ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

সিম পরিবর্তনের আড়ালে আরো ৮৮৩ কোটি টাকা ফাঁকি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
সিম পরিবর্তনের আড়ালে আরো ৮৮৩ কোটি টাকা ফাঁকি গ্রামীণ ফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল এর লোগো

ঢাকা: সিম পরিবর্তনের নামে চারটি মোবাইল কোম্পানি রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন সরকারের আরো ৮৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। আর ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দাবিনামা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।

এলটিইউ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সিম পরিবর্তনের নামে গ্রামীণফোন ৩৭৮ কোটি ৯৫ লাখ, রবি আজিয়াটা ২৮৫ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংক ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ, এয়ারটেল লিমিটেড ৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

এছাড়া ফাঁকি দেওয়া অর্থ উদঘাটনে এর আগে এলটিইউ’র অতিরিক্ত কমিশনার কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এনবিআর।

যে তদন্ত কমিটিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব, ৪ মোবাইল ফোন কোম্পানির প্রতিনিধিও রাখা হয়। ওই কমিটির সদস্য সচিব করা হয় এলটিইউ‘র সহকারী কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সিকে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এই দাবিনামা জারি করে এনবিআর।

এদিকে মোবাইল কোম্পানিগুলোর দাবি, সিম পরিবর্তনের নামে তারা কোনো রাজস্ব ফাঁকি দেয়নি। তাদের কাছে যে তথ্য ছিলো সেগুলো রাজস্ব বোর্ডে  দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের সব নিয়ম মেনেই তারা কাজ করছেন। ফলে রাজস্ব ফাঁকির কোনো কারণ নেই।      

এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সিম পরিবর্তনের নামে এর আগে ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এ জন্যে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের মে মাসে মামলা করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট। দীর্ঘ ২ বছর শেষে গতমাসের ২২ জুন এনবিআরের পক্ষে রায় দেন আদালত। বর্তমানে ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্বের পরিমাণ (সুদসহ) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে। এছাড়া  স্থান ও স্থাপনা ভাড়াবাবদ গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল ৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের রাজস্ব উদ্ধারেও এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ২০১৬ সালের জুন মাসে মামলা করে। যে মামলারও রায় এনবিআরের পক্ষে দিয়েছেন আপিল ট্রাইব্যুনাল।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গাফিলতিতে মূসক পরিশোধ ছাড়া একিভূতকরণ হয়েছে রবি ও এয়ারটেল। আর সেজন্য বিটিআরসি’র বিরুদ্ধে মামলাও করেছে এনবিআর। কেননা  এয়ারটেলের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টুজি স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে সর্বশেষ টুজি লাইসেন্স ও তরঙ্গ নবায়ন বাবদ ৫০৭ কোটি টাকা বিটিআরসি’তে জমা দেয়নি একিভূতকরণ কোম্পানি। এছাড়া একিভূতকরণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফি বাবদ একিভূত কোম্পানিকে আরও ১শ’ কোটি টাকা জমা দেওয়ার কথা থাকলে সেটাও দেয়নি। সব মিলিয়ে রবি-এয়ারটেল একিভূত হতে ৬০৭ কোটি টাকার সঙ্গে মূসক ফি বাবদ ১৫ শতাংশ (৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা) পরিশোধ করে বিটিআরসি থেকে একিভূতকরণ লাইসেন্স নেওয়ার কথা থাকলেও রবি-এয়ারটেল সেটা করেনি। ফলে এখানে দুর্নীতি’র মাধ্যমে বিটিআরসি তাদের একিভূতকরণ লাইসেন্স প্রদান করায় বিটিআরসি’র কাছে রবি-এয়ারটেল একিভূতকরণ ফি বাবদ ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা পায় এনবিআর। এজন্য বিটিআরসি’র বিরুদ্ধে মামলাও করে।

এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো গ্রাহকের সেবা দেওয়ার মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সরকারের প্রযোজ্য রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই দুর্নীতি করছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জনবলের অভাবে সব অনিয়ম ধরা যাচ্ছে না। এছাড়া ফোন কোম্পানিগুলো আরও ৮৮৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দাবি নামা জারি করা হয়েছে। ফোন কোম্পানিগুলো সবসময় তথ্য দিতে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তারা সেটা করে না।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।