ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

চীনাদের অর্ধসেদ্ধ খাবারের স্বাদ

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৮
চীনাদের অর্ধসেদ্ধ খাবারের স্বাদ চীনের একটি রেস্টুরেন্টে সাজানো খাবার। ছবি: বাংলানিউজ

চীনের সাংহাই থেকে: একটি স্যুপের বাটি, আরেকটি ছোট খাবার বাটি, একটি গ্লাস আর দুইটা স্টিক। চীনের কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকলেই এমন আতিথেয়তা নিতে হবে। পলিথিন দিয়ে মোড়ানো আকারে অনেক ছোট এসব পাত্রেই খেতে হয়। 

গোয়াংজু, সাংহাই, সুজো, শানডং- চার দিনে চীনের এ চারটি শহর ঘুরে এভাবেই খাবার খেতে হলো। তবে সমস্যা পাত্রে নয়! খাবারে।

কেন?

বাংলাদেশে যারা চাইনিজ খাবার মজা করে খান, তারা যদি মনে করেন চীনা রেস্টুরেন্টেও বা চীনে সেই একই খাবার। তাহলে ভুল করবেন। কারণ চীনের আর বাংলাদেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এক নয়।

মুরগীর সেদ্ধ পা, ঝুঁটি, ঠোঁটসহ মাথা, নাড়িভূড়ি- বাংলাদেশে ফেলে দেওয়া হলেও এসব খাবারই এখানে সুস্বাদু মেন্যুর তালিকায়। আর শুকরের মাংস তাদের খাবারের অন্যতম উপাদন। সব খাবারেই কোনো না কোনোভাবে শুকরের মাংস জুড়ে দেওয়া যেন চীনা রন্ধনশিল্পীদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। এটা দিয়ে বেশ তৃপ্তিতেই আহার সারে চীনারা।  

প্রায় সব খাবারে শুকরের মাংস মিলিয়ে দেয় বলে এটা বোঝা কঠিন, কোন খাবারে শুকরের মাংস নেই। শুকরের মাংসের কুচি করে এমনভাবে খাবারে মিশিয়ে দেয়, মনে হতে পারে এটা গাজরের কুচি।

চীনের রেস্টুরেন্টে মুখরোচক খাবার।  ছবি: বাংলানিউজপ্রতিদিন চারশ’ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ও রেলপথ ঘুরে খাবার পরিবেশনায় আরও অনেক বৈচিত্র্য চোখে পড়েছে। খাবার অর্ধসেদ্ধ বা স্ট্রিমড করেই খায় চীনারা। তাই খাবার খুব বেশি রান্না তারা করে না তারা। যেমনটা বাংলাদেশে সালাদ খাওয়া হয়। চীনা খাবার অনেকটা তার কাছাকাছি।  

চীন ঘুরতে বা ব্যবসার কাজে গিয়ে ভাষাগত সমস্যায় পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা তৈরি হয় খাবার সংক্রান্ত কারণে। অর্থাৎ খেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েননি, এমন বাংলাদেশি পাওয়া যাবে না বলা যায়।

খাবারে গুঁড়ো মরিচ আর হলুদের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে অনেক খাবারে লবণের পরিমাণটা বাড়িয়েই দেয়। ভাতের মাড় তারা লবণ ছাড়া মজা করে খায়, মাড়ের সঙ্গে থাকে স্ট্রিমড বা অর্ধসেদ্ধ রাইস।  

রেস্টুরেন্টের এ খাবার ছাড়াও চীনে কারও অফিসে গেলে অথবা কারও আপ্যায়ন নিতে গেলে সেখানে আরেক বৈচিত্র্য। শুকনো চা-পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে একের পর এক কাপ পান করাতে থাকবে। গুগল ঘেঁটে এর একটি কারণও জানা গেলো। খালি কাপকে চীনারা অমঙ্গল মনে করে। যখনই কাপের চা পান শেষ হবে, তখনই আবার কাপ ভরে ঢেলে দেওয়া তাদের রীতি। চীনাদের সঙ্গে কোথাও বসে আড্ডা দিতে গেলেও এই রেওয়াজ দেখা যায়।

এতোসবের পরও বাংলাদেশি বা ভারতীয়রা পুরো চীন খুঁজে বের করে ফেলেন দু’একটি মাসালা রেস্টুরেন্ট। যেমনটা সাংহাই ঘুরে পাওয়া গেলো।  

চীনে ব্যবসার কাজে বহুবার এসেছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি বলছিলেন, বাংলাদেশি বা ভারতীয় খাবার মেলে শুধু কুনমিং, গোয়াংজুসহ ওই অঞ্চলের লোকদের যাতায়াতস্থল এলাকাগুলোতে। সাংহাইতেও দু’একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, কিন্তু ক্রেতা শূন্য। কারণ, এতো বড় শহরে কে-ইবা খুঁজে পাবেন দোকানগুলোর হদিস?

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮ 
এসএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।