ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ তারাবিতে পাঠ করা হবে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত, আয়াতুল কুরসি

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৫
আজ তারাবিতে পাঠ করা হবে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত, আয়াতুল কুরসি

আজ ২য় তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে দেড় পারা কোরআন তেলাওয়াত করা হবে।

আজকের তারাবিতে সূরা বাকারার ২০৪ নং থেকে তেলাওয়াত শুরু করা হবে। পাঠ করা হবে সূরা বাকারা শেষ করে সূরা আল ইমরানের ৯১ নং আয়াত পর্যন্ত।

আজকের তারাবিতে পঠিতব্য সূরা বাকারার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো-

২০৮নং আয়াতে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে, আখেরাতের মুক্তি ও আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে।

২১৫নং আয়াতে দানের পাত্র উল্লেখ করা হয়েছে। যথা, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, দুস্থ, অভিবাসী। ২১৬-২১৮নং আয়াতে জেহাদের ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনা করা হয়েছে।

২১৯নং আয়াতে মদ ও জুয়ার প্রতি মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসবে কিছুটা উপকার থাকলেও অপকার অনেক বেশি। (মদ-জুয়া হারাম করা হয়েছে অন্য আয়াতের মাধ্যমে)

২২০নং আয়াতে এতিমের সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে তা ব্যবহারের সময় ওই এতিমের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।

২২১নং আয়াতে মুসলমানদের জন্য আন্ত:ধর্ম বিয়ে ব্যবস্থাকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২২২নং আয়াতে ঋতুবর্তী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২২৩নং আয়াতে স্ত্রীর গুহ্যদার দিয়েও সঙ্গম করা হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

২২৪নং আয়াতে ওই ব্যক্তিকে শপথ ভঙ্গ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো গুনাহের কাজ করার জন্য বা কোনো নেক কাজ বর্জন করার জন্য আল্লাহর নামে শপথ করেছে। তবে তাকে শপথ ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে।

২২৬ নং আয়াতে ঈলা‘র বিধান বলা হয়েছে। কেউ যদি অনির্দিষ্ট কাল বা চার মাস বা তদূর্ধ সময় স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম না করার শপথ করে তবে এ শপথকে ঈলা বলা হয়। সর্বাবস্থায় চার মাসের ভিতর স্ত্রীসঙ্গম করলে বিবাহ ঠিক থাকবে কিন্তু শপথ ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে। আর চার মাস পর্যন্ত এ শপথ রক্ষা করলে স্ত্রীর ওপর এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। পুনর্বিবাহ ব্যতীত সম্পর্ক বৈধ হবে না।

২২৮-২৪২নং আয়াত পর্যন্ত তালাক ও ইদ্দতের বিভিন্ন বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্বামী তার স্ত্রীকে সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দেয়ার সুযোগ পাবে। একবার বা দুইবার স্পষ্ট তালাক দেয়ার পর ইদ্দতের মাঝে স্বামী ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। বিয়ে নবায়নের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ইদ্দতের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে হলে বিয়ে নবায়ন করতে হবে।

তিনবার তালাক দেয়ার পর স্থায়ীভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে। এখানে পুনর্বিবাহেরও সুযোগ থাকবে না। হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে ইদ্দতের পর স্ত্রীর যদি ঘটনাক্রমে অন্যত্র বিয়ে হয় আর ২য় স্বামী মারা যায় বা ঘটনাক্রমে তাকে তালাক দেয় তবে ২য় স্বামীর ইদ্দতের পর স্ত্রী সম্মত হলে ১ম স্বামী আবার তাকে বিয়ে করতে পারবে।

স্ত্রী যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে স্বামীর কাছে তালাক চায় আর স্বামী সম্মতিজ্ঞাপন করে তবে বায়েন তালাক পতিত হবে। একে খুলা তালাক বলা হয়।

তালাকপ্রাপ্ত মহিলা যদি ঋতুবতী হয় তবে তার ইদ্দত তিন ঋতু পর্যন্ত। আর সে যদি গর্ভবতী হয় তবে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত।

বিধবা মহিলা যদি গর্ভবতী হয় তবে তার ইদ্দত প্রসব পর্যন্ত। নচেৎ তার ইদ্দত চার মাস দশ দিন।

ইদ্দতকালীন স্ত্রীর থাকা-খাওয়া স্বামীকে বহন করতে হবে। স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ শুদ্ধ হবে না। ওই সময় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াও জায়েজ নয়। তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা মহিলাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাঁধা দেয়া চরম অন্যায়। বরং তাদের বিয়েটাই নৈতিক নিরাপদ।

আজকের তারাবির পাঠাংশে আরও জানা যাবে, সন্তানকে স্তন্যদানের সর্বোচ্চ সময় মাত্র দু’বছর।

২৪৩-২৫১ নং আয়াতে জেহাদ বিষয়ক আলোচনা স্থান পেয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে জেহাদের মাধ্যমে এক জালেম শাসক জালুতকে পরাজিত করে নিরপেক্ষ ও ন্যয়পরায়ণ শাসক তালুতের বিজয়ের কাহিনী আলোচিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো সূরা বাকার ২৫৫নং আয়াত। এ আয়াতের স্বতন্ত্র নাম আয়াতুল কুরসি। আল্লাহর বড়ত্ব ও ক্ষমতার কথা এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসির অনেক ফজিলত, এটা প্রত্যেক মুসলমানের জানা আবশ্যক।

২৫৯নং আয়াতে এক ব্যক্তির মৃত অবস্থায় একশ’ বছর কাটানোর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

২৬০নং আয়াতে চারটি পাখিকে জবাই করে টুকরো টুকরো করার পর পুনরায় তা জীবিত হওয়ার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

২৬১-২৭৪নং আয়াতে দান বিষয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। ২৬৪নং আয়াতের ভাষ্য মতে দান করার পর কষ্ট দিলে বা খোঁটা দিলে বা সুখ্যাতির মোহে দান করলে কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

২৭৫-২৮১নং আয়াতে সুদের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। সর্বশেষ বলে দেয়া হয়েছে, যে ব্যক্তি সুদ পরিহার করবে না সে যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি নেয়। সুদ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও প্রকট করে। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে সুদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিশাপ দিয়েছেন।

২৮২-২৮৩নং আয়াতে বাকি লেন-দেন লিখে রাখতে এবং তাতে স্বাক্ষী রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সূরা আল ইমরান
সূরা আল ইমরান মাদানি সূরা। এর মোট আয়াত সংখ্যা ২০০টি। আজকের তারাবিতে উল্লেখযোগ্য যেসব বিষয় আলোচিত হবে সেগুলো হলো-

১৯নং আয়াতে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, একমাত্র ইসলামই আল্লাহতায়ালার কাছে গ্রহণীয়। ২৮নং আয়াতে অমুসলিমদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব রাখাকে অবৈধ করা হয়েছে। তবে অমুসলিমদের সঙ্গে বাহ্যিক সদ্ব্যবহার ও মানবিক আচরণ জায়েজ আছে।

৩১ ও ৩২নং আয়াতে রাসূলের অনুসরণ তথা হাদিসের অনুসরণকে আবশ্যক করা হয়েছে।

৩৫-৬৫নং আয়াতে হজরত মরিয়ম (আ.)-এর জন্মগ্রহণ, হজরত ঈসা (আ.)-এর বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র এবং সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে তাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে।

৮৫নং আয়াতে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যারা দুনিয়ার জীবনে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো মতবাদের অনুসারী হবে তারা আখেরাতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আল্লাহ ইসলাম ছাড়া আর কোনো কিছুকে গ্রহণ করবেন না।

৯১নং আয়াতে বলা হয়েছে যারা কাফের অবস্থায় মারা যাবে তারা যদি এ পৃথিবী সমপরিমাণ স্বর্ণ-রুপা মুক্তিপণরূপে দিতে চায় তবুও পরকালে তা গ্রহণ করা হবে না। তারা সেখানে কখনোই মুক্তি পাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘন্টা, জুন ১৯, ২০১৫
এমএ/

** আয়াতুল কুরসির ফজিলত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।