ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

কালো নয় তবুও নাম ‘ব্ল্যাকবক্স’

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
কালো নয় তবুও নাম ‘ব্ল্যাকবক্স’ কালো নয় তবুও নাম ‘ব্ল্যাকবক্স’

চট্টগ্রাম: আকারে তেমন বড় নয়। অবস্থান প্লেনের লেজের দিকে। দেখতেও বাক্সের মতো না। গায়ের রংও কালো না, গাঢ় কমলা! অথচ এ বাক্সের নাম কিনা ‘ব্ল্যাকবক্স’। ‘ব্ল্যাক’ না হয়েও এর নাম ‘ব্ল্যাকবক্স’; যার গুরুত্ব অপরিসীম।

গুরুত্বই বা থাকবে না কেন? যেকোনো প্লেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্যই শেষ ভরসা ‘ব্ল্যাকবক্স’। তাই তো প্লেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সবসময় খোঁজা হয় ব্ল্যাকবক্স ঠিক আছে কিনা! এটি উদ্ধার করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি।

গত ১২ মার্চ হিমালয়-কন্যা নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস২১১ বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রাণহানি ঘটে অর্ধশতাধিক।

তবে এ প্লেন দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) ও ওই ফ্লাইটের পাইলটের মধ্যে কথোপকথনে ‘বিভ্রান্তি’র কথা। এ নিয়ে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ একে অপরের দিকে আঙুল তুলছেন।

ব্ল্যাক বক্স

তবে আশার কথা হলো বিধ্বস্ত প্লেনটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও নেপালের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুর্ঘটনাকবলিত বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ-৪০০ মডেলের এয়ারক্র্যাফটটির তথ্য বিশ্লেষণ করলেই বের হয়ে আসবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্লেন দুর্ঘটনার দিকে তাকালেও বিশেষজ্ঞদের কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে। তবে অনেক প্লেন বিধ্বস্তের সময় বিশেষজ্ঞ দল ‘ব্ল্যাকবক্স’ই উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে ওইসব প্লেনের যাত্রীদের মতো সলিল সমাধি ঘটে দুর্ঘটনার কারণেরও।

এক্ষেত্রে বলা যায়, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০’র হারিয়ে যাওয়ার কথা। চার বছর পূর্ণ হয়েছে গত মার্চের ৮ তারিখে। আর এ মাসেই (মার্চ) বিধ্বস্ত হলো বিএস২১১।

এমএইচ৩৭০ আসলে কোথায় ছিল তা এখনো জানা যায়নি। এমনকি সম্ভাব্য কোনো এলাকা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি মালয়েশিয়ার ওই প্লেনের ব্ল্যাকবক্স।

প্লেনে ব্ল্যাকবক্সের অবস্থান

একই অবস্থা ২০১৬ সালে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ারএশিয়া ইন্দোনেশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ এরও। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর ১৬২ জন আরোহী নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় প্লেনটি।

কয়েকদিন পর বোর্নিও দ্বীপের কাছে জাভা সাগরে এর ধ্বংসাবশেষের প্রথম কিছু অংশ ও কয়েকটি মরদেহের খোঁজ মেলে। প্রায় অর্ধশতাধিক মরদেহ উদ্ধার হলেও সাগরসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালিয়ে উদ্ধার করা যায়নি ব্ল্যাকবক্সটি।

এক্ষেত্রে আশা করি ফ্লাইট বিএস২১১’র বিধ্বস্তের কারণ জানা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে নেপাল গঠিত তদন্ত কমিটি কাজও শুরু করেছে। বাংলাদেশও বসে নেই। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলও ইতিমধ্যে নেপাল গেছেন।

ব্ল্যাকবক্সের বিষয়ে বাংলাদেশে এয়ারক্র্যাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপের একজন পরামর্শক বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তথ্য উদ্ধার করতে প্লেনটির প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে ব্ল্যাকবক্সটি পাঠাতে হবে। তারা ডিকোড (বিশ্লেষণ) করে দুর্ঘটনার কারণ জানাতে পারবে। ব্ল্যাকবক্স থেকে প্লেনের যান্ত্রিক তথ্য ও পাইলটের কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হয়।

এ ছাড়া এশিয়ায় সিঙ্গাপুরেও এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান ওই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো দুর্ঘটনার এক বছরের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করার নিয়ম রয়েছে।

প্লেনে যেসব দেশের আরোহী থাকে, তাদের দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অনাপত্তি পেলে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কোনো দেশ আপত্তি জানালে পুনরায় তদন্ত করতে হয়।

কী তথ্য থাকে ব্ল্যাকবক্সে’?

বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, প্লেনের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণকারী যন্ত্র ‘ব্ল্যাকবক্স’। এর দুটি অংশ থাকে। একটি ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) ও ককপিট ডাটা রেকর্ডার (সিভিআর)।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ব্ল্যাকবক্সে’ একটি প্লেন কত কিলোমিটার গতিবেগে উড্ডয়ন করছে, কত উচ্চতায় উড়ছে, তখন তাপমাত্রা কত, পাইলট কখন গতি কমাচ্ছেন-বাড়াচ্ছেন, জ্বালানি তেলের চাপ ও পরিমাণ, প্লেনের অন্যান্য যন্ত্রাংশের কার্যক্রমসহ যান্ত্রিক ত্রুটি সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ব্ল্যাকবক্সের এফডিআর অংশে সংরক্ষিত থাকে।  

আর সিভিআর অংশে জমা থাকে ককপিট পাইলট ও কো-পাইলটের কথোপকথন এবং পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কথোপকথন। এমনকি, পাইলট ছাড়া অন্য কেউ ককপিটে ঢুকে কথা বললে তারও রেকর্ড জমা হয় ককপিট ডাটা রেকর্ডারে।

স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ‘ব্ল্যাকবক্স’ প্লেন থেকে ছিটকে পড়লেও যেন সুরক্ষিত থাকে, সেজন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। আগুন ও পানি থেকে সুরক্ষার জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ‘ব্ল্যাকবক্সে’র রং গাঢ় কমলা হওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। যেকোনো জায়গায় সহজে দৃশ্যমান হওয়ায় খুঁজে পাওয়া সহজতর করতেই এ রং ব্যবহার করা হয়।

প্লেনের লেজের অংশে থাকা ‘ব্ল্যাকবক্সে’ আলাদাভাবে ব্যাটারি যুক্ত থাকে। থাকে ম্যাগনেটিক মেমোরি ইউনিট। ১৫ থেকে ৩০ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে পুরাতন তথ্য মুছে নতুন করে রের্কড করে রাখে ‘ব্ল্যাকবক্স’।

এদিকে বৃহস্পতিবার ইউএস-বাংলার প্লেন বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্ত প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন, এক বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে তদন্ত শেষ হতে।

সময় যাই হোক, উন্মুক্ত হোক প্লেন বিধ্বস্তের কারণ। আর এগিয়ে যাক বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮

টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।