ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

তবুও শত্রু তিস্তাকে বন্ধু মনে করেই বেঁচে আছি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
তবুও শত্রু তিস্তাকে বন্ধু মনে করেই বেঁচে আছি জেলে পল্লীর লালমন দাস

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকা। যেখানে মানুষকে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। সেখানকার ১ নম্বর গোঘাট এলাকায় বসবাস করে ৭৫টি জেলে পরিবার। এক সময় ছিল তাদের সাজানো সংসার, ছিল জমি-জমাসহ বাপ-দাদার স্মৃতি।

কিন্তু বিগত কয়েক বছরে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা জেলে পল্লীর মানুষগুলো। এখন ঠাঁই নেওয়ার মত জায়গা নেই তাদের।

বাঁচার তাগিদে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে আবার  কেউবা সরকারি খাস জমিতে। সব মিলিয়ে চরম দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছেন এখানকার ৭৫টি জেলে পরিবারের অন্তত ৫ শতাধিক মানুষ।

সরেজমিনে, কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় তিস্তার পাড়ে গিয়ে দেখা হয় জেলে পল্লীর ভিটেমাটি হারা পঞ্চাশ বছরের লালমন দাসের সঙ্গে। নদীতে জাল ফেলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন জীবনের চরম বাস্তবতার কথা।  
কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার জেলেপল্লীবাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার বাড়ি ছিল, জমি ছিল, ছিল সুন্দর একটি সাজানো সংসার। কিন্তু তিস্তার ভাঙনে এখন আর কিছুই নেই। বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছি অন্যের জায়গায়। তবুও শত্রু তিস্তাকে বন্ধু মনে করেই বেঁচে আছি। সকালে জাল নিয়ে বের হয়ে সারাদিন নদীতে মাছ ধরি আর সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চ‍ালাই। নদীই আমাদের পেট চালায়, নদী আছে বলেই অন্তত দু’বেলা-দু’মুঠো খেতে পারি। নদী না থাকলে না খেয়ে থাকা লাগত।

পাশের নৌকার রামকৃষ্ণ দাস (৪২) এগিয়ে এসে বলেন, আমার তিন বিঘা জমি ছিল, নদীতে মাছ ধরতাম আর জমিতে ধান-ভুট্টা চাষ করে ভালই চলত। তিস্তার ভয়াল স্রোত জমি-জামা, বাড়ি সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন সরকারি খাস জমিতে কোনমতো পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি। নদীতে মাছ না ধরলে সংসার চলে না, ধার দেনা করে চলতে হয়। এখন নদীতে মাছের সংখ্যাও কম। তাই জালে মাছ ওঠে কম। খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। বাপ দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না, তাই নদীর সঙ্গে মিতালী করেই বেঁচে আছি।

রামকৃষ্ণ দাসের সঙ্গে একই নৌকায় মাছ ধরেন শুশীল দাস (৩৫)। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, বর্ষার সময় নদীতে ভাঙন শুরু হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুর বস্তা আর বাঁশের পাইলিং দিয়ে দায় সাড়া কাজ করেন। বর্ষা শেষ হলেই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন বর্ষা নেই তাই ভাঙন কম। এ সময়ে কাজ করলে ভাঙন কিছুটা হলেও ঠেকানো যেত। কিন্তু ভাঙনের জায়গায় কাজ না করে স্রোতহীন জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে লোক দেখানো কাজ করেন।  
কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার জেলেপল্লীতিনি আরো বলেন, আমরা বালুর বস্তা আর বাঁশের পাইলিং চাই না, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ চাই। যাতে আমাদের বার বার কষ্টের মধ্যে না পড়তে হয়। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এমন চিত্র শুধু লালমন দাস আর রামকৃষ্ণ দাসের বেলায় নয় এ চিত্র এখানকার শুশীল দাস, বিকাশ দাস ও যুগোল দাসসহ এমন  ৭৫টি জেলে পরিবারের। তারা সবাই এখন নিঃস্ব। বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে নদীই তাদের এখন প্রকৃত বন্ধু।  

নদী ভাঙনের বিষয়ে কথা হয় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কামারজানি ইউনিয়নের নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ এ মুহূর্তে নেওয়া সম্ভব না হলেও বালুর বস্তা ও বাঁশের পাইলিং করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।