ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

সংকটে ফেসবুকের ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল’!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
সংকটে ফেসবুকের ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল’! নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ফেসবুকও আভির্ভূত হবে ‘সংবাদমাধ্যম’র ভূমিকায়!

ব্যবহারকারীদের নিজেদের ওয়ালে দীর্ঘসময় ধরে রাখতে নিত্যনতুন পদ্ধতি আর ফিচার সংযুক্ত করে চলেছে ফেসবুক। বছর দুয়েক ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল’ নামে এমনই একটি ফিচার সংযুক্ত করা হয়। সংবাদমাধ্যমগুলোকে একপ্রকার ফুসলিয়ে তাদের প্রোমোট করার লোভ দেখিয়ে ফেসবুক আহ্বান করে ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল’ ফিচারে সংযুক্ত হতে।

এতে সংযুক্ত হয়ে সংবাদমাধ্যম বা নিউজ ওয়েবসাইট তাদের খবরগুলো প্রকাশের সময় সেগুলোকে ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল প্লাটফর্মে দিয়ে দিতে থাকে। তাতে ফেসবুক সংশ্লিষ্ট সাইটের নিউজ এবং ছবি নিয়ে তা সরাসরি নিজেদের সার্ভারে সংযুক্তির মাধ্যমে তাদের প্লাটফর্মে প্রকাশ করে, ফলে ব্যবহারকারীকে আর সংবাদদাতা মূল সাইটে ঢুকতে হয় না।

এই যে মূল সাইটে ঢুকতে হয় না, এটাকেই ব্র্যান্ডিংয়ের বিপরীত এবং নিজেদের মূল সাইটে পাঠককে না আসতে দেওয়ার ‘বাধা’ হিসেবে ধরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো। নিউইয়র্ক টাইমসের মতো বড় অংশীদার সংবাদমাধ্যম এরইমধ্যে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। অন্য সংবাদ সাইটগুলোও ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলে কনটেন্ট দেওয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।

এই চাপে পড়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও সংবাদ সাইটগুলোকে কনসেশন বা অর্থ আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে, যেখানে নতুন সাবস্ক্রিপশনের মতো অপশনও থাকছে, যেন ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলে কেউ এসে পড়লে তার আয়ের একটা অংশ সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতা সাইটের হিসাব বিভাগে যায়। যদিও এতে নজিরবিহীনভাবে ধরা পড়ছে সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্মটির দুর্বলতা। দুর্বলতা এজন্য বলা হচ্ছে, আগে যেখানে সংবাদমাধ্যমগুলো ফেসবুককে নিজেদের ব্র্যান্ডিং মাধ্যম ধরতো, এখন সেখানে উল্টো ফেসবুককেই ভাবনায় মাথা ঘামাতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোকে অংশীদার হিসেবে ধরে রাখার জন্য।

ফেসবুকের নতুন কোনো ফিচার বা পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে বরাবরই ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হওয়া সংবাদমাধ্যমের মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমস অন্যতম। ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল চালুর ক্ষেত্রেও প্রথম ব্যাচের সংবাদমাধ্যম হিসেবে এগিয়ে এসেছিল নিউইয়র্ক টাইমস। কিন্তু তারাই এখন সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ প্রকাশ করছে।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রোডাক্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কিনসে উইলসন বলেন, আমাদের সাইটে পাঠকদের ধরে রাখতে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলের কোনো ভূমিকা নেই, তারা সাহায্য করতে পারছে না। বরং আমাদের সাইটের লিংকগুলোই পাঠককে আনছে।

তিনি বলেন, কেউ নিউইয়র্ক টাইমসে সরাসরি ঢুকলে সে সাবস্ক্রাইব করতেও আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু ফেসবুকের সেই ফিচার থেকে কেউ আসছে না। সুতরাং ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল আমাদের কাছে মূল্যহীন।  

কেবল নিউইয়র্ক টাইমসই নয়, যে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের ব্র্যান্ডিং বা নিউজ পাঠকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ফেসবুককে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতো, তারাও এখন ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, উল্টো ফলাফলে।  

যেমন লিটলথিংস নামে একটি ওয়েবসাইট আগে তাদের ৮০ শতাংশ ভিজিটর পেতে ফেসবুকের ওপর নির্ভর করতো। এখন ফেসবুক সব নিজের মধ্যে রেখে দিতে চাইছে বলে ওই ওয়েবসাইটটি মাত্র ২০ শতাংশ কনটেন্ট ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলে সংযুক্ত করছে, তা-ও কেবল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য।

সব জায়গার উৎসাহেই ভাটা পড়েছে। দু’বছর আগে যখন ফেসবুক এই ফিচার চালু করেছিল, তখন সবাই দলে দলে যোগ দিয়েছিল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য, পাঠক টানার জন্য। কিন্তু ফেসবুক সবই তাদের ওয়ালে প্রকাশ করতে থাকার ফলে পাঠকরা আর সংবাদের মূল উৎস ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছে না। সেজন্য বিজনেস নিউজ সাইট ফোর্বস, কোয়ার্টজকেও দেখা যাচ্ছে না আর ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল ফিচারে।

ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল সংবাদ সাইটভিত্তিক। স্বভাবতই এ ফিচার চালিয়ে যেতে ফেসবুককে সংবাদ সাইটগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। এখন সব সংবাদ সাইট ‘প্রতারিত’ হয়ে মুখ ফেরাতে থাকায় ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলের কী হবে- সে প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরে। দু’বছরের মাথায়ই কি বন্ধ হয়ে যাবে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল? নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ফেসবুকও আভির্ভূত হবে ‘সংবাদমাধ্যম’র ভূমিকায়!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।