ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

দার্জিলিংয়ে ফের সংঘাত, পুলিশসহ নিহত ২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
দার্জিলিংয়ে ফের সংঘাত, পুলিশসহ নিহত ২ দার্জিলিংয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যাকশন (ফাইল ফটো)

আবারও সংঘাত বাঁধলো পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে। ক’মাস ধরে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনরত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) নেতা বিমল গুরুংয়ের অনুসারীরা এ সংঘাতে জড়িয়েছে পুলিশের সঙ্গে। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দু’জন নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দার্জিলিং শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে পাতলেবাস এলাকায় বিমলকে ধরতে পুলিশ অভিযানে গেলে এ সংঘাত বাঁধে। নিহত দু’জনের একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমিতাভ মালিক, অপরজন বিমলের অনুসারী।

পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়- লিম্ব বস্তি এলাকার অস্ত্র-শস্ত্র জমিয়ে বিমল লুকিয়ে আছেন। তাকে পাকড়াও করতে অভিযানে গেলে জিজেএম অনুসারীরা পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টা জবাব দিলে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল গুলিবিনিময় হয়। এতে মারা যান এসআই অমিতাভ ও বিমলের এক অনুসারী। ঘটনাস্থল থেকে জব্ধ করা হয় ৬টি একে-৪৭ সহ বিপুল অস্ত্র-সরঞ্জাম।

‘গোর্খাল্যান্ড’ নামে আলাদা রাজ্যের দাবিতে জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বিমলের বিরুদ্ধে গত আগস্টে বেআইনি কার্যক্রম (প্রতিরোধ) আইনে মামলা দায়ের করা হয়। রাজ্য সরকার তার অনুসারীদের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবং সংঘাতে বেশ কিছু প্রাণহানি হওয়ায় ওই মামলা দায়ের হয়। এরপর থেকেই পাহাড়ে লুকিয়ে আছেন বিমল।

আলাদা রাজ্যের দাবিতে বামফ্রন্টের আমলে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দার্জিলিং। মমতা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে জিজেএম।

যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে আলাদা রাজ্যের দাবি কোনোভাবেই মানা হবে না বলে বারবার জানানো হয়েছে। তবু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জিজেএম। গত জুন মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জিজেএম সমর্থকরা। এই প্রেক্ষিতে ১০ জুন হরতালের ডাক দেয় জিজেএম। তারপর থেকেই কার্যত অচল হয়ে পড়ে দার্জিলিং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তার আগে সরিয়ে নেওয়া হয় বাংলাদেশিসহ সব পর্যটকদের। যারা আটকা পড়েন তাদেরও সরে যেতে বলা হয়।

এরপর রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার নিরাপত্তার মুখে দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। জুলাইয়ের শুরুতে নতুন করে সহিংসতা ছড়ালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। আগস্টে বিক্ষোভে বিস্ফোরণ ঘটলে আন্দোলনকারী মোর্চার নেতাদের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব, মোর্চা ছেড়ে বেরিয়ে যান নেতা বিনয় তামাং।  

নানা হিসাব-নিকেশে আগস্টের শেষের দিকে মমতার কাছে চিঠি দিয়ে বিমল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি দার্জিলিং গোর্খা পাহাড়ি পরিষদ (ডিজিএইচসি) বা গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) নামে বিশেষ স্বশাসিত পরিষদ গঠন করে পাহাড়িদের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তার চিঠির পর সে মাসেই রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্নে’ সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে অংশ নেন জিজেএম’র বিদ্রোহী নেতা বিনয় তামাং। তিনি বৈঠকের পর হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও মোর্চার অন্য নেতারা তা মেনে না নেওয়ায় সে ঘোষণা কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে আবার ‍মুখোমুখি হয় বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংয়ের অনুসারীরা। মোর্চার প্রধান বিমল স্পষ্ট ঘোষণা দেন, তাদেরসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়া হরতাল প্রত্যাহার হবে না।  

গত ২৬ সেপ্টেম্বর সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটি গঠন ও বৈঠকের আশ্বাস দিলে ২৭ সেপ্টেম্বর বিবৃতি দিয়ে টানা ১০৭ দিনের হরতাল প্রত্যাহার করেন বিমলের অনুসারীরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংকটের বিষয়ে সংলাপের জন্য উদ্যোগ নিলেও বিমল প্রকাশ্যে না থাকায় অপেক্ষাকৃত ‘নবান্ন’পন্থি বিনয়কে সামনে নিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রও তাকেই সব কিছুতে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বিমল সম্প্রতি বার্তা দেন, তিনি ৩০ অক্টোবরেই প্রকাশ্যে আসবেন।  

সংবাদমাধ্যম বলছে, সমঝোতা উদ্যোগের মধ্যেই বিমলকে ধরতে অভিযান এবং এর জেরে নতুন করে এই সংঘাত পাহাড়কে ফের অশান্তির দিকেই ঠেলে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।