ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আরব-আমিরাত

মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর। ছবি: বাংলানিউজ

দোহা, কাতার থেকে: এখানে সকাল আটটায় সূর্য মাথার ওপর। সূর্যকে মধ্যপ্রাচ্যে এসে আদিখ্যেতা করে মামা ডাকার কোনো উপায় নেই। ঠিক যেন উত্তপ্ত কড়াই ঢেলে দেয়া হচ্ছে মাথার ওপর।

বেলা ১১টার দিকে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়। বিকেল ৪টার পরই কেবল তাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

মানুষের সংখ্যা বা গাড়ির সংখ্যা অথবা ভবনের সংখ্যার চেয়ে এখানে গাছ কম। অনেক কষ্টে যে গাছগুলো প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে সেগুলোও খুব বেশি হাত-পা মেলতে পারে না।

অবশ্য কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবেশ করলে এখন আর মরুময়তা চোখে পড়ে না। তবে ধূসর বালুর মতোই বাদামি রঙা শহর এটি। এখানে বাণিজ্যিক ভবন ছাড়া আবাসিক ভবনগুলো দুই বা তিন তলার বেশি খুব একটা চোখে পড়ে না। প্রাচীন আরব্য স্থাপত্যশৈলী মেনেই এখানকার বাড়িগুলো তৈরি। ছোট জানালা আর উঁচু দেয়াল। আর রঙ বাদামি। মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর।  ছবি: বাংলানিউজমরুভূমির বালু চোখে না পড়লেও বাদামিরঙ স্থাপনা দেখতে দেখতে ভোলা যাবে না যে এটা মরুর দেশ। ভরদুপুরে এখানে রাস্তায় মানুষ চোখে পড়ে না। মাত্র ২৭ লাখ জনসংখ্যার এদেশে তখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানেই আশ্রয় নেয় মানুষ। পথে কয়েকজন বাংলাদেশি ও ভারতীয় শ্রমিকই দেখা যায় কদাচিৎ। তাপ সামনের মাস থেকে আরো বাড়বে।

বাংলাদেশি শ্রমিক মুহিব বাংলানিউজকে জানান, জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এতোই গরম থাকে যে, সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বাইরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। তাপমাত্রা তখন ৫২ থেকে ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে।

কাতারে এখন আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে বেশ সুন্দর ভবন গড়ে উঠেছে। তবে পারস্য উপসাগরেতীরের ওয়েস্ট বে'র বুর্জ দোহা, টর্নেডো টাওয়ার, হিলটন প্লাজার ছবি দেখে দোহার আসল চিত্র পাওয়া যাবে না। এর বাইরের সব ভবন কিন্তু এমন নয়। তবে পরিচ্ছন্ন শহর, প্রশস্ত সড়ক, সারা শহর জুড়েই চলছে নির্মাণকাজ। পাবলিক বাস খুব বেশি চোখে পড়ে না। আর মেট্রোরেলের কাজ মাত্র চলছে। টার্গেট ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আগেই সব নির্মাণকাজ শুরু তাগিদ। তাই কাজ চলছে দিন রাত। মরুর দেশের রাতের এক বাদামি শহর।  ছবি: বাংলানিউজ
সার্বভৌম কাতার পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরবর্তী দেশ। এর সঙ্গে দক্ষিণে সীমান্ত রয়েছে সৌদি আরবের। পাশেই দ্বীপদেশ বাহরাইন। আর মেরিটাইম বর্ডার বা সমুদ্রসীমান্ত রয়েছে আরব আমিরাত ও ইরানের সঙ্গে।  

বাংলাদেশের মতোই ১৯৭১ সালে ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় কাতার। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অটোমান শাসন থেকে ব্রিটিশরা কাতারের ক্ষমতা নেয়। আর উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ঐতিহ্যবাহী থানি পরিবার দেশটির শাসনভার নেয়। শেখ জসিম বিন মোহাম্মদ আলী কাতার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন।

কাতার এখন অারবের সবচেয়ে উন্নত দেশ এবং সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশ। যা ৬৮ হাজার ডলারেরও বেশি। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম খনিজ তেল রপ্তানিকারক দেশ কাতার।

মধ্যপ্রাচ্যে না ঘুরলে এর সম্পর্কে জানা যাবে না। এখানে যেমন বোরখা আর জোব্বাপরা মানুষ রয়েছে, তেমনি শার্ট প্যান্ট আর টপস পড়া পুরুষ ও নারীকেও চোখে পড়ে। আর কর্মস্থলে নারীদের উপস্থিতিও বেশ ভাল। শুধু বিদেশি কর্মী নয়, বোরখাপরা কাতারি নারীদের উপস্থিতিও ভাল। এখানে আরবির সঙ্গে ইংরেজি আর হিন্দী ভাষার প্রভাবও রয়েছে। মরুর দেশের উত্তপ্ত এক বাদামি শহর।  ছবি: বাংলানিউজ
এখানে ক্লাব থেকে শুরু করে বার-পাব সবই রয়েছে; তবে সেখানে খরচ পড়বে দুনিয়ার যে কোন শহরের তুলনায় অনেক বেশি।

এখানকার পুরুষদের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার মুসল্লীদের মতো লম্বা দাড়ি চোখে পড়বে না। তবে সাদা লম্বা জোব্বা আর মাথায় রুমাল জড়িয়েই শেখদের চলাচল।

** ব্যাংকের রেট কম বলেই প্রবাসে হুন্ডির দাপট!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।