ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

তারাবির নামাজের জামাত প্রচলন ও এর ফজিলত

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪
তারাবির নামাজের জামাত প্রচলন ও এর ফজিলত

আল্লাহ্‌র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাহাবী ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর বিশেষ মর্যাদা ও মর্তবা অনুধাবন করা আমাদের জন্য জরুরি।

ওহির মতো অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য ফেরেশতার আগমন, সাক্ষাৎ ও উপস্থিতি ছাড়া ফেরেশতার অন্য কোনো ধরনের মধ্যস্থতায় ঊর্ধ্ব জগতের কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাণীপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে  “মোহাদ্দাছ” বলা হয়।

সে রকম বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবী হজরত ওমর (রা.)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,পূর্ববর্তী উম্মত বনি ইসরাইলদের মধ্যে এমন এক শ্রেণির লোক ছিলেন যারা নবী তো ছিলেন না কিন্তু “মোহাদ্দেছ” ছিলেন। আমার উম্মতের মধ্যে ওই শ্রেণির লোক (এ যুগে) কেউ হয়ে থাকলে ওমর হয়েছে। বোখারি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নম্বর-১৮২৯।

আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, শয়তান কখনো তোমার (ওমর রা.) চলার পথে তোমার সঙ্গে মিলিত হয় নি। বরং তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় চলে গেছে। মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড-হাদিস নম্বর-৬০২৫।

এছাড়া ওমর ইবন খাত্তাবকে (রা.) আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তত্ত্ব জ্ঞান সম্পন্ন বলেছেন। যার অর্থ- গোপন প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তত্ত্ব জ্ঞানকে আরবিতে ইলহাম বলা হয়। মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আ’লামিন হজরত ওমরকে (রা.) এমন সুক্ষ জ্ঞান দান করেছেন যে তিনি বিভিন্ন সময় যে মতামত ও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন পরে তা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর পরে হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমরের (রা.) অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

হুজাইফা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পরে তোমরা তাদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করবে। তিরমিজি,ষষ্ঠ খণ্ড-হাদিস নম্বর-৩৬০১।

হজরত ওমর ইবন খাত্তাব (রা.) যার এতো মর্যাদা, যিনি এতো জ্ঞানের অধিকারী সেই ওমরই (রা.) তারাবির নামাজ বিশ রাকআত জামায়াতে পড়ার প্রচলন করেন।

কেন আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জামায়াতে বা নিয়মিতভাবে সাহাবীদের নিয়ে এই বিশেষ নামাজ আদায় করেন নি তার জবাব রাসুলুল্লাহ স্বয়ং দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই বিশেষ নামাজটির (তারাবির) প্রতি এতো অধিক আগ্রহ দেখে তা তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছিলাম। সে অবস্থায় তোমরা অক্ষম হয়ে পড়বে। (বোখারি)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পর যেহেতু আর ওহি আসার সম্ভাবনা নেই এবং নতুন কোনো বিষয় ফরজ হওয়ারও কোনো অবকাশ নেই সেজন্য হজরত ওমর (রা.) তারাবির নামাজ বিশ রাকআত নির্দিষ্ট করেন এবং জামায়াতে আদায় করার ব্যবস্থা করেন। হাজার হাজার সাহাবী হজরত ওমরের (রা.) এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাহাবাদের এজমা দ্বারা বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে।

ইবন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বিশ রাকআত তারাবি পরে বেতর পড়তেন।

হজরত আলী (রা.) রমজান মাসে কোরআন বিশেষজ্ঞদের ডাকলেন ও তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্ধারণ করলেন বিশ রাকআত তারাবি পড়ানোর জন্য।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মসউদ (রা.) বিশ রাকআত তারাবি নামাজ পড়েছেন, হজরত উবাই ইবন কা’ব (রা.) মদিনা শরীফে বিশ রাকআত তারাবির নামাজের ঈমামতি করেছেন।

পরে মদিনার ঈমাম মালেক, মক্কার ঈমাম শাফেয়ী, দশ লক্ষ হাদিসের হাফেজ ঈমাম আহমদ ইবন হাম্বল, ঈমাম আবু হানিফা সবার সিদ্ধান্ত তারাবির নামাজ বিশ রাকআত।

আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ও সওয়াবের আশায় অনুপ্রাণিত হয়ে যে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্বের সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বোখারি)

মতান্তর রয়েছে তারাবির নামাজ আট রাকাত। কিন্তু যে হাদিসটিকে এর প্রমাণ স্বরূপ ধরা হয় তা তারাবির নামাজ আট রাকাতের পক্ষে কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা পাঠক বিবেচনা করে দেখবেন।

হাদিসটি হলো-হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রমজান শরীফের রাতে নামাজ কি রূপে পড়তেন? হজরত আয়েশা (রা.)উত্তর করলেন, তিনি রমজান শরীফের ও রমজান ছাড়া অন্য সময়ে শেষ রাতে ১১ রাকাতের বেশি নামাজ পড়তেন না। প্রথম ধাপে দু’রাকাত করে চার রাকাত পড়তেন যা বর্ণনাতীত সুন্দর ও লম্বা হত। তারপর আবার একই ভাবে চার রাকাত পরতেন, তারপর তিন রাকাত বেতের পড়তেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন আমি তাঁর খেদমতে আরজ করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আপনি বেতের না পরে শুয়ে পড়েন? হজরত সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার চোখ দু’টো নিদ্রামঘ্ন হয়, কিন্তু কলব জাগ্রত থাকে। বোখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড,হাদিস নম্বর-৬০৮।

এখানে উল্লেখ্য, ওই সময় জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়া হতো না। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম তারাবি ও বেতের নামাজ তাহাজ্জুদের সঙ্গেই পড়তেন।

তারাবি ও তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণ আলাদা নামাজ। দুই নামাজের মর্যাদাও দুই রকম। তারাবি শুধুমাত্র রমজানে পড়া হয়। আর তাহাজ্জুদ নামাজ সারা বছরের এবাদত।

ঈমাম বোখারীর (র.) এই হাদিস তারাবির নামাজ সম্পর্কে নয়। কারণ এতে রমজান ও রমজান ছাড়া উভয়ের উল্ল্যেখ রয়েছে। এই হাদিসে যে নামাজের কথা বলা হয়েছে তা রমজানে পড়া হয় ও রমজান ছাড়াও পড়া হয়। এই হাদিসের উদ্দেশ্য তারাবির নামাজ নয়। কারণ তারাবি রমজান ছাড়া পড়া হয় না। তাহাজ্জুদ নামাজই উভয় সময়ে পড়া হয়। সুতরাং তাহাজ্জুদই এই হাদিসের উদ্দেশ্য এবং এরই সংখ্যা আট রাকাত বলা হয়েছে।
মহান আল্লাহ্‌ সব মুসলমানকে সঠিক বিষয়ে একমত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।