ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

বিপদগ্রস্ত অভাবীদের সাহায্য করাও ইবাদত

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
বিপদগ্রস্ত অভাবীদের সাহায্য করাও ইবাদত

কোনো মানুষের পক্ষে পৃথিবীতে একাকী বাস করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।

এছাড়াও নানা বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। কেননা কোনো মানুষ যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, সে তখন সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব অনুভব করে। ওই সময় সে আন্তরিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে।

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক হলো- একটি দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ যেকোনো ধরনের বিপদে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য অঙ্গ তাকে সাহায্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। উদাহরণ স্বরূপ- কারো চোখে কোনো কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আপন কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা সবাই কিভাবে চোখকে তার বিপদ থেকে রক্ষা করবে সেদিকে নিমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রয়োজনে অন্যেরও শরণাপন্ন হয়। অনুরূপ কোনো মুসলমান ভাই যখন কোনো প্রকার বিপদে পড়ে, তখন অপর মুসলমান ভাইয়ের কর্তব্য হলো- তাকে সাহায্য করা। কেননা যে মানুষকে সাহায্য করে মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সাহায্য করেন।

এ মর্মে হাদিসে অনকে বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। -মুসলিম ও তিরমিজি

অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সদকা করা ওয়াজিব। একজন প্রশ্ন করলেন, যদি কারো সে সামর্থ্য না থাকে, তবে কি হবে? সাহাবাদের পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যায় নবী (সা.) বলেন, ‘তাহলে কোনো দুঃখে বা বিপদে পতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। ’-মিশকাত

কোনো মানুষের কঠিন বিপদের মুহূর্তে যখন কেউ তাকে সাহায্য করে, তখন তার সে সাহায্যের কথা সে কখনো ভুলে না। যারা বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যকারী হয়, তারাই প্রকৃত বন্ধু। প্রবাদে আছে, ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। ’

আমরা জানি যে, দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক আল্লাহ। মানুষ যে সম্পদের অধিকারী, তা মূলত আল্লাহর কৃপার ফসল। আল্লাহ যাকে অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন তিনি সে সম্পদ থেকে অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে তাতে আল্লাহতায়ালা খুব খুশি হন। এ ধরনের মানবিক কর্তব্য পালন রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ আদায় ও অবিরত নফল রোজার সমতুল্য।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিধবা, গরিব, অভাবী ও অসহায়দের সাহায্যের জন্য চেষ্টা-তদবির করে, সে আল্লাহর পথে ব্যস্ত ব্যক্তির সমতুল্য। (হাদিস বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সে রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ আদায়কারী এবং অবিরত নফল রোজা পালনকারীর সমতুল্য। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

যারা বিপদগ্রস্ত ও গরিব-দুঃখীকে দান করেন আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি (আমার অভাবী বান্দাদের জন্য) নিজের উপার্জন থেকে খরচ কর, আমি আমার ভাণ্ডার থেকে তোমাকে দিতে থাকব। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

সৃষ্টি জগতের সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। কোনো মানুষের সঙ্গে যখন সদয় ব্যবহার করা হয়, তার বিপদে সাহায্য করা হয়, তখন আল্লাহকেই খুশি করা হয়। সমাজের আশ্রয়হীন, দুর্বল ও অসহায় লোকজনের সাহায্য-সহযোগিতা ইবাদতেরই অন্তর্ভুক্ত।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, গোটা সৃষ্টিকুল আল্লাহর পরিবার। অতএব যে আল্লাহর পরিবারের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করে, সে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। -বায়হাকি

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিপদগ্রস্ত ও অভাবী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার এবং তাদের অভাবের দিনে হাত বাড়ানোর তওফিক দান করুন। আমীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘন্টা, মে ২০, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।