ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

চা বাগানেই ইকো ট্যুরিজম ত্রিপুরায়

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
চা বাগানেই ইকো ট্যুরিজম ত্রিপুরায় চা বাগানেই ইকো ট্যুরিজম ত্রিপুরায়/ছবি: শুভ্রনীল সাগর

আগরতলা থেকে: মেঘলীপাড়া। নামটাই অদ্ভুত সুন্দর! মেঘের পাড়া নাকি? শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতার মতো, ‘এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে…’। হবে হয়তো। থাক না কিছু রহস্য। রহস্য জেনে গেলে সৌন্দর‌্য মেঘ হয়ে উড়ে যায়।

আগরতলা শহর থেকে নয়-দশ কিলোমিটারের পথ। অটোরকিশা বা ব্যক্তিগত পরিবহনেই যাওয়া যায়।

যতো এগোই কমতে থাকে কোলাহল, বাস-গাড়ি আর বাড়িঘর। এরপর পথ যেনো চীন দেশের নাচিয়ে ড্রাগন। মুখে আগুন জেলে এঁকে-বেঁকে, উপর-নিচে দুলে দুলে যেমন বিরামহীন নেচে যায়, তেমনি টিলায় উঠছে-নামছে। দু’ধারে অফুরান চা বাগান। এর মাঝে পথ কখনও দস্যি ছেলের মতো যেদিকে মন চায় ছুট লাগায়। পরে বুঝিয়ে-শুনিয়ে গ্রামের মুখো ফিরিয়ে আনা।
 
নিমের ডালে বসা পাখি উড়ে যায়। দূর থেকে গলা উঁচিয়ে তাকানো সুপারি গাছসহ বসত বাড়ি নজরে আসে। তাদের টিনের চাল, খড়ের গাদা। চা বাগান যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকে ধান ক্ষেতের শুরু। আরও কতো নাম না জানা গাছ, লতা-পাতা। কিন্তু সবুজ আর শেষ হয় না! চারদিকে এক অন্যরকম নৈসর্গিকতা। নির্জন অথচ বাঙময়, শান্ত অথচ প্রাণবন্ত, নিস্তব্ধ অথচ জীবন প্রাচুর্যে ভরপুর।
চা বাগানভ্রমণসাথীদের কে যেনো বিড় বিড় করে উঠলো, এখানে যদি থাকা যেতো। বিশেষ করে ওই চা বাগানের টিলায়! বিড় বিড় হলেও বাকিদের মনের ডাক বাকসে একই ইচ্ছের চিঠিটি যেনো ঠিক পৌঁছে যায়!
 
চার চক্রযান বড়পথ থেকে গলিপথে ঢোকে। ঢোকার মুখের ডানদিকের সাইনবোর্ডটি নজরে আনেন অঞ্জন সেনগুপ্ত। তিনি ত্রিপুরা সরকারের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার।
 
‘জৈব গ্রাম।
সুস্থ পরিবেশ ও নিরাপদ খাদ্যের লক্ষ্যে।
জৈব প্রযুক্তি অধিকার।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তর, ত্রিপুরা সরকার। ’
 
এখানে হবে পিকনিক স্পটবোর্ডে এই লেখাগুলোসহ তীর চিহ্ন দিয়ে মেঘলীপাড়া গ্রামটি দেখিয়ে দেওয়া।
 
অঞ্জন সেনগুপ্ত বুঝিয়ে বললেন, মেঘলীপাড়াকেই বলা হচ্ছে জৈব গ্রাম মানে অরগ্যানিক ভিলেজ। প্রায় ১৪শ হেক্টরের মতো গ্রামটির আয়তন। এক হাজার সাত পরিবারের বাস। এই গ্রামে চাষাবাদে একফোঁটাও কেমিকেল ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। সবকিছুই জৈব প্রক্রিয়ায় করা হয়। আমাদের দপ্তর গত দেড় বছর ধরে এ প্রকল্পে কাজ করে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। বলতে পারেন, ত্রিপুরার শতভাগ কেমিকেল মুক্ত প্রথম গ্রাম মেঘলীপাড়া।
 
জৈব গ্রামের বিস্তারিত গল্প আরেক জায়গায়। এখানে আলোচ্য মেঘলীপাড়ার অন্য আরেকটি দিক। যেতে যেতে অঞ্জনই এক ফাঁকে বললেন, এখানে স্যারের ইকো ট্যুরিজম করার ইচ্ছে।
 
স্যার মানে ত্রিপুরা লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর।
ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর 
ওই যে চা বাগানটি দেখছেন, ওখানে ইকো রিসোর্ট করতে চান, আঙুল দিয়ে অঞ্জন দেখান।
 
ওই সময়ের বিড় বিড় যেনো চিৎকারে রূপ নেওয়ার দশা। এতো সুন্দর জায়গায় রিসোর্ট! ডেপুটি স্পিকার সঙ্গেই ছিলেন। তর না সওয়া প্রশ্ন ছুটে গেলো তার দিকে।
 
উত্তরও এলো, আমাদের চা বাগানেরই দু’টো জায়গা আমরা বাছাই করেছি। এখানো দু’টো রিসোর্ট হবে। ২৫ জনের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। শহর থেকে দূরে নিরিবিলি ও শান্তিতে থাকা এবং সেই সঙ্গে প্রকৃতির নিসর্গও যেনো উপভোগ করতে পারে সবাই।
 
দু’টো পিকনিক স্পট হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশে যেনো পিকনিক করা যায়। এর সঙ্গে একটি লেক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য মুক্তমঞ্চ করা হবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি, যোগ করেন ডেপুটি স্পিকার।
 
মেঘলীপাড়া পড়েছে তার নির্বাচনী আসনের মধ্যেই। কো-অপারেটিভের আওতায় এখানে প্রায় ৭শ একরের মতো চা বাগান রয়েছে। এই নয়নাভিরাম চা বাগানের মধ্যেই গড়ে উঠবে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পটি।
 
কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে? যেনো থাকার জন্য আর তর সয়না!
 
তিনি বলেন, সমস্যা হয়ে গেছে- একটা স্কিম ছিলো ভারত সরকারের, যেটার আওতায় করা যেতো— সেটাতে টাকা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। যেহেতু ভেবেছি, এটা করবোই। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে দিয়ে হলেও এটা করবো। আশা করছি আগামী বছর (২০১৮) থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
 
‘মানুষ এখানে এলো, নিরিবিলি কটা দিন থাকলো। সেইসঙ্গে আমাদের জৈব গ্রামে শাক-সবজি, ফলমূল যা হয় তা খেলো। আমরা চাইছি, প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষকে টেনে আনতে। ’
 
মেঘলীপাড়ার একই অঙ্গে এতো রূপ! একে শতভাগ জৈব গ্রাম, এর উপর এখানে ইকো ট্যুরিজম। এদিক দিয়েও ত্রিপুরায় চা বাগানের মধ্যেই ইকো ট্যুরিজম করে প্রথম সারিতে নাম লেখাতে যাচ্ছে খয়েরপুরের এ এলাকাটি।
 
তখন দেখা গেলো- মানুষ টেনে আনা নয়, টেনে না বের করতে হয়!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।