ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে সু চির বিচার শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে সু চির বিচার শুরু অং সান সু চি

ঢাকা: মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং লাইংসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

অং সান সু চি-ই প্রথম কোনো নোবেল পুরস্কার জয়ী যিনি ব্যতিক্রমী এই আদালতে বিচারের সম্মুখীন হলেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে অং সান সু চি দণ্ডিত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই আদালতে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শুনানি শুরু হয়। কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশ নেয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন বলেন, তারা মিয়ানমারের সর্বস্তরে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। শুনানিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও অংশ নেন।  

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারে মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। এদিন বিকেলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য শেষে বিবাদী পক্ষ বক্তব্য রাখবেন। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিনভর বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন।  

আট সদস্যের বিচারক প্যানেলে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীরা।

পিপিটি মালয়েশীয় শাখার সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর জানিয়েছেন, পাঁচ দিনের অধিবেশনে বিচারকরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক, বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার বিশ্লেষণ করবেন।  

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রায় ঘোষণা হবে। বিচারকদের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হবে। এই ট্রাইব্যুনালে রোহিঙ্গা ও কাচিন সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের বর্ণনা দিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর তথাকথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির ও রাখাইনের অবরুদ্ধ গ্রামে মানবেতর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে লাখো রোহিঙ্গা।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের মুসলিম নাগরিক রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের প্রভাব সরাসরি এসে পড়ছে বাংলাদেশে। দশকের পর দশক ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। চলতি বছরের ২৫ আগস্টের পর নতুন করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরুর পর আরও প্রায় ৪ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নির্মূল অভিযান বন্ধ ও মানবিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপে চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্টজনরা।

চিঠিতে ১২ নোবেলজয়ী ও ১৫ বিশিষ্টজন সই করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।