ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৯৭ বছরেও পূরণ হয়নি চা শ্রমিকদের দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
৯৭ বছরেও পূরণ হয়নি চা শ্রমিকদের দাবি চা বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহ করেছেন নারী শ্রমিকেরা

হবিগঞ্জ: ২০ মে। চা শ্রমিক দিবস। ১৯২১ সালের এই দিনে হাজার হাজার চা শ্রমিককে দমিয়ে রাখার উদ্দেশে অসংখ্য শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে বৃটিশ শাসকেরা।

এরপর থেকেই দুঃখকে সামনে রেখে চা শ্রমিকেরা দিনটি পালন করলেও নির্বিচারে হত্যার ৯৭ বছরে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি দিবসটি। যে কারণে দুঃখের সীমা নেই চা শ্রমিকদের।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর বাগানের চা শ্রমিকরা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরলেও ঘুরছে না আমাদের ভাগ্য। বাংলাদেশের চা শিল্প বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের মুজুরি রয়ে গেল ৮৫ টাকাতেই। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ তো পাচ্ছেই না বরং সংসারের ঘানি টানতে টানতেই চলছে বছরের পর বছর। দৈন্যতা এখনও তাদের নিত্যসঙ্গী। কর্মের সঠিক মূল্যায়নসহ ২০ মে দিনটিকে জাতীয় স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান তারা।

চা শ্রমিক নেতা স্বরজিৎ ফারসী বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও পূরণ হচ্ছে না তাদের মৌলিক চাহিদা। অবিলম্বে চা শ্রমিকদের চুক্তি নবায়ন, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা, রেশন হিসাবে সাপ্তাহিক পাঁচ কেজি চালসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং চাকরিক্ষেত্রে কোটারও দাবি জানান তিনি।

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলাদেশে চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ওই সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে তারা। ‘গাছ হিলেগা, রূপিয়া মিলেগা’ প্রলোভন দিয়ে ওই সকল শ্রমিকদের কাজে লাগালেও দেওয়া হতো না তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে অনেক শ্রমিককে হারাতে হয়েছে জীবন। তার উপর বৃটিশদের অত্যাচার তো ছিলই।

শ্রমিকদের ওপর অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ শাসকেরা গুলি চালিয়ে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এরপর থেকেই প্রতি বছর ২০ মে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।