ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

মিয়ানমার মন্ত্রীর ঢাকা সফরে কূটনৈতিক সাফল্য দেখছে সরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৭
মিয়ানমার মন্ত্রীর ঢাকা সফরে কূটনৈতিক সাফল্য দেখছে সরকার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। 

তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ যে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেল দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের বাংলাদেশ সফর সেই সমাধানের উপায় বের করার উদ্যোগের সূচনা।  
সু চি’র মন্ত্রী আসছেন রাতে

আর এই সফরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ৫ দফা প্রস্তাব অনুযায়ী এ সমস্যার একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

সোমবার (০২ অক্টোবর) মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে ঢাকায় আসছেন। ওইদিন দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।  

বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের যে দৃঢ় অবস্থান রয়েছে তা তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বলা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।  

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সোচ্চার রয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের মন্ত্রীর ঢাকা সফর ওই তৎপরতারই একটা অংশ।  

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, এটা মিয়নমারের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি। আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা তৈরি হবে।  

‘তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের বক্তব্য কী? তারা কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে তাও দেখার বিষয়,’ বলেন তিনি।  

গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। এরপর থেকেই ওই অঞ্চলে অভিযান চালায় মিয়ানমার বাহিনী।  

আরও পড়ুন>>
** 
ওয়ান স্টপে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা, যোগ দিচ্ছে সেনাবাহিনী
মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় মগরা। তাদের অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞে গত ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে সহায়-সম্বল ও স্বজন হারানো নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।  

গত এক মাসের বেশি সময়ে নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়ে তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থাও করছে বাংলাদেশ।  

তবে নাফ নদী পেরিয়ে সর্বশান্ত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী স্রোত এখনও অব্যাহত রয়েছে।  

সূত্র বলছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে শুরু থেকেই সরকার বলে আসছে মিয়ানমারের এই নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে।  

এমনকি তাদের নাগরিক অধিকার ফেরত দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সরকারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ।  

গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ ও নিজ দেশে তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে শেখ হাসিনা ৫ দফা প্রস্তাব দেন। যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও সৃষ্টি হয়েছে।
 
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আলোচনা হয়।  

তখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জোর দিয়ে বলেছে বাংলাদেশ। তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমারকে একটি রূপরেখাও দেওয়া হয়।

ঢাকায় এলে মিয়ানমার যেন এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আসে, সেটাও নিউইয়র্কের আলোচনায় উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকায় আসছেন বলে জানান সরকারের নীতিনির্ধাকরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিষয়টাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি আমরা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দিক থেকে যে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হওয়ার ফলে মিয়ানমার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।  

‘আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে। ’ 

সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের মন্ত্রীর ঢাকা আসার বিষয়টিকে ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে মনে করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৭ 
এসকে/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।