ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

দুনিয়ায় মুসলমানদের সম্পদ অর্জনে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা নেই

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭
দুনিয়ায় মুসলমানদের সম্পদ অর্জনে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা নেই দুনিয়ার জীবনসামগ্রী মানুষকে আরও বেশি কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে

অনেকেই মনে করেন, দুনিয়ার জীবনে মুসলমানদের গরিবি অবস্থায় জীবনযাপন করতে হবে। কারণ, মানুষ দুনিয়ায় দুই দিনের মুসাফির! এটা নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও আছে। আসলে বিষয়টি এমন?

এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের সূরা হুদের ৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এবং তার দিকে ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তোমার উত্তম জীবনসামগ্রী দেবেন এবং অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অনুগ্রহ দান করেন। ’

বর্ণিত আয়াতের ভাষ্য ও সমাজের কিছু মানুষের মনোভাবে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

আয়াতে বলা হয়েছে, মুসলমানেরা ধনসম্পদ, সচ্ছল ও সুখি-সমৃদ্ধ হতে পারে। অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত খারাপভাবে নয় ভালোভাবেই থাকবে। আল্লাহর নিয়ামতগুলো নিয়মিত তাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। তারা বরকত ও প্রাচুর্যলাভে ধন্য হবে। সচ্ছল ও সুখি-সমৃদ্ধ থাকবে। শান্তিময় ও নিরাপদ জীবনযাপন করবে। কোনো প্রকার লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সঙ্গে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে থাকবে।  

এ বিষয়ে সূরা নাহলের ৯৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ বা নারী হোক, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। ’

সমাজে সাধারণভাবে এমন একটি বিভ্রান্তিকর দর্শন ছড়িয়ে আছে যে, আল্লাহভীতি, সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন করলে মানুষ আখেরাতে লাভবান হবে; কিন্তু এর ফলে তাকে বৈষয়িক বিষয় থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। অর্থাৎ সমাজে যারা ইবাদত-বন্দেগি করবেন, দ্বীনের কাজ করবেন, ইসলাম পালন করবেন- তাদের জীবনে দারিদ্র্য, অভাব ও অনাহার অনিবার্য বিষয়।  

আল্লাহতায়ালা এমন ধারণার প্রতিবাদ করে উল্লিখিত আয়াতে বলেন, সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের শুধু আখেরাতে নয়- দুনিয়ায়ও সমৃদ্ধ হবে। আখেরাতের মতো এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্য ও এমন লোকদের জন্য নির্ধারণ করেন, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ আনুগত্যসহকারে সৎ জীবনযাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোনো ক্লেদ ও গ্লানি নেই, যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা যেতে পারে, যাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোনো ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের আশঙ্কা করে না।

কোরআনে কারিমে বর্ণিত দুনিয়ার জীবনসামগ্রী দুই প্রকারের। এক প্রকারের জীবনসামগ্রী আল্লাহবিমুখ লোকদেরকে ফেতনায় ফেলতে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদের দুনিয়ামুখী হয়ে যায়। আল্লাহকে ভুলে যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটি নিয়ামত ঠিকই; কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে এসব ধোঁকা। কোরআনে কারিমে এমন বিষয়গুলোকে প্রতারণার সামগ্রী নামে অভিহিত করা হয়েছে।  

দ্বিতীয় প্রকারের জীবনসামগ্রী মানুষকে আরও বেশি কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে। এভাবে সে আল্লাহর, তার বান্দাদের এবং নিজের অধিকার আরও বেশি করে আদায় করতে সক্ষম হয়। আল্লাহর দেওয়া উপকরণাদির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয় করে যে দুনিয়ায় ভালো, ন্যায় ও কল্যাণের উন্নয়ন এবং মন্দ, বিপর্যয় ও অকল্যাণের পথ রোধ করার জন্য আরও বেশি প্রভাবশালী ও কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

এসব হচ্ছে কোরআনের ভাষায় উত্তম জীবনসামগ্রী। অর্থাৎ এমন উন্নত পর্যায়ের জীবনসামগ্রী যা নিছক দুনিয়ার আয়েশ-আরামের মধ্যেই খতম হয়ে যায় না বরং পরিণামে আখেরাতেও শান্তির উপকরণে পরিণত হয়। যাকে কোরআনের ভাষায় উত্তম দ্রব্যসামগ্রী বলা হয়।

কোরআনে বর্ণিত বৈষয়িক সামগ্রীসমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে যারা অস্থির থাকে, লাভ-লোকসানের খতিয়ানের প্রতি সব সময় শ্যেন দৃষ্টি রেখে চলে- তারা কখনও মহান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের জন্য কিছু করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। আপাতদৃষ্টিতে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের জন্য তারা অর্থ ব্যয় করে ঠিকই; কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তারা নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, বংশীয় কিংবা এ জাতীয় বৈষয়িক লাভের হিসাব-নিকেশটা আগেই করে নেয়। অার এমন কাজে অাল্লাহ সন্তুষ্ট হন না।  

কিন্তু উত্তম দ্রব্যসামগ্রীর অধিকারীরা ভিন্নদৃষ্টির অধিকারী হয়। তারা তাদের প্রসারিত দৃষ্টি, বিপুল মনোবল ও উদার মানসিকতা দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোযোগী গয়। তারা ভোগবাদী মানসিকতার পরিবর্তে নৈতিক গুণাবলী বিকাশ সাধনে ব্রতী হয়। অর্জিত ধনসম্পদ দ্বারা নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর তা আত্মীয়স্বজন, অভাবীদের মাঝে ব্যয় করে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক খাতে কাজে লাগায়। এক কথায়, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।