ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

বাংলা কি ‘মিশ্র ভাষা’ হয়ে যাচ্ছে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮
বাংলা কি ‘মিশ্র ভাষা’ হয়ে যাচ্ছে? ভাষার ফেব্রুয়ারি আশার ফেব্রুয়ারি

ভাষাবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ‘মিশ্র ভাষা’ বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। যেখানে বহু জাতি, বহু সংস্কৃতির মেলবন্ধন থাকে, সেখানে মিশ্র ভাষা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাভাষার ক্ষেত্রে ‘মিশ্র ভাষা’র পরিচিতি একেবারেই প্রযোজ্য না হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে দিনে দিনে বাংলাভাষা নানা মিশ্রণে আকীর্ণ হচ্ছে।

এটাও ঠিক যে, ভাষাকে বয়ে চলতে হলে নানা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে অনেক কিছুই আহরণ করতে হয়। খোদ বাংলা ভাষাতেই অজস্র বিদেশি শব্দ রয়েছে।

কিন্তু সেগুলো বাংলাভাষার কাঠামোতে আত্মস্থ হয়েই আছে। বিকৃত মিশ্রণে পরিণত হয়নি। ভাষায় বিভিন্ন নতুন ও বিদেশি শব্দের অন্তর্ভুক্তি গ্রহণযোগ্য হলেও ভাষার মধ্যে অপরিকল্পিত মিশ্রণ বিপজ্জনক।

বাংলাভাষায় মিশ্রণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ, বাংলা নামে মাঝে মাঝে যা কানে আসে, তাকে ভুল মিশ্রণই বলতে হয়। বিদেশি শব্দ নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করে ভাষাটি ব্যবহার করা হয় না। বরং কিছু বিদেশি শব্দের মতো করে বাংলাকে উচ্চারণ করার এবং ভুল পন্থায় বিভিন্ন বিদেশি শব্দকে জুড়ে দেওয়ার ফলেই এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা প্রবাহটিও এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বা শুদ্ধতা হারাচ্ছে। বিশেষ্য, বিশেষণ কিংবা কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া, সর্বনাম ইত্যাদি বাংলা ভাষায় যেভাবে ব্যবহার করা সিদ্ধ, সেটা না করা হলেই বাক্য গঠন ও ভাষা কাঠামো পতন আসে। এই বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে হয় ভাষার প্রয়োগ ও ব্যবহারের সময়। তাহলেও মিশ্রণ বা দোষণীয় ব্যবহারের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

বাংলা ভাষাকে মিশ্রকরণের পেছনে দায়িত্ব একজনের নয়, বহুজনের। যে স্কুলগুলো বাংলা বলতে দিতে চায় না, বাংলা পড়াতে চায় না এবং যে সমস্ত অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের শুদ্ধ বাংলা চর্চা থেকে শতহস্ত দূরে রাখতে চান, তাদেরকে মার্জনা করার সুযোগ থাকে না। আধুনিকতা বা স্টাইলের নাম করে মাতৃভাষাকে বিকৃত বা মিশ্রিত করার অধিকার কারোই থাকার কথা নয়। এমন কর্ম (কুকর্ম) যারা করছেন, তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে বৈকি!

ভাষা বিকৃতি ও মিশ্রকরণের কুপ্রভাব পথেঘাটে, পরিবারে, সমাজে পড়ছে। এর পেছনে আরেক অনুঘটক হলো মিডিয়া। বিশেষত এফএম রেডিও’র ব্যাপক প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষারীতিতে একটি অমার্জনীয় অধঃপতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের উচ্চতর মহল থেকেও এ ব্যাপারে ক্ষোভের উচ্চারণ শুনতে পাওয়া গেছে।

কম্পিউটারের অবাধ প্রচলনের ফলেও ভাষাকে সংক্ষিপ্তকরণের নামে বিকৃত বা মিশ্রিত করার একটি প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে। বিভিন্ন স্ট্যাটাসে বা মেসেজে এমন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, সাধারণের জন্যে যা ক্ষতিকর। অর্থের দিক থেকে এবং প্রয়োগের দিক থেকে এক্ষেত্রে শুদ্ধতার চরম হানি ঘটানো হচ্ছে।

বাংলাভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড অবশ্যই এটা যে, ভাষাটি বাংলাদেশের বাংলাভাষীদের। বিশ্বের সকল বাংলা ভাষীই এই ভাষা পরিমণ্ডলের অংশ। ব্যাকরণ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় পুষ্টি লাভ করেই এ ভাষা চর্চিত ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পটভূমিটি সামনে না থাকলে বাংলাভাষার উত্তরাধিকার বহন করার কাজটি যথাযথ হওয়াও অসম্ভব।         

বাংলার মতো একটি ধ্রুপদী ভাষা, কোটি কোটি মানুষের ভাষা শুধু একটি শ্রেণির ভুল ব্যবহারজনিত উদাসীনতায় বিকৃত ও মিশ্রিত হয়ে শুদ্ধতা হারাবে, এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। এই ভুল একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত এবং জ্ঞানের স্বল্পতাজাত। ফলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিহত করা আবশ্যক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমপি / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।