ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

কাতারের সম্পদ দখলের জন্যই কাতার সংকট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
কাতারের সম্পদ দখলের জন্যই কাতার সংকট শেখ আবদুল্লাহ বিন আলী আল থানি

ঢাকা: কাতারের রাজ পরিবারের এক সদস্য অভিযোগ করেছেন, মাস খানেক ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যা তার কাছে আত্মহত্যার শামিল। কেবলমাত্র সৌদি আরব ও ইউএই’তে থাকা কাতারের সম্পদ কব্জা করার জন্যই তাকে বন্দি করা হয়েছে।

শেখ আবদুল্লাহ বিন আলী আল থানি নামে ওই কাতারি ধনকুবের মূলত সৌদি আরবে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তার দেশের বিরোধের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মধ্যস্থতায় এবার হজে যেতে পেরেছেন কাতারিরা।

‘সন্ত্রাসবাদে মদদের’ অভিযোগ তুলে গত বছরের জুনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে উপসাগরীয় চার দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর। সৌদি আরবের নেতৃত্বে তারা দেশটির ওপর স্থল, সমুদ্র আর আকাশ অবরোধ আরোপ করে।  

সে সময় সৌদি জোটের ওই উদ্যোগকে সমর্থন করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে কাতারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন দেশটির রাজ পরিবারের ঘনিষ্ট শেখ আবদুল্লাহ বিন আলী আল থানি। তিনি তখন থেকেই সৌদি আরবে বসবাস করে আসছিলেন। সে সময় কাতার সরকারের মূল সমালোচক হিসেবেও তাকে উল্লেখ করা হতো। যদিও এবার তিনি অন্য সুরে কথা বলছেন।  

কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার কাছে থাকা এক অডিও টেপ’র (১৫ জানুয়ারি ধারণকৃত) বক্তব্য অনুযায়ী উপসাগরীয় অঞ্চলে এ নিয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে শেখ আবদুল্লাহ বিন আল থানি বলেন, আমাকে আটকে রাখা হয়েছে এবং জানে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

"উপসাগরীয়" সংকট দীর্ঘায়িত করে স্বার্থ সিদ্ধি করতে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে থাকা কাতারের ধনসম্পদ দখলে নিতে আবুধাবির সুলতান মোহাম্মেদ বিন জায়েদ এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী আবুধাবি ও সৌদি রাষ্ট্রদূতদের সাহায্যেই তাকে বন্দি রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কাতারের এ প্রভাবশালী শেখ।

উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশে থাকা কাতারিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আমার দেশের সব নাগরিককে সতর্ক করছি, আপানারা দেশের পক্ষ ত্যাগ করবেন না। আপনারা দেশের পক্ষে অবস্থান নিন। তাদের (সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্র) থেকে সতর্ক থাকুন। তারা আপনার দেশকে ধ্বংস করার জন্য টাকা দিয়ে আপনাদের প্রলুব্ধ করতে পারে।

শেখ আবদুল্লাহ তার অডিও বার্তায় আত্মঘাতী হওয়ারও হুমকি দেন। তিনি বলেন, আমার ওপর এ মানিসিক চাপ ও গৃহবন্দি দীর্ঘায়িত হলে, আমার ঘরে (কাতার) ফেরার পথ বন্ধ হলে এবং আমার পরিবারের সঙ্গে (দুই মেয়ের সঙ্গে) যোগাযোগ করতে না দিলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো। দেশের ও নিজের বড় ক্ষতি ঠেকাতে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাজেদ আল-আনসারী আল জাজিরাকে বলেছেন, রেকর্ডিংটি আকাশ থেকে পাওয়া কোনো আজগুবি জিনিষ নয়। আমরা জানি যে (শেখ আব্দুল্লাহ) গত কয়েক মাস ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে আছেন। উপসাগরীয় সঙ্কটের শুরুর দিকে তিনি যেমন দৃশ্যমান ছিলেন, অনেকদিনই তা চোখে পড়ছে না। কাতারের কারো সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ করতে পর্যন্ত পারছেন না।  

১৪ জানুয়ারি শেখ আবদুল্লাহ একটি ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানেই প্রথম তিনি তার বন্দিদশার কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, তার কিছু হলে সেজন্য দায়ী থাকবেন ‘শেখ মোহাম্মদ’ (কাতারের যুবরাজ)।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) কুয়েতের উদ্দেশে রওনা দেন কাতার রাজ পরিবারের এ সদস্য। পরে তাকে সেখানে যেতে না দিয়ে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এর একদিন আগে আবদুল্লাহর সহোদর শেখ খালিদ দাবি করেছিলেন, আমিরাত কর্তৃপক্ষের অব্যাহত চাপের কারণে তার ভাইয়ের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে।  

তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল আর শিগগিরই হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।