদলি হজ করতে পারবে না।  

যে ব্যক্তি এখনও হজ করেননি তাকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করানো মাকরুহ। যদিও তার মাধ্যমে কৃত হজ আদায় হয়ে যাবে। তবে এমন ব্যক্তির হজ ফরজ হয়ে থাকলে তার দ্বারা করালে বদলি হজ আদায় হবে না।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।