ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু-পরিবারের অবিচল সমর্থন পেয়ে আসছে ফিলিস্তিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
বঙ্গবন্ধু-পরিবারের অবিচল সমর্থন পেয়ে আসছে ফিলিস্তিন ...

ঢাকা: ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, তার দেশ ফিলিস্তিন বরাবরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের দৃঢ়, অব্যাহত ও অবিচল সমর্থন পেয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ফিলিস্তিনের দৃঢ় সমর্থক। এই ইস্যুতে আমরা তাদের কাছ থেকে সব সময় নেতৃত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি। 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’কে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।  

শনিবার (১৯ মে) রাতে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে বাংলানিউজকে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

এ সময় ফিলিস্তিন ও পূর্ব জেরুজালেমের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরেন তিনি।  

তেলআবিব থেকে পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস স্থানান্তর কেন করেছে-- এ প্রশ্ন রাখা হয় তার কাছে। জবাবে ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রামাদান বলেন, এটা এখন সবারই প্রশ্ন। আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও আরববিশ্বের পরিস্থিতি দেখছি। আবার পশ্চিমা গোষ্ঠী, বিশেষ করে  মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিও দেখছি। তবে এটাই দেখতে পারছি, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চাইলেই যে কোনো কাজ  করতে পারে। তারা এটা বিশ্বাসও করে। অথচ আমরা তা পারি না।

‘পূর্ব জেরুজালেমের এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কি?’-- জানতে চাওয়া হলে জবাবে ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, এই পরিস্থিতিতে এখন আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রকে বলা, হয় তাদের পদক্ষেপ সঠিক, অথবা (আর দ্বিতীয়টি  আমাদের দেখাতে হবে), যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ সঠিক নয়। তাদের পদক্ষেপ ভুল। আর সেটা দেখাতে হলে তাদের বিপক্ষে আরব জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের মুখোমুখি হতে হবে। লড়াই করতে হবে। তবে লড়াই বলতে আমি এটা বোঝাচ্ছি না যে, তাদের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্ক ও বিমান নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। এই লড়াই করার জন্য আমাদের সামনে অনেক পথ রয়েছে। সুসভ্য উপায়ে লড়াই করতে হবে। আমাদের ক্ষোভ, আমাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করারও অনেক মাধ্যম আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই লড়াইয়ের একটি উদাহরণ আমি দিতে চাই, সেটা হলো তুরস্ক সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে। এটা এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের প্রত্যাশা, অন্যসব মুসলিম দেশও যেন তুরস্কের এই পথ অনুসরণ করে।  

বাংলাদেশ এরই মধ্যে এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে। ওআইসির বিশেষ সামিটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আবুল হাসান মাহমুদ আলী অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের এই পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য জানেতে চাইলে ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, এই ঘটনায় পুরো বিশ্বই নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্যই নিন্দা জানিয়েছে। তবে মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা আরো প্রতিক্রিয়া আশা করছি। কেননা অমুসলিম দেশগুলো জেরুজালেম সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এই নেতৃত্ব মুসলিম দেশগুলোকেই দিতে হবে। আর অন্যরা মুসলিম দেশগুলোকেই অনুসরণ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি। আর এটা সবাই জানেন যে, জেরুজালেম ইস্যু মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ে রয়েছে।  

পূর্ব জেরুজালেম ইস্যুতে বাংলাদেশ আরো কি কি করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ। আমরা এখানে কোনো কিছু আরোপ করতে পারি না। বাংলাদেশে অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যারা  ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিজ্ঞজন। তাদের সুবিবেচনা ও সাহস রয়েছে। আমি বোঝাতে চাইছি এসব শীর্ষ রাজনীতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন। তার মধ্যে প্রজ্ঞা ও সাহস রয়েছে।  এই ইস্যুতে কি করা প্রয়োজন, সেটাও তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ফিলিস্তিনের দৃঢ় ও অবিচল সমর্থক। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কাছ থেকে ফিলিস্তিন অব্যাহত সমর্থন পেয়ে আসছে। এই ইস্যুতে আমরা তাদের কাছ থেকে নেতৃত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।  

এক প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, পূর্ব জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস স্থাপন করেছে। তবে পূর্ব জেরুজালেম ছোট একটি ভূখণ্ড। এর আয়তন মাত্র সাত বর্গ কিলোমিটার। তবে এটা মাত্র সাত বর্গ কিলোমিটার ভূমির বিষয় নয়। এটা প্রতিটি ফিলিস্তিনি, আরব দেশগুলোর প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি মুসলিম-খ্রিস্টানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান, পবিত্র স্থান। এটা ফিলিস্তিনের হৃদয়। আর হৃদয় ছাড়া যেমন কোনো দেহ চলতে পারে না। এটাও ঠিক তেমনই।  

পূর্ব জেরুজালেম ইস্যুতে আরবলীগের ভূমিকা জানতে চাইলে ইউসুফ রামাদান বলেন, জেরুজালেম ইস্যুতে আরব লীগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। তাদের কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। তাদের ভূমিকা শুধু নিন্দা, বক্তৃতা-বিবৃতি ও রেজ্যুলেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারা যথাযথভাবে সঠিক কাজটি করছে না।  কেননা শত্রুরা যখন তাদের সব ধরনের আগ্রাসী ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড যখন চালিয়ে যাচ্ছে, যখন তারা  আন্তর্জাতিক বিধি মেনে চলছে না, তখন এসবের বিরুদ্ধে তো কেবল দায়সারা নিন্দা প্রকাশ করলেই চলে না! 

উল্লেখ্য, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন গত ১৪ মে জেরুজালেমে তাদের দূতাবাস খুলেছে। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনে। সেখানে ইসরায়েলের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৬০ জন ফিলিস্তিনী নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন কয়েক হাজার নাগরিক।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
টিআর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ