ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

লন্ডন

বৈধতা চেয়ে পর্তুগিজ পার্লামেন্টের সামনে অভিবাসীদের বিক্ষোভ

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
বৈধতা চেয়ে পর্তুগিজ পার্লামেন্টের সামনে অভিবাসীদের বিক্ষোভ

লন্ডন: বৈধ অভিবাসীর স্বীকৃতির দাবিতে পর্তুগিজ পার্লামেন্ট সাও বেন্তো প্যালেস'র (São Bento Palace) সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী।    

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বেলা ২টায় পার্লামেন্টে ইমিগ্রেশন বিষয়ে  বিতর্ক চলাকালে অভিবাসী কমিউনিটি এই বিক্ষোভ করেন।

পর্তুগাল আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরুল আলম জসিম ও বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ তালুকদারসহ  দল দুটির সমর্থক ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ বাংলাদেশি অভিবাসী যোগ দেন এই বিক্ষোভে।  

অভিবাসীদের সমর্থনে বিক্ষোভে অনেক পর্তুগিজ নাগরিকও অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে 'সলিডারিটি ইমিগ্র্যান্টস' এর সভাপতি তিমোতেও মাচেদো (Timoteo Macedo) বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন থেকে আমরা সরবো না।

এই প্রথমবার অভিবাসী কমিউনিটির মানবিক দাবি নিয়ে আমরা পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়েছি। আজকের এই কর্মসচি আমাদের দাবি আদায়ের পথ দেখাবে।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধে এখনও আমরা জয়ী হইনি, তবে আজকের বিক্ষোভ আমাদের দাবির পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামী ১৩ নভেম্বর মারতিম মনিস-এ (বাঙালিপাড়া বলে খ্যাত) দ্বিতীয় বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ছি না।

এর আগে তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেন,  বর্তমান অবস্থায় অভিবাসীদের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। কৃষি সেক্টরে কর্মরত অভিবাসীরা বছরের পর বছর ট্যাক্স দেয়ার পরও স্থায়ী রেসিডেন্টশিপ পাচ্ছে না। অথচ আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। অভিবাসীরাই এই কৃষি সেক্টর বাঁচিয়ে রাখছে। পর্তুগিজরা এই সেক্টরে কাজ করতে চায় না।

অভিবাসন ক্ষেত্রে বর্তমান অরাজকতা চলতে থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যে কর্মী সংকটের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়বে পর্তুগালের কৃষি সেক্টর।

ইমিগ্রেশন আইনের অভিবাসীবান্ধব আর্টিক্যাল ৮৮ বহাল রাখার আহবান জানিয়ে সলিডারিটি ইমিগ্রেন্টস-এর সভাপতি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এই ধারা রহিত বা চেঞ্জ করা হয় তাহলে বৈধতার জন্য অপেক্ষমানরা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পর্তুগালে বসবাসরতরাও সমস্যায় পড়বেন।

অধিবাসীরা সরকারের বোঝা নয়, কাজ করেই তারা এখানে বেঁচে আছে। অভিবাসী কমিউনিটির কঠোর পরিশ্রম পর্তুগালের অর্থনীতি মজবুত করছে।

এরা সরকারকে ট্যাক্স দিতে চায়, অথচ আমাদের সরকার এই ট্যাক্স নিতে চায় না, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!
 
বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা, মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ক্ষমতাসীন পর্তুগাল সোস্যালিস্ট পার্টির কাউন্সিলর রানা তসলিম উদ্দিন অভিবাসীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘অভিবাসীদের স্বর্গ বলে খ্যাত পর্তুগালের সাম্প্রতিক সংকট থেকে আমরা উত্তরণ চাই। মানবিক দেশ হিসেবে পর্তুগালের যে ইমেজ, সেটি কোনোভাবেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া যায় না। ’

ইমিগ্রেশন আইনের অভিবাসীবান্ধব আর্টিক্যাল ৮৮ বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পর্তুগালের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার জন্যেই অভিবাসীদের পর্তুগিজ সমাজের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। দাবি আদায়ের জন্য অভিবাসী কমিউনিটির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, ইমিগ্রেশন আইনের ধারা ৮৮ বহাল থাকবে কি না –এ নিয়ে পার্লামেন্টে নির্ধারিত বিতর্ক ছিলো বৃহস্পতিবার। অভিবাসীবান্ধব এই ধারা বহাল রাখার দাবিতেই বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি বর্তমানে পর্তুগালে বসবাস করলেও এদের বিরাট একটি অংশ এখনও বৈধতা পাননি। পেটে-ভাতে চাকুরি করে নিয়মিত ট্যাক্স দিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে রেসিডেন্টশিপ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। ২০১৪ সালে ব্রিটেনের স্টুডেন্ট ভিসা মেয়াদ-উত্তীর্ণ তরুণদের একটি অংশ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হয়ে পর্তুগালে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

রেসিডেন্টশিপ পেতে তাদেরও বেগ পেতে হচ্ছে। আগে ১০/১২ মাস ট্যাক্স দিলেই রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়া যেতো । সেটি আর এখন হচ্ছে না। অনেককেই পর্তুগাল ছাড়ার (কান্ট্রি আউট) নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, কারও কারও আবেদন ঝুলে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়:০৮০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।