ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ইরানে হামলার জন্য ইসরায়েলকে আকাশপথ ব্যবহার করতে দেবে সৌদি আরব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১০

মধ্যপ্রাচ্য: ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলিতে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে  সৌদি আরব তার আকাশপথ ব্যবহার করতে দেবে বলে জানিয়েছে। খবর দি টাইমস্।



পারস্য উপসাগরীয়  প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো  জানিয়েছে, রিয়াদ তার দেশের উত্তরপ্রান্তের একটি সীমিত আকাশপথ ইসরায়েলকে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে অনেক কম দূরত্ব পার করেই ইরানের উপর হামলা চালাতে পারবে ইসরায়েল।

রিয়াদের আকাশপথ অতিক্রম করার সময় ইসরায়েলি জেট বিমানগুলি যেন কোনো ধরণের হামলার শিকার না হয় রিয়াদ তা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে রিয়াদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যাতে সেসময় নিষ্ক্রীয় থাকে ও তার নিজস্ব যুদ্ধবিমানগুলির বেতারতরঙ্গ যেন বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য রিয়াদ বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করেছে। ইসরায়েলি বিমানগুলো সৌদি আকাশসীমা পার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রিয়াদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফের পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠবে।

এদিকে উপরের সংবাদটি নিশ্চিত করে মার্কিন এক প্রতিরক্ষা সূত্র থেকে জানানো হয়, এর সবই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই করা হয়েছে।

সৌদি ও ইসরায়েল সরকারের মধ্যে বিরোধের সম্পর্ক থাকলে ও ইরানের পরমাণু উচ্চাশা নিয়ে তাদের মধ্যে একটি সাধারণ ভীতি রয়েছে। একই সঙ্গে তেহরান সরকারের প্রতি উভয় দেশেরই বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। একটি সৌদি সূত্র মন্তব্য করেন “আমরা এর সবই জানি। আমরা তাদের (ইসরায়েলিদের) পার (আমাদের আকাশসীমা) হয়ে যেতে দেবো এবং)দেখেও না দেখার ভান করবো। ”

ইরানের উপর যেকোন হামলার চারটি মূল লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে নাতান্জ এবং কুম এর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা, ইস্পাহানের গ্যাস স্থাপনা এবং আরাক এর ভারী-জল (হেভি ওয়াটার) চুল্লি। গৌণ লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বুশেহর এর হালকা-জল (লাইট ওয়াটার) চুল্লি যা তৈরি করা শেষ হলে অস্ত্র তৈরির উপযোগী প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে সক্ষম।

এই লক্ষ্যবস্তুগুলি ইসরায়েল থেকে ১৪০০ মাইল দূরে অবস্থিত। মধ্য আকাশে জ্বালানি সরবরাহ করা হলেও তা ইসরায়েলের জঙ্গি ও বোমারু বিমানগুলির আওতার বাইরে থেকে যায়। উত্তর সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে একটি খোলা করিডোর এই দূরত্বকে অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারে। এই মাপের একটি ব্যাপক হামলা করতে হলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীকে জর্দান এবং উত্তর সৌদি আরব ও ইরাকের আকাশসীমা অতিক্রম করে অনেকগুলি যুদ্ধবিমান নিয়ে যুগপৎ হামলা চালাতে হবে। পারস্য উপকূলে বুশেহ্র অঞ্চলে আক্রমণের জন্য বিমানগুলিকে কুয়েতের দণিপশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে এসে আক্রমণ করতে হতে পারে।

ইরাকের উপর দিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অন্ততপক্ষে মৌন সম্মতির প্রয়োজন হবে। এখনো পর্যন্ত ওবামা প্রশাসন এই অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় সে  ইরানের পরমাণু উচ্চাকাক্সায় রাশ টানতে কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হতে না পারার কারণেই ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত ইরান আক্রমণ করা থেকে বিরত রয়েছে।   তবে ইসরায়েল কেবল  বিমান আক্রমণের মাধ্যমেই ইরানের মূল পরমাণূ স্থাপনাগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে না বলে বিশ্লেষকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। এর কারণ ইরানের পরমাণূ স্থাপনাগুলির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই উন্নত এবং মাটির অনেক নীচে বা পর্বতের মধ্যে লুকানো। অবশ্য জাতিসঙ্ঘের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাটি অকার্যকর প্রমাণিত হলে একটি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের উপর ইসরায়েলের চাপ আরো তীব্র হবে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞাটি জারি করেছে।   অবশ্য  ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ সেটিকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলার যোগ্য ‘ব্যবহৃত রুমাল’ বলে হেলায় উড়িয়ে দেন। নিষেধাজ্ঞাটি ঘোষণার পর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপ “যথেষ্ট নয়” এবং এখন প্রয়োজন বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাড়তি কিছু “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ”।

ইরানের উপর হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গতকাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এর সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি। আহারাওন হিভি ফারকাস্ ২০০৬ সাল থেকে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।   ইরানের উপর বিমান হামলার সিমুলেশনের সঙ্গে ও তিনি জড়িত। তিনি বলেন “আমি জানি ইরানের পরমাণু সামর্থ্য নিয়ে ইসরায়েলের চেয়েও বেশি চিন্তিত সৌদি আরব । ”

ইসরায়েল ২০০৭ সালে ইরানের প্রধান মিত্র দেশ সিরিয়ার একটি সন্দেহজনক পরমাণবিক স্থাপনার উপর বিমান হামলার জন্য তুরস্কের আকাশপথ ব্যবহার করে। অবশ্য  তুরস্ক  তার আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। ধারণা করা হয় , তারা বিষয়টি জানতো এবং ইচ্ছা করেই না জানার ভান করে ছিল।

ইসরায়েলি গোয়েন্দারা বলেন,  ইরানের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে মিশর, সৌদি আরব এবং জর্দানের উদ্বেগ রয়েছে।   তাদের এই উদ্বেগ ইসরায়েল ও  পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের চেয়ে কম নয়। গত বছর ইসরায়েল একটি ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী  যুদ্ধজাহাজ এবং পরমাণু বোমা নিক্ষেপে সক্ষম অন্তত একটি ডুবোজাহাজ সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরে পাঠায়। ইরানের জন্য এটি ছিল একটি কড়া সতর্কবার্তা ।   সেই সঙ্গে যখন ইচ্ছা সে আক্রমণ চালাতে পারে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬৩০ঘন্টা, ১২জুন, ২০১০
ডিসি/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।